পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ বামিনীর বাহিরের ঐশ্বর্ব্যের অভাব যাহাতে না ঘটে, তাহার জন্ত জ্ঞানদা শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করার সময় পৰ্য্যস্ত যুদ্ধ করিয়াছেন । কন্যার অস্তরের দারুণ রিক্ততা দেখিবার জন্ত আছেন শুধু ভগবান । নিজের মেয়ের অলক্ষ্যে যামিনী একবার মুখ ফিরাইয়া চোখ মুছিয়া ফেলিলেন। যামিনীর দিকে চাহিয়া মমতা একবার জিজ্ঞাসা করিল, *ই্যা মা, তোমার কি শরীর খারাপ বোধ হচ্ছে ?” যামিনী তাড়াতাড়ি মেয়ের মুখটা নিজের দিক হইতে ফিরাইয়া দিয়া তাহার খোপার সোনার ফুল পরাইতে লাগিলেন, বলিলেন, “কই না ত ? যা গরম, তাই মুখ শুকনো দেখাচ্ছে বোধ হয় ।” মমতা আবার জিজ্ঞাসা করিল, “হ্যা মা, এত যে সাজিয়ে দিলে, ওরা আমায় অহঙ্কেরে মনে করবে না ত?” বামিনী হাসিয়া বলিলেন, “না মা, তা কেন ভাবৃবে ? আমোদ-আহলাদের ব্যাপারে মানুষ ত সাজেই । পরিবেশন করবার সময় খুলে ফেলো’ধন, তাহলেই হবে।” সাজিতে অবশ্য মমতার খুবই ভাল লাগিতেছিল । আর কোন কারণে না হউক, অলকাটাকে খানিক তাক লাগাইয়া দেওয়ার জন্তই। তাহার দিনরাত রাজা-উজীর মারা শুনিতে শুনিতে মমতার ভ দুই কান পচিয়া গিয়াছে । অন্ত লোকের ঘরেও যে টাকা আছে তাহ সে একবার দেখুক, এবং টীকা থাকিলেই যে আমন অভদ্রের মত জাক করিতে নাই, তাহাও একটু সে শিখুক । অলকা এই প্রথম মমতাদের বাড়ি আসিতেছে । যামিনী কি কাজে বাহির হইয়া গেলেন । মমতা খানিক ক্ষণ আয়নার সম্মুখে ধাড়াইয়া সমালোচকের দৃষ্টিতে নিজের ছায়ার দিকে চাহিয়া রহিল । যেখানে যা ক্রটি ছিল, তাহা সংশোধন করিয়া দিল, তাহার পর পাখা এবং বাতি বন্ধ করিয়া দিয়া বাবার ঘরের দিকে চলিল । হরেশ্বর সন্ধ্যা পর্য্যস্ত পড়িয়া ঘুমাইয়াছেন। যত গরম বাড়ে, তাহার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে তাহার দিবানিদ্রার পরিমাণ । রাত্রের ঘুমের সময়ও ততই পিছাইতে থাকে যামিনীর রাত জাগা সহ হয় না । তিনি মেয়েকে লইয়া সকাল-সকাল অন্ত ঘরে ঘুমাইয় পড়েন । সুরেশ্বরের গুইতে আসিতে প্রায়ই সাড়ে বীরোটা কি একটা বাঞ্জিয়া যার । জন্মস্বত্ব ২•৭ খাটে উঠিয়া বসিয়া তিনি নিজের খীল ভৃত্যটিকে হাকডাক করিতেছিলেন । চাকরবাকর আজ সকলেই অত্যন্ত ব্যস্ত, এক ডাকে কাহারও সাড়া পাওয়া যাইতেছিল না । বেশ চটিয়া একটা গৰ্জ্জন করিবার উদ্যোগ করিতেছেন, এমন, সময় মেয়েকে সামনে দেখিয়া সুরেশ্বর থামিয়া গেলেন । মমতাঁর কাছে ধরা-পড়ার লজ্জাটা কেন জানি না তাহার অত্যন্ত বেশী ছিল । স্ত্রীর নীরব অবজ্ঞা বা সরব নিন্দ, কোনো কিছুকে তিনি বিশেষ গ্রাহ করিতেন না, ও-সব র্তাহার গা-সওয়া হইয়া গিয়াছিল । সুজিতকে ত তিনি মামুষের ভিতরেই এখনও গণ্য করিতেন না । কেবল মমতার মতামতকে কথায় না হোক কাজে তিনি যথেষ্ট মানিয়া চলিতেন । নিজের স্বভাবচরিত্রের ষেগুলি বড় বড় ক্রটি ছিল, তাহা যাহাতে কস্তার চোখে ধরা না পড়ে, সে দিকে তাহার যথেষ্ট সাবধানতা ছিল । মমতাকে লইয়া সকল দিক দিয়াই তাহfর পিতামাতার ভিতর একটা রেষারেষির ভাব ছিল । মমতা ঘরে ঢুকিয়াই বলিল, “দেখ বাবা, নুতন দুলট পরেছি।” - সুরেশ্বর নিদ্রাবিহবল দুই চোখ ঘষিতে ঘষিতে বলিলেন, “বাঃ, বেশ খাসা দেখাচ্ছে । একটা ছবি তুলে রাখ।” মমতা বলিল, “কি যে তুমি বল বাবা, তার ঠিক নেই। সন্ধ্যেবেলা কখনও ছবি তোলা যায় ? তুমি কিন্তু এখনও উঠলেও না, কাপড়ও ছাড়লে না, লোকজন এসে পড়লে অপ্রস্তুতে পড়বে।” “এই যে ঘাই মা,” বলিয়া সুরেশ্বর খাট ছাড়িয় লোজা স্নানের ঘরে ঢুকিয়া গেলেন। মমতা ফিরিয়া মায়ের ঘরে চলিল। মুজিতের রুদ্ধ দুয়ার খানিকটা ফাক হইয়াছে দেখিয়া আপন মনে একটু হাসিয়া গেল । মায়ের ঘরে উকি দিয়া দেখিল, তিনি আয়নার সামনে দাড়াইয়া চুল বাধিতেছেন। মমতা পিছন হইতে গিয়া দুই হাতে র্তাহার চুলের রাশ তুলিয়া ধরিয়া বলিল, “কি সুন্দর এখনও তোমার-চুল মা, আমার কেন এমন হ’ল না ?” বামিনী একটু হাসিয়া মেয়ের হাত হইতে চুলের গোছ টানিয়া লইয়া বলিলেন, “তোমারও ত বেশ চুল মা ? আরও বাড়বে এখন ’