পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ অনিৰ্বাণ བུམ་ ག༽ সুখেঞ্জলাল বাবুর ঔৎসুক্য অনুমান করিয়া বলিলেন যে, কিছুকাল যাবৎ তাহার নিজের বাড়ি মেরামত হইতেছে বলিয়া সেখানে স্থানসকুলান হয় না ; তাহার পুত্র রবার্ট এখানে শোয়। অব্যবহৃত বাড়ির কবোষ্ণ ও পুরাতন গন্ধবাহী বায়ুর মধ্যে একটি আকর্ষণী শক্তি আছে। ঘরের আসবাবপত্রে - দেওয়ালে ছাদে পূৰ্ব্ব অধিবাসীদের একটা ছাপ লাগিয়া থাকে । বিশেষতঃ এই গুহথানির পরিচ্ছন্ন দেওয়ালের মৃদুউজ্জ্বল বর্ণলপে, সুদৃশু চিত্রের যথাযথ-স্থাপনে এবং গৃহসজ্জা ও সরঞ্জামের সুচারু শৃঙ্খলায় - বাবু মুথেষ্ট্রলালের মনে হইল যেন বৃদ্ধ মিসেস উড, র্তাহাকে ডাকিয়া এই গৃহের ভার লইতে বলিতেছেন। তিনি হিন্দু সন্তান, কিন্তু তবু যেন তাহার মনে হইল এক অদৃশু বন্ধনে তিনি তাহার সহিত বাধা, তাহাকে যেন আদি-দম্পতির সম্মুখের তাকে স্থাপিত দীপাধারটিতে দীপ জ্বালাইতে হুইবে ; কুশবিদ্ধ যীশুর পুরোভাগে স্থাপিত পুপাধারে পুষ্প স্থাপন করিতে হইবে । তিনি মিষ্টার পিটারকে বলিলেন, ‘মিষ্টার পিটার, আমার বাংলোটি পছন্দ হইয়াছে ; ভাড়া অত্যধিক না হইলে আমি এখানেই থাকিব ।” মিষ্টার পিটার ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন যে ভাড়া লইয়া কোন গোলমাল হইবার সম্ভাবনা নাই ; স্থায়ী বাসিন্দা পাইলে তিনি নিতাস্ত কমেই রাজী হইবেন। এ-কথাও তিনি জানাইলেন যে বাবু মুখেম্রলাল কিছু দিন এবাড়িতে থাকিয়া দেখুন যে র্তাহার কোন অসুবিধা হইতেছে কি না। আজ যদি তিনি তাহার সরলতার সুবিধা লইয়া তাহাকে এ-বাড়িতে দীর্ঘকাল থাকিতে বাধ্য করেন এবং পরে তাহার কোন অসুবিধা হয় তবে বড়ই হঃখের বিষয় হইবে । বাবু মুখেঞ্জলাল মিষ্টার পিটারের স্পষ্টবাদিতায় মুগ্ধ হইলেন এবং তিনি যে এক জন বিশিষ্ট ভদ্রলোক তাহা বশিলেন । মিষ্টার পিটার তাহাকে এ-কথাও জানাইলেন যে এ-স্থানটিতে স্বাস্থ্য ভাল রাখিবার একটি প্রধান উপায়” খুব ভোরে ও বৈকালে অন্ততঃ ক্রোশ-দুই স্থাটা । তিনি নিক্ষে • অনুস্থ ঘলিয়া ভোরে উঠতে পারেন না, কিন্তু র্তাহার পুত্র রবার্ট খুব ভোরে উঠতে অভ্যস্ত। যদি তাহার কোন আপত্তি না থাকে তবে তিনি তাহাকে বলিয়া দিবেন সে প্রত্যহ ভোরে যেন যুখেস্ত্রলাল বাবুকে জাগাইয়া দেয় । মিষ্টার পিটারকে বিদায় দিয়া মুখেঞ্জলাল বাৰু তাহার নবলব্ধ বাসস্থান ও অনাগত ভবিষ্যৎ জীবনের কথা ভাবিতে লাগিলেন । আঠার মাস পর্য্যস্ত তিনি মাস-মাস পুরা বেতন পাইবেন এবং ইহার পরে আরও হাজারথানেক টাকা তিনি পাইবেন । কিন্তু কতদিন তিনি বাচিবেন তাহার স্থিরতা কি ? চার হাজার টাকার সুদ হইতে বাড়ি ভাড়া করিয়া থাকিয়া এক জনের জীবনযাত্রা চলে না ; অথচ টাকা ভাঙিয়া খাইলে আর কতদিন যাইবে ? একদিন যখন র্তাহার শরীরে শক্তি থাকিবে না—বৰ্দ্ধিক্যের পীড়নে তিনি জীর্ণ হইয়া পড়িবেন, কে তাহাকে সেবা করিবে —কে তাহাকে অর্থ দিয়া সাহায্য করিবে ? ভবিষ্যৎ জীবন সম্বন্ধে যতই চিন্তা করিতে লাগিলেন ততই তিনি নিজকে নিতাস্ত অসহায় মনে করিতে লাগিলেন । সন্ধ্যার অন্ধকার ক্রমে ক্রমে সম্মুখের নিমগাছগুলির ফাকে ফাকে এবং পশ্চাতের ক্ষীণকায় ‘জরগুর’ শুন্য বুকে বুকে ঘনাইয়া আসিতে লাগিল। পশ্চিমের ধূলিধূসরিত বায়ুমণ্ডল প্রারব্ধশীতের পাতল কুয়াসার সহিত মিলিয়া একটি অস্পষ্টতার স্বষ্টি করিল। সুখেক্রলাল বাবু মিসেস উডের বাংলোর শয়নকক্ষে বসিয়া ভাবিতে লাগিলেন যে তিনি এখানে অনধিকারপ্রবেশ করিয়াছেন । মিসেস উড, যেন মরেন নাই । তাহার অশরীরী আত্মা যেন দিবাশেষের এই আলো-অন্ধকারের ব্যোমস্তরে লঘুক্ষিপ্ৰ পক্ষসঞ্চালন করিয়া মুহুমুহু ক্রুশবিদ্ধ যীশু, অপাপৰিদ্ধা মেরীমাতা ও আদি-দম্পতির চরণযুগলে প্ৰণতি জানাইতেছে । তিনি হিন্দু হইয়া এ-গৃহে প্রবেশ করিয়া ভাল করেন নাই । নিজহস্তে তিনি বাহিরের কাঠগোলাপের গাছ হইতে দুইটি পুষ্প চয়ন করিয়া ক্রুশবিদ্ধ যীশু ও মেরীমাতার চরণতলে রাখিলেন ; আদি-দম্পতির সম্মুখে দ্বীপ জালাইলেন এবং খুব ঘটা করিয়া ধুনা জালাইয়া ঘর-বারানা সুরভিত করিলেন । সন্ধ্যার কিছু পরেই মুখেভ্রলাল বাবু রুটি ভোজন করিয়া গুইয়া পড়িলেন । খাটখানি এরূপভাবে স্থাপিত