পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ পণশের ঘর ›ፃ¢ এদিকে আমাদের ষে এখনও লাটের কিস্তি যায় নি। জমিজমা যা ক্ষুদকুড়ো আছে, তাও কি শেষে নীলেম হয়ে যাবে। এখানে বসে থাকলেই পেট ভরবে ? কমলা কোন উত্তর করিতে পারিল না। এমন সময়ে তাহার ছোট ছেলে কানাই জাগিয়া উঠিল, “মা খিদে।” তাহার আজ সাত জাট দিন হইতে খুব জর হইয়াছে । উপবাসে আছে। পথ্যের মধ্যে জলবার্লি আর খইয়ের মগু থাইয়াছে । “ম। আমি খাব।” “তুই কি স্বপ্ন দেখছিল কানাই ? এই মাঝরাত্রিতে থাবি কি রে, ঘুমে ঘুমে। ঐ শোন এখনই চৌকিদার হাক দিচ্ছে । তোর কি ভয়ডর নেই রে প্রাণে । নে নে, ঘুমে।” কানাই তত ক্ষণে সম্পূর্ণরূপে জাগরিত হইয়া উঠিয়াছে। মিটমিট করিয়া বৈদ্যুতিক আলোটার পানে চাহিয়া বলিতেছে, “এখানে চৌকিদারের ইকি কোথা পাবে। সে তো সেই পলাশডাঙায় ই কতো । দtও, দাও, আমাকে খাবার দাও, সেই তখন পটুলা মুজির রুটি খেলে, আমাকে কিছু দাও নি।” কমলার রাত্রি-জাগরণ-ক্লাস্ত মৃদু সকরুণ সুর ভাসিয়া জাগিতে লাগিল, “ঘুমিয়ে পড় লক্ষ্মী বাবা আমার। সোনা মাণিক আমার •••ঈস গা জরে যেন আগুনের মত পুড়ে যাচ্ছে। আবোলতাবোল ব'কো না বাবা । চুপ ক’রে ঘুমাও ।” কিন্তু অবোধ বালকের প্রলীপ তাহাতে লেশমাত্র কমে না । কমলার স্বামী বিজয়নাথ রাগিয়া গিয়া কহিল, “এই হতভাগা ছেলেগুলোর জালায় রাজিবেলায় পর্যন্ত একটু ঘুমবার জো নেই। মরণ হ’লে বাচি ওদের।” “বালাই, ষাট । অমন ক'রে বলতে নেই।” কমলা সভয়ে মনে মনে সহস্রবার ঠাকুর-দেবতার নাম লইয়া রুগ্ন বালকের শিয়রে হাত রাখিল । পাশের ঘরে মালতীর কবিতা-পড়া কথন থামিয়া গিয়াছে । কাল রবিবার, কলেজ যাইবার কিংবা পড়াশোনার তাড়া নাই। তাই সে ভাবিতেছিল, এস্রাজটা পাড়িয়া বসিবে কি না, কিন্তু পাশের ঘরের বিচিত্র কলরব তাহাকে আকৃষ্ট করিল। কমল তখন অশাস্ত জরপীড়িত ছেলেকে শাস্ত করিতেছে, “ছি বাবা কঁদে না । বাবা যদি একটু বকে তাহলে কি কঁদিতে হয় ধন । আসলে উনি তোমাকে কত ভালবাসেন ।” মালতীর মনের উপর দিয়া ভাহার দিদির ছবি ভাসিয়া উঠিতে লাগিল । দিদি মাসের মধ্যে উনত্রিশ দিন রাত্রিতে ভাল করিয়া ঘুমাইতে পায় না । সকাল হইতে.উঠিয়া স্বামীর আর ছেলেদের পরিচর্যা, ছেলেদের নিত্য রোগ। স্বামী অৰ্দ্ধশিক্ষিত সঙ্কীর্ণমনা । কিন্তু তবুও তার মুখে কি পরিতৃপ্তির আভাস I সকাল হইভে রাত্রি পর্যন্ত দিদি নিজের কথা বোধ হয় এক মিনিটের জন্তও ভাবে না । পাশের ঘরের কথোপকথন শুনিতে তার তাল লাগে । মনে হয় তাহার সম্পূর্ণ অজানা এক জগতের যবনিক যেন আস্তে আস্তে উঠিতেছে। •••কমলার স্বাম বিজয়নাথ জিজ্ঞাসা “ওকি আবার ঘাচ্ছ কোথায় ? এই তো দু-ঘণ্টা ধস্তাধস্তির পরে ছেলেটা ঘুমল, এইবার নিজে একটু ঘুমিয়ে নাও । কতক্ষণই বা ঘুমতে পাবে, এখনই আবার একটা-না-একটা কেউ উঠে পড়বে I* “•••এখনই আসছি । যাই দেখে আসি একটি বার গিয়ে কুমুদা কেমন আছে। তারও আবার তিন দিন থেকে জর হয়েছিল কি না। আজই সবে ছেড়েছে। একটু সাৰু আর থান দুই পটলভাজা ক’রে দিয়ে এসেছিলুম, দেখে আসি খেতে পেরেছে কি না ।” মালতীর মনে পড়িয়া গেল, বাড়ির দাসী এই কুমুদার ষে আবার একটা অস্তিত্ব আছে এমন কথা সে কোনদিন মনেও করে নাই। এই কুমুদ একদিন মানত রাখিতে গিয়া সারাদিন উপবাস করিয়া কালীঘাট গিরছিল ছুটি লইয়া, সেজন্ত মায়ের সঙ্গে সে কত কলহ করিয়াছিল। বি-চাকরের নীতি এবং কুসংস্কারকে প্রশ্রয় দিতেছেন বলিয়া মাকে শুনাইয়াছিল সে লম্বা বকৃত । মালতীর এস্রাজ বাজ্ঞান আর হইল না । সে অন্তমনস্ক হইয়া আকাশের দূর তারার দিকে চাহিয়া ভাবিতে লাগিল, তার দিদি কমলা জীবনে কি পাইয়াছে যে এমন সহজে এত দুঃখ, এত অশাস্তি এত খাটুনি স্বচ্ছন্দ চিত্তে বহন করিয়া চলিতেছে । কোন অসন্তোষ নাই, মনে কোন ভার নাই । করিতেছে,