পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আষাঢ় বিরাটগৃষ্ঠ কুৰ্ম্মকে সেই শিপ্তশাবক বলিয়া চেনা উরশিমার পক্ষে সহজ ছিল না। এখন তাহার প্রকাও পিঠ শুধু যে আয়তনে বাড়িয়াছে তাহ নয়, শক্ত খোলা গঙ্গাইয়া এবং তাহার উপর সামুদ্রিক শ্যাওলা ও গুল্ম জন্মিয় দেখিতে একেবারে অন্ত রকম হইয়া গিয়াছে। কচ্ছপ আবার বলিতে লাগিল, “এস, দয়া ক’রে আমার পিঠে চড়ে ব’স । আমার দেহের আয়তন ত দেখছ, তোমাকে পাথার-পুরীতে নিয়ে ধেতে আমার কোন কষ্টই হবে না। রাজপ্রাসাদের তিনটি সিংহ-দরজা ; সিংহ-দরজার ভিতর কত বিরাট প্রাসাদ, বিশাল কক্ষ সোনায় রূপায় মুক্তায় ও প্রবালে খচিত। রাজকন্তার সহস্ৰ কুন্দরী দাসী। সে পাথার-পুরী ত নয়, যেন স্বৰ্গ-পুরী ।” পাথারা-পুরী যাহারা স্বচক্ষে দেখে নাই, তাহারা তাহার অলৌকিক সৌন্দৰ্য্য কল্পনা করিতে পরিবে না । তাহীদের এইটুকু বলিলেই চলিবে, যে, কুৰ্ম্ম সে-পুরীর যেরূপ বর্ণনা করিয়াছিল, উরশিমা সেখানে গিয়া দেখিল, পুরীর রূপ-গরিমা তাহার চেয়ে এক তিলও কম নয় । পাথার-পুরীতে বরুণলোকের সকল অধিবাসীরই ভিন্ন fভন্ন কাজ আছে । অতিকায়দেহ তিমি রাজপ্রাসাদের সিংহ-দ্বার তদারক করিতেছে । মকর কুম্ভীররা সব প্রহরী, ঝাকে বীকে সোনালি রূপালি ছোট মাছেরা চরের ও দূতের কাজ করিয়া ফিরিতেছে । কুৰ্ম্মের পিঠে চড়িয়া উরশিম কেবলই ডুবিতে ডুবিতে পাঁচ শত তল জলে স্রোতের তলায় নামিয়া তবে সমুদ্রগর্ভে গিয়া পৌছিল । সেখানে পলি পাল মৌরলা, চাদা সকলে তিন হাজার ক্রোশ দূরের প্রাসাদ হইতে ছুটিয়া তাহাকে অভ্যর্থনা করিতে আসিল । উরশিম। তাঁহাদের সঙ্গে রাজ-প্রাসাদে গিয়া পৌছিতেই সুন্দরী রাজকন্ত তরুণ অতিথিকে মহানন্দে সম্বৰ্দ্ধনা করিতে উঠিয়া দাড়াইলেন। র্তাহার মুখে চোখে আননের দীপ্তি ফুটিয়া উঠিল, কিন্তু লজ্জারুণ মুখে বাক্য বেশী ফুটিল না ; লজ্জায় তিনি র্তাহার আরক্তিম মুখমণ্ডল অঞ্চলে চাকিয়া ফেলিলেন । রাজকন্ত মুখ ঢাকিয়াই উরশিমার হাত ধরিয়া তাহাকে আর একটি কক্ষে লইয়া গেলেন। সেই নাট্যশালায় অসংখ্য লাবণ্যময়ী নৰ্ত্তকী ও গায়িকার পাথার-পুরী ○や○ নাচে ও গানে উরশিম স্বরলোকের স্বপ্লে ডুবিয়া গেল । তার পর দীর্ঘ তিন বৎসর ধরিয়া কি অকল্পিত স্বর্গ মুখে উরশিমা ও অতোহিমের দিন লঘুপক্ষে উড়িয়া চলিয়া গেল, কথকেরা সে কথা খুটিয়া খুটিয়া বর্ণনা করেন নাই । সম্ভবতঃ এ আনন্দ-স্রোত বর্ণনা করার ভাষা র্তাহীদের ছিল না বলিয়াই সে চেষ্টা তাহার করেন নাই । যাই হোক, এ কথা আমরা শুনিয়াছি, যে, তিন বৎসরের পর উরশিমার মনে অবসাদ দেখা দিল। এ অলস জীবন আর তাহার ভাল লাগিত না, কেবলই আপনার ঘর-বাড়ি ও গ্রামের কথা মনে পড়িত। অনেক ইতস্ততঃ করিয়া সে রাজকুমারীকে বলিল, “তুমি আমাকে অনুমতি দাও, আমি এবার দেশে ফিরতে চাই ।” এ কথার রাজকন্তর বুক ভাঙিয়া পড়িল, চোখের জল উছলিয়া উঠিল, কিন্তু অবশেষে তিনি মনকে বুঝাইলেন, যে, উরশিমাকে তাহার ছাড়িয়া দিতেই হইবে । রাজকন্তা মিনতি করিয়া বলিলেন, “উরশিম, আমাকে তুমি ভূলিও না ।” তার পর বিদায়-মুহূর্তে স্মৃতি-চিহ্নরূপে ছোট একটি রত্নখচিত কৌটা উরশিমার হাতে তুলিয়৷ দিয়া বার-বার করিয়া বলিয়া দিলেন, “এ কৌটা যেন সে কোন দিন না থোলে ।” যত সুন্দরী দাসী, সর্থী ও প্রিয়দর্শন সাঙ্গী প্রহরীদের সম্মুখে উরশিমা পাথর-পুরী হইতে চিরবিদায় লইয়া চলিয়৷ গেল। আবার সেই বিরাট কুৰ্ম্মের পিঠে চড়িয়া পাচ শত তলা জলস্রোত ফুড়িয়া উরশিমা নিজ গ্রামের সমুদ্রতীরে আসিয়া দেখা দিল । সেই সমুদ্র, সেই উৰ্ম্মিমালা, সেদিন যেমন ছিল তিন বৎসর পরে আজও তেমনই আছে ; কিন্তু সেই পুরাতন গ্রামের গৃহগুলি, সেই পরিচিত বনভূমি কোথায় যেন মিলাইয়া গিয়াছে ; উরশিম আপনার বলিয়া চিনিতে পারে এমন একটা কিছু কোথাও নাই । উরশিমা ডাঙায় উঠিল, চারি ধারে কেবল অজানা গৃহ, আর অচেনা মুখ । সে নিজে সত্যই উরশিমা কি আর কেহ এ বিষয়েও তাহার মনে সনেহ হইতে লাগিল । মনের সন্দেহ চাপিয়া সে এক জন পথিককে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “ওহে পথিক, উরশিমা তারো বলিয় কাহাকেও চেন ?” পথিক হাসিল, হাসিয়া বলিল,