পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাশের ঘর শ্ৰীআশালতা দেবী (সিংহ ) “মা, মালীকে তুমি ব’কবে না বলে পণ করেছ না কি ? আজি দু-দিন থেকে আমার ফুলদানিতে বালি ফুল রয়েছে । একবার চেয়ে দেখে না, এত যে গোলাপ ফুটেছে একটা তোড়াও কোনদিন বেঁধে দেয় না । সপ্তদশবর্ষার মালতী চঞ্চল চরণে মায়ের নিকটে আসিয়া অভিযোগ করিল। রাগে তাহার সুন্দর মুখ রাঙা হইয়া উঠিয়াছে। বেণী ছলিয়া উঠিতেছে, কর্ণাভরণ ঝিকিমিকি করিতেছে, হাতের চুড়িবালার রিনিঝিনি শব্দ উঠতেছে। মা মেয়ের ক্রোধে উত্তেজিত অপরূপ সুন্দর মুখের দিকে চাহিয়া হাসিয়া ফেলিলেন, “রাগিস নে মালু, গোয়ালাটা আজ দিনকতক হ’ল ছুটি নিয়েছে। মালীকে দিয়ে আমি গরুর জীবৃনা কাটাচ্ছি, ঘাস-জল দেওয়াচ্ছি। এই ক'দিন সে বেচারা বড় সময় পায় নি যে ফুলের তোড়ার তল্লাস করবে।” মালতী কহিল, “ওই স্তাষ্টি গৰুর পালের জন্তে তুমি থামক মালীকে আটকে রাখবে ? এদিকে বাবার এত সখের ফুলবাগান, তার দশা যাই হোক না কেন ?” “না রে, ফুলের বাগানের দশা কিছুই হবে না। মালী ছুটি পেলেই জল দেয়, আগাছা পরিষ্কার ক’রে রাখে। কিন্তু হ্যা রে, তাও বলি, তোরা কি একটু বাগানের কাজ করতে পারিস নে ? পড়িল নি শকুন্তলার কথা, আগেকার দিনে রাজার মেয়েরাও ঝারি-হাতে ফুলের গাছের গোড়ায় छडण निtडन !”

  • বিকেলে যে আমার রাজ্যের কাজ, আমার কলেজের টাঙ্ক আছে, গা-ধোয়, চুল-বাধা শেষ হ’তে-না-হতেই উৰ্ম্মিলার দল বেঁধে আসবে ব্যাডমিণ্টন খেলতে। ভদ্রতা আর চক্ষুলজ্জা বলেও তো একটা জিনিষ রয়েছে। তাদের শুধু শুধু ফিরিয়ে দিই কেমন ক’রে । খেলতে খেলতে কতদিন সন্ধ্যে হয়ে যায়। আমার মিউজিকের লেসন নেবার সময় হয়ে আসে। কখন সময় পাই ব’লে ?”

মালতীর কথা শেষ হইতে-না-হইতে পাশের ঘর হইতে অত্যন্ত তীক্ষ এবং মিহি গলায় কে ডাকিল, “মালতী ! মালতী !”

  • ঐ দেখ মিলি আর উৰ্ম্মিলা এসেছে। চললুম। তুমি যেন কুমুদাকে দিয়ে পেয়ালা-চারেক চা আমার বসবার ঘরে পাঠিয়ে দিও। যত লীগীর হয় ।”

মালতী বেণী দুলাইয়া ক্ষিপ্ৰপদে বাহির হইয়া গেল। মিলি উৰ্ম্মিলা আর লটি তত ক্ষণ উৰ্ম্মিলার ব্লাউজের অভিনব কাটছাট সম্বন্ধে আলোচনা করিতেছিল । তাহাকে ঢুকিতে দেখিয়া মিলি কহিল, “কি করছিলে ভাই এত ক্ষণ। আমরা সেই কোন কাল থেকে এসে ব’সে আছি। যদিও ভদ্রতা নয়, তবুও শেষে অনেক ক্ষণ অপেক্ষা ক'রে থেকে থেকে তোমাকে ডাকলুম।” মালতী অত্যন্ত অপ্রতিভ হইয়া কহিল, ”সরি (sorry), আমার আজ একটু দেরি হয়ে গেছে।” লটি হাসিয়া উৰ্ম্মিলার গায়ে পড়িতে পড়িতে সামলাইয়া লইয়া কহিল, “কার কথা ভাবছিলে ভাই ? ভাবনায় এত অন্তমনস্ক যে আমাদের ডাক শুনতে পাও নি ।” “কার কথা আবার ভাবব! তোমরা একটা কিছু বানিয়ে না বললে মুখ পাও না।”

  • আশা করি আমাদের বানিয়ে বলবার অবসর যেন আর বেশী দিন না থাকে। অচিরে সমস্তই সত্য হয়ে উঠুক।”

“আমরাও তাই আশা করি ।” মালতী উত্তর দিল না । রহিল ।

  • ও কি, রাগ করলে না কি ভাই ? আমরা কিন্তু মনে করেছিলুম মিঃ দের অধ্যবসায় এবারে সফল হয়ে আসছে। আমাদের বাড়ির পাটিতে তোমার মা’ও সেদিন এই ধরণের কি-একটা চৌধুরী-মাসীকে বলছিলেন । আমি আড়ি পেতে শুনেছি।”

এইবারে মালতী কথা কহিল, “আমার মা যা খুশী গম্ভীর হইয়া বলিয়া