পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ বাংলা শিখাইবার প্রণালী ३S কি ? এককালে সংস্কৃতের মত করিয়া একভাবে বাংলা পড়ান হইত ; তখন বাংলা ব্যাকরণ বলিয়া একটি বিষয় ছাত্রেরা পড়িত। সে বাংলা ব্যাকরণ আর যাহাই হোক বাংলা ভাষার ব্যাকরণ নহে । মনে আছে তfহাতে সংস্কৃতের ছাচে বাংলায় তৃতীয়া বিভক্তির প্রতায় বলা হইয়াছিল, “দিগের দ্বারা”। এ বাংলা আপনার জানেন কি? সেই সংস্কৃত পড়াইবার নকল বাংলা পড়াইবার কিভূতকিমাকর প্র Ifলীকে প্রণালী বলিয়া স্বীকার করা অন্তার হইবে সেদিনকার লেখা বাংলা ব্যাকরণকে যেমন আমরা বাংলা ভাষার প্রকৃত ব্যাকরণ বলিয়া স্বীকার করি না, সেদিনকার বাংলা পড়াইবার তথাকথিত প্রণালীকেও আমরা আজ স্বীকার করিতে পারি না । সুতরাং বাংলা শিখাইবার একটি বা একাধিক প্রণালী উদ্ভাবন করা আজ একান্ত প্রেয়োজন হইয়াছে । এ-বিষয়ে আলোচনা করা আবশ্যক হইয়াছে । কিন্তু সে কাজ করিবে কে ? র্যাহারা শিক্ষার ব্যাপারী স্বভাবতই এ কাজ ষ্ঠাহীদেরই ; কিন্তু দেশের সুধীমাত্রেরই এ-বিষয়ে উদ্যোগী হইতে হইবে । সাহিত্য-পরিষৎ হইতে আরম্ভ করিয়া ংলা দেশের শিক্ষক-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানমাত্রেই এ-বিষয়ে আলোচনা করা আজ একান্ত আবখ্যক হইয়া উঠিয়াছে । কিন্তু তাহীর পূৰ্ব্বে আর একটি কাজ করিতে হইবে । সুধে আমরা বাংলার প্রাধান্ত ও প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করিলেও মনে মনে যে তাহা করি না তাছার প্রমাণ বৰ্ত্তমান বিদ্যালয়-চালনা-প্রণালীতেই রহিয়াছে। বিদ্যালয়ে ধিনি ংরেজী পড়ান তাহার স্থান সৰ্ব্বেচ্চে, আর যিনি বাংলা পড়নি সেই পণ্ডিত-মহাশয় ছাত্র-শিক্ষক-নিৰ্ব্বিশেষে সকলেরই অনাদৃত, অবজ্ঞাত ; শিক্ষকদের মধ্যে র্তাহার স্থান সবার শেষে, সবার নীচে । শিক্ষা-প্রণালীতে বাংলাকে তাহার উপযুক্ত স্থান দিতে হইলে সৰ্ব্বাগ্রে বাংলা-শিক্ষককে র্তাহার উপযুক্ত মৰ্য্যাদা ও আসন দিতে হইবে । ঠিকভাবে দেখিতে গেলে তিনিই ত সকলের চেয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষক, র্তাহার কাজ সকলের চেয়ে গুরুতর । তিনি যে-বিষয় পড়ান তাহার দাবি সকল বিষয়ের চেয়ে বেশী । এই সঙ্গে পাঠ্যক্রমের ( syllabus ) পরিবর্তন করাও একান্ত আবগুক । সেখানে বাংলাকে সৰ্ব্বপ্রথম স্থান দিয়া বাংলারও একটি সৰ্ব্বাঙ্গপূর্ণ পাঠ্যক্রম স্থির করিতে হইবে । সেই সৰ্ব্বাঙ্গপূর্ণ পাঠ্যক্রমের উদেখ হইবে ছাত্রগণকে বাংলা ভাষায় যতদূর সম্ভব সম্পূর্ণ অধিকার দান। ভাবের আদান ও প্রদানের জন্তই ভাষার প্রয়োজন । সুতরাং ভাষা-শিক্ষার উদ্দেশু কি-ভাবে তাবের এই আদানপ্রদান সহজ ও স্বন্দর হইতে পারে তাহার ব্যবস্থা । ভাষা-শিক্ষার চারিটি অঙ্গ আছে,—পড়া ও শোনা, বলা ও লেখা ; এই চারিটি অঙ্গের প্রথম দুইটি ভাবের আদানের জন্ত ও শেষ দুইটি ভাবের প্রকাশের জন্ত । কোন একটি ভাষা শুনিয়া ও পড়িয়া আমরা সেই ভাষায় প্রকাশিত ভাবের সহিত পরিচয় স্থাপন করি ; সেই ভাষায় কথা বলিয়া ও লিখিয় তাহার সাহায্যে পরের নিকট আমাদের মনোভাব প্রকাশ করি । কোন ভাষা লিথিতে গেলে এই চারিটি অঙ্গেরই ব্যবস্থা থাকা একান্ত প্রয়োজন। এই চারিটি অঙ্গে অধিকার লাভ করিলে তবেই ভাষায় অধিকার জন্মে। কিন্তু সে-অধিকার পূর্ণ হয় না যতক্ষণ-না আমরা মুনার ভাবে ভাষা প্রয়োগ করিতে শিখি । সহজে বাংলা বলিতে বা লিখিতে পারিলেই সুন্দর ভাবে বাংলা বলা বা লেখা যায় না । সুতরাং ভাষা-শিক্ষার মধ্যে রসবোধ-জাগরণের স্থান অতি উচ্চে । অথচ দুর্ভাগ্যক্রমে বর্তমানে তাহার কোন ব্যবস্থাই নাই । ফলে ছেলেমেয়েদের মনে সাহিত্যবোধ ও রসবোধ জাগ্রত হইতে পারে না । এই জন্তই ভবিষ্যৎ জীবনে অতি অল্প লোকেই উপন্তাস গল্প ছাড়া বাংলা-সাহিত্যের অন্তান্ত অঙ্গের সহিত কোন পরিচয় রাখে না । বাংলা-সাহিত্যের যোগ্য পাঠকের সংখ্যা অত্যন্ত কম । ইহার জন্ত যদি কাহারও দোষ থাকে তবে সে দোষ ভাষাশিক্ষণ-প্রণালীর । ষেভাবে আজকাল ছেলেমেয়েরা বাংলা শেখে তাহাতে আনন্দ উপভোগের কোন স্থান নাই ; দিনের পর দিন, মাসের পর মাস নীরস কতকগুলি পাঠ্যের ( ত’হfও অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বরচিত নহে ) অস্বয়ব্যাখ্যা ও চৰ্ব্বিত চৰ্ব্বণ করিতে করিতে দীর্ঘকাল চৰ্ব্বিত ইক্ষুদণ্ডেরই মত সেগুলি রস-অর্থহীন বলিয়া মনে হয় । সে শেখায় কোন আনন্দ থাকে না । অথচ যেমন ভুক্তত্রব্য জীর্ণ করিতে হইলে জারক রসের প্রয়োজন হয় তেমনই ভাষা-শিক্ষাকে