পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৪০ কাজই চলে, কিন্তু সেবার ভার ললিত নিজেই সবটা ষ্ট্ৰিী লীলার জন্য তার দরদ দেখলে মনে মনে প্রশংসা না কীে ১৩৪২ কৰৈ গৈল, কিন্তু রাত বারোটার মধ্যেও রোগীর অবস্থার কানো উন্নতি দেখা গেল না । ক্রমে যন্ত্রণ এমনি বেড়ে থাকা যায় না । সময়ে স্নান নেই, অtহার নেই, রাত্রে fie যে ললিতর ভয় হ’তে লাগল বুঝিবা নিঃশ্বাস বন্ধ নেই, পরিশ্র.ম ক্লাস্তি নেই । চুলের বোঝ। কপালের উপর অযত্ন-বন্তস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্ভাবনায় তার চোখের কোলে কালি পড়ে গেছে । তবু তার সেবার বিরাম নেই । লীলা বখন যন্ত্রণায় ছটফট করে তখন তাকে একটু শাস্তি দেবার জন্তে ললিত অধীর হয়ে ওঠে, আবার সে যখন একটু স্থির হয়, তখনও সে নিশ্চিন্তু হ’তে পারে না । নানা অশুভ চিস্তা তার মনকে মণীময় ক’রে তোলে। কখনও অনভিজ্ঞ হাতে নাড়ী পরীক্ষণ করতে যায়, কখনও নাকের কাছে হাত নিয়ে গিয়ে দেখে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস ঠিকমত বইছে কি না । এক এক সময় কোনও কাল্পনিক কারণে হঠাৎ আতঙ্ক-চঞ্চল হয়ে রোগীর হৃৎস্পনান অনুভব করতে বসে । লীলা মাঝে মাঝে অন্বযোগ ক’রে বলে—তুমি দিনরাত আমন ক’রে থাটলে শরীর টিকবে কেন, সৰ্ব্বক্ষণ একটা ঘরের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে না-থেকে এক-একবfর বfইরে যেতে পার না ? ললিত ছেলে রলে—এইটুকুতেই আমার শরীর খারাপ হয় না লীলা, বিশেষতঃ তোমার জন্য পরিশ্রম করাটা আমার পরিশ্রমই মনে হয় । তোমার শাস্তির জঠ আমি এর চেয়ে অনেক বেশী সহ করতে পারি । জfন নাকি লীলা তোমার মুখের জষ্ঠ আমি নিজের প্রাণকেও তুচ্ছ করতে পারি । লীলা ষলে—তা কি আর আমি জানি না, কিন্তু আমার জন্ত তোমার এত কষ্ট করবার দরকার কি, আমার তুচ্ছ স্বীৰনর কিই বাদাম ; তা ছাড়া মেয়েমানুষের প্রাণ ত সহজে যাবfর নয় । তা লীল। যাই বলুক ললিত তার কথা কানেই তোলে নসে আরও নিবিড় উদ্যমে রোগীর পরিচর্য্য করতে আসে। একদিন লীলার অবস্থা অত্যস্ত খারাপ হয়ে পড়ল । দুর্বলতা ত আছেই, তার উপর একটা নুতন উপসর্গ জুটে রোগীর অস্থিরতা অতিমাত্রায় বাড়িয়ে তুলেছে । হঠাৎ তার গালগলা ফুলে শ্বাস-প্রশ্বাস লওয়া পৰ্য্যস্ত অভ্যস্ত কষ্টকর হয়ে পড়েছে । বিকালে ডাক্তার এসে নুতন ব্যবস্থা দেহ ক্লশ হয়ে গিয়েছে, ক্ষী, হয়ে গিয়ে কখন কি হয় । ডাক্তারকে এখনই ডাকা দরকার, কিন্তু চাকরকে পাঠালে এত রাত্রে ডাক্তার আসবে কিনা সন্দেহ । অথচ এ-অবস্থায় রোগীর কাছ ছেড়ে যেতেও তার প্রাণ চাইছে না । অবশেধে নিরুপায় হয়ে তাই করতে হ’ল । বিকে লীলার কাছে বসিয়ে. রেখে ললিত নিজেই ডাক্তারের বাড়ি ছুট,ল । সেখানে পৌছে কিন্তু শুনলে ডাক্তার বাড়ি নেই, কলুfতার বাইরে একটা ‘কলে’ গিয়েছেন । রাস্তা থেকে একথান। ট্যাক্সি নিয়ে সে আবার হারিসন রোডে ডাক্তার সেনের বাসায় এসে উপস্থিত হ’ল । ডাক্তার সেন বাসাতেই আছেন বটে কিন্তু সারাদিনের পরিশ্রমে তিনি বড় ক্লাস্ত, এত রাত্রে বাইরে যেতে চান না । অবশেষে অনেক হাতে পায়ে ধ’রে, অতিরিক্ত পারিশ্রমিকের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তবে তাকে রাজী করতে পারা গেল । রাস্তায় অনেকটা দেরি হয়ে গেল । ট্যাক্সিতে আসতে আসতে নানা দুর্ভাষনায় ললিত অস্থির হয়ে উঠল। কে জানে বাড়ি গিয়ে লীলাকে কি অবস্থায় দেখবে । বাড়িতে ঢুকতে তার ভয় করছিল । চারি দিক নিস্তব্ধ ; তবু তার মনে হচ্ছিল যেন উপরতল থেকে একটা মুদ্র ক্রন্দনের স্বর আসছে । ঝি কঁদিছে না কি ! ললিতের বুকের মধ্যে চিপ-টিপ করতে লাগল। অন্ধকার সিড়িতে দেশলাই জেলে সে ডাক্তারকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল—তার হাত কেঁপে গিয়ে দেশলাই নিবে গেল । সেদিকে লক্ষ্য ন ক’রে দ্রুতপদে সে রোগীর ঘরের মধ্যে ঢুকে একটা চেয়ারে অবলম্ন হয়ে বসে পড়ল ৷ ” .جی ডাক্তার রোগীকে পরীক্ষা করতে লাগলেন । নিবিষ্ট মনে অনেক ক্ষণ দেখবার পর বাইরে এসে সাবান দিয়ে হাত খুলেন। ললিত পিছন-পিছন এসে দাড়িয়ে রইল র্তার অভিমত শোনুবার জন্ত । বেশ ভাল ক’রে হাত ধুয়ে মুছে পকেট থেকে একটা শিশি বার ক’রে নিজের কাপড়-চোপড়ে কি একটা আরক ছিটিয়ে দিয়ে ডাক্তার ললিতের দিকে ফিরে চাইলেন ।