পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ ব্ৰহ্ম-প্রবাসী বাঙালী ও বাঙালী প্রতিষ্ঠান ২১৯ করিতেছেন, কিন্তু দুঃখের বিষয় মহিলাদিগের জন্ত কোনো প্রতিষ্ঠান অল্পদিন পূৰ্ব্ব পর্যন্তও ছিল না । আমরা ১৯৩৩ সালে মে মাসে এখানে অ!fস । বি দ:শ একত্রে এতগুলি বাঙালীকে দেখিতে পাইলে কতখানি যে আনন্দ হয়, তাঁহা স্বদেশবাসীরা দেশে থাকিয়া হয়ত অনুভব করিতে পরিবেন না । সরকারী কাজে আমাদের নানা স্থানে ঘুরিতে হইয়াছে, বাঙালীবিরল স্থানেও বাস করিতে হইয়াছে। সেজন্ত বাঙালীর সঙ্গলাভে বঞ্চিত হওয়ার যে কষ্ট, তাহীও অনুভব করিয়াছি । এতগুলি বাঙালী বেগানে, সেখানে মহিলা-প্রতিষ্ঠান পাকা নিতান্তই প্রয়োজন হয় । গত ১৯৩৪ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি মহিলাদের একটি সভা আহবান করিয়া একটি মহিলা-সমিতি গঠন করা হয় । এই সমিতির নাম বঙ্গলক্ষ্মী সমিতি | সেই সময় সেই সভায় বিহার ভূমিকম্পের সাহায্যকল্পে মহিলারা কি করিতে পারেন, এই বিষয়েও আলোচনা হয় । কয়েক জন মহিলা স্বেচ্ছায় কাজের ভার গ্রহণ করেন এবং বাঙালী পঞ্জাবী গুজরাট মন্দ্রিীজী প্রভৃতি সকল সম্প্রদায়ের ভারতবাসী মহিলাদের দ্বারে দ্বারে অর্থ ও পুরাতন বস্ত্র সংগ্ৰহ করা হয়। সংগৃহীত অর্থ আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সঙ্কটত্রাণসমিতির নিকট প্রেরিত হয় এবং পুরাতন বস্ত্রগুলি স্থানীয় কমিশনারের ফণ্ডে দেওয়া হয়। এই সমিতির মাসে দুইটি করিয়া অধিবেশন হইয়া থাকে। মেলামেশার দ্বারা পরস্পরের ময্যে প্রীতি ও সৌহার্দ্য স্থাপন, পুস্তকাদি এবং প্রবন্ধ পঠ, আলোচনা প্রভৃতি দ্বারা সাহিত্য ও জ্ঞানচর্চ, নির্দোষ আমোদ-প্রমোদের আয়োজন করিয়া আনন্দদান প্রভূতি উদ্দেশ্য লইয়া সমিতি গঠন করা হইয়াছে। বঙ্গলক্ষ্মী সমিতি কলিকাতা সরোজনলিনী নারী-প্রতিষ্ঠানের অন্তভূক্ত। এ বৎসর সরোজনলিনী শিল্পপ্রদর্শনীতে সমিতির সভ্যগণ কয়েকটি শিল্পদ্রব্য পাঠাইয়া বিশেষ প্রশংসালাভ করিয়াছেন । গত অক্টোবর মাসে বঙ্গলক্ষ্মী সমিতির কয়েক জন সভ্য মলিয়া বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের "লক্ষ্মীর পরীক্ষপ অভিনয় করেন । সমস্ত বাঙালী মহিলাকে এই আনন্দ-উৎসবে আহবান করা হইয়াছিল। অভিনয় খুব সুন্দর হইয়াছিল । এদেশে এ ব্যাপার খুবই নুতন, সেজন্ত সকলেষ্ট বিশেষ আনন্দলা ভ করিয়াছিলেন । গত ১৮ই মার্চ, ১৯৩৫, এই সমিতির প্রথম বার্ষিক অধিবেশন উপলক্ষে একটি সন্ধ্য-সম্মিলন হয় । কেবল সমিতির সভ্যগণের স্বামী এবং পুলকন্যাদের নিমন্ত্ৰণ কম্প ব্ৰহ্মদেশে বাঙালী সমাজে এইরূপ স্ত্রী-পুরুষক একত্র সম্মিলন সম্পূর্ণ অভিনব। সেদিন পূর্ণিমার সন্ধা—সমিতির সম্পাদিকার উন্মুক্ত গৃহপ্রাঙ্গণ সন্ধি সম্মিলনে যখন কুড়ি-বাইশটি বাঙালী পরিবার একত্র হইলেন, তখন সে দৃশুটিও অতি স্বন্দর বোধ হইয়াছিল। সমিতির সভ্যগণ এবং বালক-বালিকার সঙ্গীত, আবৃত্তি, রবীন্দ্রনাথের বসন্তের গান প্রভৃতির দ্বারা সকলের মনোরঞ্জন করিয়াছিলেন । স্থানীয় চীফ, জেলার ঐযুক্ত হুরেশচন্দ্র লাহিড়ী মহাশয় রবীন্দ্রনাথের ‘বিনি পয়সার ভোজ’ অভিনয় করিয়া খুব হস্তি-রসের স্বষ্টি করেন । নানারকম প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলার আয়োজনও ছিল । রাত্রি ৯টা পৰ্য্যস্ত আনন্দোৎসবে এবং জলযোগে পরিতৃপ্তি লাভ করিয়া সকলে গৃহে প্রত্যাগমন করেন। সভ্যদিগের মধ্যে বাংলা-সাহিত্যালোচনায় উৎসাহ দিবার জন্ত বঙ্গলক্ষ্মী সমিতি একটি প্রবন্ধ-প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন । ছোট ছোট শিশু-সন্তানদের জননীরাও এই প্রবন্ধ-প্রতিযোগিতায় যোগ দেন । মিনি শীর্ষস্থান লাভ করেন তাহাকে সমিতি একটি দশ টাকা মুলোর পুরস্কার দিয়াছেন । শিল্পের জন্তও একটি দশ টাকা মুলার পুরস্কার দেওয়া হইয়াছে। স্থানীয় হাসপাতালেও সমিতি উৎসব উপলক্ষ্যে দশ টাকা দান করিয়াছেন । বার্ষিক উৎসব উপলক্ষ্যে সমিতির সভ্যগণের এবং ঘে-সকল বালক-বালিকা গান, আবৃত্তি ও অভিনয়াদি করিয়াছিল তাহীদের একখানি আলোকচিত্র তোলা হয় । তাহা এই প্রবন্ধের সহিত দেওয়া হইল । বঙ্গের তথা ভারতবর্ষের বাহিরে বাঙালীর কি ভাবে জীবনযাপন করিতেছেন তাহার খবর জানিবার জন্ত দেশবাসীর স্বাভাবিক ঔৎসুক্য চরিতার্থ করিবার উদ্দেঙ্গেই এই সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধের অবতারণা । -