পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sáశి সাত-পাচ ভাবিয়া হরনাথ বিভূতিকে লইয়া একদিন সেই সন্ন্যাসীর কাছেই গেল । সন্ন্যাসীকে প্রথম দেখিয়াই হরনাথের মনে কেমন যেন ভক্তির উদয় হইয়াছিল । নিজে প্রণাম করিয়া ছেলেকে বলিল, “প্রশমি কর । তার পর এক পাশে বসিয়া রহিল । সন্ন্যাসী কোন কথা কহিলেন না । অনেক ক্ষণ পরে সমস্ত লোক উঠিয়া গেলে সন্ন্যাসী বিভূতির দিকে কিছু ক্ষণ চাহিয়৷ রছিলেন। তার পর হরনাথের দিকে মুখ ফিরাইয়। বলিলেন, "ছেলেটি আমায় দাও।” হরনাথ বলিয়াছিল, “বাবা, আমার এই একটি ছেলে, ওকে দিয়ে ঘরে থাকবো কি ক’রে ? ওর মুখে এখনও কথা ফোটে নি, তুমি ওর মুখে কথা ফুটিরে দাও । সন্ন্যাসী মৃদু হাসিয়া বলিয়াছিলেন, ‘বোবা হওয়ার কোনই ভয় নাই, কথা অবশুই ফুটিবে । কিন্তু, এই ছেলে কখনও ঘরে থাকিবে না। রাখিয়া কেন মিছামিছি মায়া বাড়াইতেছ ? তার চেয়ে আমায় দাও।” হরনাথ সন্ন্যাসীর পা জড়াইয়া ধরিয়া বলিল, “ও ঘাতে ঘরে থাকে তুমি তাই ক’রে দাও বাবা ।” সন্ন্যাসী বলিয়াছিলেন, "উপায় নাই, এবং কিছু ক্ষণ পরে বোলার মধ্যে হাত ঢুকাইয়া খানিকট তুলেটি কাগজ বাহির করিয়া তাহাতে খলখস করিয়া কি লিখিয়া কাগজট মুড়িয়া হরনাথের হাতে দিয়া বলিয়াছিলেন, “আমি এই গ্রামে থাকিতে ইহা পড়িও না। কৃষ্ণদ্বাদশী তিথির পূৰ্ব্বে আমি এই গ্রাম পরিত্যাগ করিব, আমি এই গ্রাম ত্যাগ না-করা পর্য্যস্ত এই কাগজ পড়িও না বা কাহাকেও দেখাইও না ।” হরনাথ যাইবার পূৰ্ব্বে তবুও একবার শুধাইয়াছিল, “কি লিখলে বাবা ? - সন্ন্যাসী চক্ষু বুজিয়া উত্তর দিয়াছিলেন, ‘কোনো প্রশ্ন করিও না । পড়িলেই বুঝিতে পারিখে, বিধিলিপি থওন হইবার উপায় নাই ।” এই পৰ্য্যস্তই । দ্বাদশীর দিন সকালবেলা সন্ন্যাসীকে কেহ আর জলটুঞ্জি &23Ele ১N©3ই, গ্রামে দেখিতে পাইল না । হরনাথ সেইদিন রাত্রে বাড়ির সকলে ঘুমাইলে সন্ন্যাসী-প্রদত্ত সেই কাগজের মোড়ক খুলিল । সামান্ত কয়েক ছত্র লেখা। সন্ন্যাসী লিখিয়াছিলেন— "তোমার পুত্রের ললাটে সন্ন্যালযোগ দেখিতেছি । বাল মেদিন পশি বৎসর পূর্ণ হইবে সেইদিন তোমার এই পুত্র গৃহত্যাগপুৰ্ব্বক সন্ন্যাসধৰ্ম্ম অবলম্বন করিবে । ইহার অন্তথা হইবার সম্ভাবনা দেখি না ।” হরনাথ মাথায় হাত দিয়া অনেক ক্ষণ বসিয়া ভাবিল, তার পর উঠিয়া কাগজের টুকরাটুকু বক্সের এক কোণে সঙ্গোপনে রাথিয়া দিল । * এই পত্রের কথা আর কেহই জানিল না । সন্ন্যাসী মিথ্যা বলেন নাই, বৎসর ঘুরিতে-না-ঘুরিতে বিভূতি তোতাপাখীর মত অনেকগুলি কথা আওড়াইতে শিখিয়া গেল । .ঘে-সময়ের কথা বলিতেছি, তখন বৎসর অনেক আগাইয়া আসিয়াছে । এই দীর্ঘ সময়ের অস্তরালে হরনাথের সংসারে নিতাস্ত কয়েকটা সাধারণ পরিবর্তন ছাড়া আর কিছুই ঘটিয়া উঠে নাই । বিভূতি বড় হইয়াছে এবং হরনাথ বুড়া হইয়াছে। বিভূতি ষে-বৎসর প্রবেশিকা পরীক্ষায় ফেল হইল সেই বৎসর বিভূতির মা মারা গেল। মারা গেল অবহু বিভূতির ফেল করার দুঃখে নয়, রোগে ভূগিয়া । ঘুসফুসে জর আর কাশি মোক্ষদার দেহটা কঙ্কালসার করিয়া আনিয়াছিল, সে-বছরের শীতের প্রকোপ কঙ্কালের আর সহিল না, এক সন্ধ্যায় চক্ষু বুজিল । হরনাথ বয়সে বুড়া হইতেছিল বটে, কিন্তু দেহে তখনও বাৰ্দ্ধক্য আসে নাই। পাড়ার পাঁচ জনে আসিয়া যুক্তি দিল, হরনাথ, বিয়ে কর, নইলে সংসারটা ভেসে যায় ' হরনাথ কাহাকেও হাসিয়া উড়াইয়া দিল, কাহাকেও রাগিয়া ভাগাইয়া দিল । নিশি গাঙ্গুলীর কথার উত্তরে বলিল, "আর কি সে বয়স আছে দাদা ? নিশি ছাড়িলেন না, বলিলেন, বয়সের কি কোনো মাপ আছে রে ভাই, মনেরই বয়স, নইলে আমি—”