পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমার দেখা লোক স্ত্রীযোগেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায় জ্যোতি বাবুর মেজদাদা vসত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়কেও আমি মাত্র এক দিন দেখিয়াছিলাম ! সতেজ বাৰু ৰাঙ্গালীদের মধ্যে প্রথম সিভিলিয়ান ছিলেন। আমি ষে সময়ের কথা বলিতেছি, তখন সত্যেন্ত্রবাবু পোলন লইয়া বালীগঞ্জে বাস করিতেছিলেন, বিজ্ঞানাচাৰ্য্য প্রযুক্ত জগদীশ বম্ব মহাশয় তখন প্রেসিডেন্সী কলেজে বিজ্ঞানের অধ্যাপক। আমাদের বন্ধু গ্রীরামপুর নিৰাগী প্রযুক্ত জগদিন্দু রায় অধ্যাপক ষহর ল্যাবেরেটরি এসিষ্টাণ্ট ছিলেন। প্রাতে কলিকাতায় আসিবার সময় আমরা জগদিন্দুবাবুর সহিত একই ট্রেনে আসিতাম। এক দিন জগদিন্দুবাবু বলিলেন “আমাদের কলেজে এক্সরে বা অদৃশ্য আলোক যন্ত্র নিৰ্ম্মিত হইয়াছে। আজ বেলা ৩টার সময় সত্যেন্ত্রনাথ ঠাকুর উদ্ধা দেখিতে আসিবেন ; যদি আপনারা তিনটার সময় যাইতে পারেন, তবে আপনাদিগকেও দেখাইব।” তিনটার সময় এক জন বন্ধুর সহিত প্রেসিডেন্সী কলেজে গিয়া জগদিন্দুবাবুর নিকট শুনিলাম যে, পাশ্বের কক্ষে সত্যেন্ত্রবাবু ও ক্যাপ্টেন চ্যাটার্জি নামক র্তাহার এক আই-এম-এল বন্ধু আসিয়াছেন, ডাক্তার বস্তু তাহাদিগকে অদৃশ্য আলোক দেখাইতেছেন, তাহার। চলিয়া গেলেই তিনি আমাদিগকে লইয়া যাইবেন । আমি জয়ুপূৰাবুকে বলিলাম যে, বাল্যকালে যখন স্থলে পড়িতাম তখন, জিমন্তাষ্টিক করিবার সময় পড়িয়া গিয়া হাত ভজিয়া ছিলাম, সেই স্থানটার হাড় এখনও একটু বাকী আছে, আমি সেই হাড়টা অদৃশ্য আলোকে দেখিব । এই কথা শুনিয়া জগন্দুিবাবু পাশ্বের কক্ষে গমন করিলেন এবং তখনই ফিরিয়া আসিয়া আমাকে বলিলেন “আমি ডাক্তারকে আপনার ভাঁজ হাতের কথা বলতে তিনি আপনাকে লইয়া ঘাইত ৰলিলেন।" আমি ও আমার বন্ধু জগদিন্দু বাবুর সঙ্গে সেই কক্ষে গমন করিলে অধ্যাপক বস্তু, ডাক্তার চ্যাটাঙ্গি এবং সত্যেন্ত্রবাবু তিন জনেই বিশেষ আগ্রহসহকারে আমার হাতের ভগ্ন অস্থি দেখিলেন। সত্যেন্ত্র বাবু ইংরঙ্গেীতে তাহার বন্ধুকে বলিলেন, “কলিকাতায় এক্সরে সাহায্যে ভগ্ন অস্থি দর্শন বোধ হয় এই প্রথম । ডাক্তার চ্যাটার্জি হাসিয়া বলিলেন, “ আমার অভিজ্ঞতাতে প্রথম বটে।” তখন কলিকাতায় আর কোথাও এক্সরে যন্ত্র আসে নাই। প্রেসিডেন্সী কলেজের সেই যন্থ ডাক্তার বহর নির্দেশক্রমে কলেজের গবেষণাগারে জগদিন্দুবাবু নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন । সত্যেন্ত্রবাবু ও জ্যোতিবাবুর মত র্তাহাদের অগ্রজ বাবু, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়কেও আমার একদিন মাত্র দেখিবার সৌভাগ্য হইয়াছিল। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের স্বৰ্গারোহণের পর দিন সন্ধ্যার সময় “হিতবাদী”র তদানীন্তন সম্পাদক সখারাম গণেশ দেউস্কর আমাকে বলিলেন, “দ্বিজেন্দ্রবাবু আমাকে স্নেহ করেন ; তাহার পিতৃবিয়োগ হইয়াছে, আমি তাহার সহিত দেখা করিতে বাইতেছি, আপনি যাইবেন ?” তাহার প্রস্তাবে আমিও তৎক্ষণাৎ তাহার সঙ্গে বাহির হইয়া পড়িলাম। জোড়ার্সকোর ঠাকুর বাড়িতে উপস্থিত হইয় দ্বিতলে, দক্ষিণ দিকের বড় হলের এক পাশ্বে একখানা সোফার উপর অদ্ধশায়িত অবস্থায় দ্বিজেন্দ্রবাবুকে দেখিতে পাইলাম। গৌরবর্ণ, প্রশস্ত ললাট, পঙ্ককেশ, পঙ্ক শ্মশ্র বৃদ্ধ বসিয়া আর দুইজন প্রবীণ ভদ্র লোকের সহিত মৃদ্ধস্বরে কথা কহিতেছিলেন । আমরা প্রবেশ করিবামাত্র সেই,ছুইজন ভজলোক গাত্ৰোখীন করিয়া বিদায় গ্রহণ করিলেন । আমরা কক্ষ মধ্যে কিছুদূর অগ্রসর হইলে দ্বিজেন্দ্রবাবু বলিলেন—“কে ?” সখারামবাৰু আত্মপরিচয় প্রদান করিলে তিনি বলিলেন “সখারাম এসেছ ? এস । আমার বড়ই বিপদ ; এতদিন কিছুই জানিতাম না, এখন কি যে করিৰ কিছুই স্থির করিতে পারিতেছি না। এতদিন আমি পাহাড়ের আড়ালে ছিলাম, এখন যেন বড়ই অসহায় বলিয়া নিজেকে মনে করিতেছি ।”