পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩৪ প্রতিবার শনিবারে বাড়ি এসে রবিবার সকালেই সুহৃদের সর্বপ্রথম নিখিলের ওখানে কিছু-না-কিছু নিয়ে যাওয়াই চাই । কিন্তু তার অর্থ যে বড়বাবুর সঙ্গে দেখা করা এমন কথা সে কোন দিন ভাবে নি । নিখিলকে সে চিরদিন, অর্থাৎ তার ভগ্নীপতির দৌলতে চাকরি পাওয়ার গর থেকে, আত্মীরের মধ্যে গণ্য ক’রে এসেছে। উপকৃত ধে-ভাবে উপকারী বন্ধু বা আত্মীয়কে স্নেহ করে তার মনে তেমনি একটা ভাব ছিল । কিন্তু নিখিল যে আবার এই গ্রামের দশ আনার জমিদার, সে যে বড়বাবু, এ-কথা তার কোন দিন মনেই হয় নি। নকড়ি বড় বাবুর কৰ্ম্মচারী ব’লেই হোক, অথবা তার বড়বাবুর কাছে যাওয়াটা সে ওই চোখে দেখে ব’লেই হোক, তার মুখে দেখা করার কথাটা সুহৃদর কানে বিত্র ঠেকল । সে একটু রূঢ়কণ্ঠে বললে—দেখি যদি সময় পাই । নিখিলকে ব’লে৷ যদি দু-পাঁচ টাকা দিয়েও মিটমাট হয় সেই ভাল । নকড়ি চলে যাচ্ছিল । সুষ্কদের কথা শুনে ফিরে দ্বাড়িয়ে বললে—বলেন কি মশাই, টাকা দিয়ে মিটমাট ! আমার ত বোধ হয়, পঞ্চা যদি সদরের সমস্ত উঠোনটা নাকখৎ দিয়ে মাফ চায় তাহ’লেও বড়বাবু আর মেটাতে রাজী হবে না । একটা সামান্ত প্রজা কোটে গিয়ে জমিদারের নামে ফৌজদারী ক’রে আসে এ কি সোজা ব্যাপার না কি ? তার ওপরে আপনি বলেন টাকা দিয়ে মিটমাট করতে ? বেশ —ব’লে নকড়ি ঘোব উপেক্ষার সঙ্গে হাসলে । সে হাসি দেখে সুহৃদের আপাদমস্তক জ্বলে উঠল । বললে—তাহ’লে কি করতে চাও শুনি ? দু-পা এগিয়ে এসে বললে—শুনবেন ? তাহ’লে প্রথম পৰ্ব্বটাই শুনুন । যারা যারা সাক্ষী আছে তাদের ঘর জালিয়ে দেওয়া । নকড়ি বড় বড় দাত বের ক'রে হা হ৷ ক’রে হাসলে । তার কথা শুনে মুহৎ ভিতরে-ভেতরে শিউরে উঠল। মুখে নীরস কণ্ঠে বললে—বল কি হে ! আমিও ত শুনেছি সাক্ষী আছি । তাহলে আমার ঘর থেকেই বউনি হৌক । SNージ8ー。. नकक्लि ह्य श्। क'एब्र ভাল বটে । কিন্তু তখনই গম্ভীর ভাবে বললে—কথাটা আপনি ঠাট্টা ক'রে বললেন বটে, কিন্তু এরই মধ্যে বেটার বাবুর কাছে আপনার নামে সাতখানা ক’রে লাগাতেও ছাড়ে নি। তা বাবুর অবশ্য আপনার ওপর বিশ্বাস আছে । কারও কথা তিনি কানেও তোলেন না । নকড়ি ঘোষের কথা-বলার ভঙ্গীতে সুহৃৎ অবাক হয়ে গিয়েছিল । সে কি ভাবে, মহৎ তারই মত বাবুর কৰ্ম্মচারী যে তার ওপর বিশ্বাস আছে শুনে কৃতাৰ্থ হয়ে যাবে ? জমিদার হ’লেও নিখিল তাঁর বয়ঃকনিষ্ঠ এবং স্বজাতি। তার পরম স্নেহভাজন । সেও কি স্বহৃৎ সম্বন্ধে এইভাবে ভাবে না কি ? কিন্তু সুহৃদের মনের কথা নকড়ি টের পেল না । ছাতিটা বা বগল থেকে ডান বগলে নিয়ে সে বলতে লাগল— এই কালই ত কথা হচ্ছিল। বাবু বললেন, যে যা বলে বলুক নকড়ি, সুহৃৎ সম্বন্ধে আমার বিশ্বাস আছে । সে আমার মোটা প্রজা । আর বড় অনুগত লোক । বাড়ি এলে আমার সঙ্গে দেখা না ক’রে যায় না। তাও দেখেছ, কোন দিন শুধু হাতে এল ? সে কখনও আমার বিরুদ্ধে যেতে পারে ? বলতে গেলে আমাদের খেয়েই মানুষ । না, না, নকড়ি, আর-বেটীদের বিশ্বাস নেই বটে, কিন্তু সুহৃৎ কখনও নিমকহারামী করবে না । নকড়ির তাড়া ছিল । আর বসতে পারলে না । যাবার সময় ব’লে গেল—বাবুর সঙ্গে এখুনি একবার দেখা করতে যাবেন যেন নিশ্চয় ক’রে । সুহৃদের কামানো হয়ে গিয়েছিল । সে ফ্যাল-ফ্যাল ক’রে নকড়ির রিকে নিৰ্ব্বাক বিস্ময়ে চেয়ে রইল। হেসে বললে—ইn, পরম্পরের মধ্যে যেখানে স্নেহ-প্রীতি-শ্রদ্ধা নেই, যেখানে কৃতজ্ঞতাই একমাত্র বন্ধন, সেখানে চিরজীবন এক জনের আর এক জনের কাছে কৃতজ্ঞ থাকা ষে কত বড় বিড়ম্বনার ব্যাপার মুহৎ সে-কথা আপন মনে ভাবতে লাগল। নিখিলের বিরুদ্ধে সত্য সাক্ষ্যও সে দিতে পারে না । কিন্তু কেন পারে না ? নিখিলের ভগ্নীপতি তার