পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९९ কাৰ্য্যকরী করিতে হইলে তাহাকে আনন্দরসে জীর্ণ করিয়া লইতে হয়। এই আনন্দ রসবোধ-জাগরণের । ভাষাশিক্ষায় তাহার একান্ত প্রয়োজন । অধিকাংশ বাংলা পাঠ্যপুস্তক দেখিলে মনে হয় যে সেগুলির উদ্বেগু ভাষাজ্ঞানদান নহে, অন্ত কিছু। উদাহরণস্বরূপ একটি বিষয়ের উল্লেখ করি ; ছোট ছোট ছেলেমেয়ের কবিতা পাঠ করিবে নীতিশিক্ষার জন্ত নহে, ছন্দ ও রসের পরিচয় গ্রহণ করিষার জন্ত, আনন্দ লাভ করিবার জন্ত । কিন্তু অধিকাংশ পাঠ্যপুস্তকেই অল্প যে কয়েকটি কবিতা দেওয়া হয় তাহীদের সাহায্যে না-ছন্দোবোধ, না-রসবোধ কিছুই হইতে পারে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলি একান্তই ছলাহীন ও নীরস। শুনিয়াছি নাকি কপিরাইটের তয়ে ভাল ভাল কবিতা সংগ্রহ করা সম্ভবপর হয় না । একথা যদি সত্য হয় তবে বাংলার কবিগণের কর্তব্য র্তাহার। যেন কপিরাইটের অধিকারের দাবিতে এই ভাবে ছেলেমেয়েদের বাংলা শিথিবীর অন্তরায় না ঘটান। প্রসঙ্গক্রমে একথাও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে দেশের দুর্ভাগ্যক্রমে বাংলা ভাষায় শিশু ও বালপাঠ্য গ্রন্থের একস্তি । অভাব। বাঙালী সাহিত্যিকগণ চিরদিনই পরিণতবয়স্ক পাঠক-পাঠিকার মনের খোরাক জোগাইয়া আসিয়াছেন ; দেশের ছেলেমেয়েদের দিকে দৃষ্টি দিবার অবকাশ তাহদের বিশেষ হয় নাই। ফলে ছেলেমেয়েদের হাতে দিবার গ্রন্থ পাওয়া কঠিন। আমার মনে হয়, এ-বিষয়ে সাহিত্য-পরিযৎ ও সাহিত্য সম্মিলনের একটি বিশেষ কৰ্ত্তব্য আছে । তাহার। সেই কৰ্ত্তব্য সম্বন্ধে অবহিত হইলে ভাষাশিক্ষার প্রণালী উদ্ভাবনও অনেকটা সহজ হইয়া যাইবে । ভাষাশিক্ষার চারিটি অঙ্গের উল্লেখ করিয়াছি ; এইবার ংক্ষেপে তাছাদের সম্বন্ধে আলোচনা করি । বর্তমানে বাংলা-শিক্ষার ব্যবস্থায় লেখা ও পড়ার কিছু পরিমাণ আয়োজন আছে ; (কিন্তু সে আয়োজনও সম্পূর্ণ নহে । ) কিন্তু বলা ও শোনার কোন আয়োজনই সেখানে সাধারণতঃ দেখিতে পাওয়া যায় না। অথচ এই দুইটি বিষয়ই ভাষা শিক্ষার অপরিহার্য্য অঙ্গ । দৈনন্দিন প্রয়োজনে মনোভাব যেন-ভেন-প্রকারেণ প্রকাশের জন্ত যেটুক বাংলা বলিতে হয় সেইটুকু লইয়াই SN98ஆ আমরা সন্তুষ্ট থাকি। অথচ ভাল করিয়া বাংলা বলিবার একটি যে ভঙ্গী ও ধারা অাছে এবং সেটা বে একটা আর্ট, ভাল উচ্চারণ যে গৌরবের বিষয় সেটা আমরা মনেই করি না ; হত্তয়াং আমাদের বিদ্যালয়ের বিধিব্যবস্থায় তাহার কোন আয়োজন নাই। অবশু মাঝে মাঝে ডিবেটিং সোসাইটি বলিয়া একটি ব্যাপার হয় ; অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেখানে আলাপ-আলোচনা ইংরেজীতেই হয়, যদি কখনও বাংলা ব্যবহৃত হয় তাহা হইলেও তাহার পিছনে বিশেষ চেষ্টা থাকে না । বাংলা ভাল করিয়া বলাটাও যে শিক্ষণীয় বিষয় তাহা আমরা জানিনা । আমেরিকার একটি বিদ্যালয়ে শিশুশ্রেণীতে দেখিয়াছিলাম প্রতিদিন কিছু সময় এই ভাবে কথা বলার জন্ত নির্দিষ্ট ছিল। ছেলেমেয়ের সেই সময়টাতে ইংরেজীতে বলিবার অভ্যাস করিত। কেহ হয়ত তাহার পূর্বদিনের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে কিছু বলিত কেহব তাহার নিজের একটি গল্প ভাল লাগিয়াছে তাহাই আর সকলকে বলিল । এমনি করিয়া সকল ছাত্র-ছাত্রীই মাতৃভাষায় সহজ ও সুন্দর ভাবে মনোভাব প্রকাশ করিবার শিক্ষণ পাইতেছিল। সেখানে ইহাকে ভাষাশিক্ষার অঙ্গরূপে গ্রহণ করা হইয়াছে। ভহি। ছাড়া পাশ্চাত্যের সকল বিদ্যালয়েই আলাপ-আলোচনাসভার প্রচুর আয়োজন দেখিয়াছি । সেগুলির ভিতর দিয়া সেখানকার ছেলেমেয়ের ভাষার এই দিকটা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ শিক্ষা লাভ করে । পুৰ্ব্বেই বলিয়াছি বৰ্ত্তমানে ভাষাশিক্ষণ-প্ৰণালীতে যেমন বলার শিক্ষার ব্যবস্থা নাই তেমনি শোনার শিক্ষার ব্যবস্থারও অভাব রহিয়াছে । অথচ সাধারণ মনের বিকাশে ও বিশেষ করিয়া ভাষাশিক্ষার ব্যাপারে শ্রীতির স্থান অতি উচ্চে। ভাল ভাল গ্রন্থ হইতে পড়িয়া শোনাইলে ছাত্রছাত্রীদের মনে একাধারে রসবোধ ও সাহিত্যবোধ জাগ্রত · হয়। কিন্তু আমরা বাংলার জন্ত একটি পাঠ্যপুস্তক নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াই খালাস । আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধিনি বাংলা পড়ান তাহার বাংলা-সাহিত্য সম্বন্ধে জ্ঞানও বিশেষ উচ্চাঙ্গের নহে, স্বতরাং পড়িয়া শোনানর যে একটি আনন্দ আছে, ছেলেমেয়েদের পক্ষে ভাল ভাল কবিতা, প্রবন্ধ ও গল্প শোনা যে ভাষাশিক্ষার জন্ত একান্ত অৰিগুক, তাহ।