পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\రిచి বাবুর দুই ছেলে আর ডাঃ মেঘনাদ সাহার পুত্র প্রমান অজিত। ডাঃ সাহার আমাদের সঙ্গী হইবার কথা ছিল, কিন্তু তিনি একটা জরুরি কাজে আটকা পড়িয়া যাওয়ায় র্তাহার ছেলে ক্রমান অজিতকে প্রতিনিধিস্বরূপ পাঠাইয়াছিলেন। শিল্পী শ্ৰীমন্‌ স্বধীন সাহাকেও সঙ্গে লইলাম। বেলা বারটার সময় এলাহাবাদ ছাড়িলাম । নলিনী বাবু গাড়ী চালাইতে লাগিলেন। সঙ্গে জলের কুঁজে হইতে আরম্ভ করিয়া, জলযোগের প্রচুর আয়োজন ছিল। আমরা অল্প সময়ের মধ্যেই শহরের পথ ছাড়াইয়া গ্রাও টাঙ্ক রোডে আসিয়া পড়িলাম। সিরাখু পৰ্য্যন্ত আমাদিগকে গ্রীও টাঙ্ক রোড ধরিয়া বাইয়। সেখান হইতে কাচা রাস্তায় করি। যাইতে হুইবে । কাৰ্ত্তিক মাস । শত তেমন করিয়া পড়ে নাই । শীতের আমেজটুকু কিন্তু বেশ লাগিতেছিল । কাজেই গরম কাপড়জামা পরায় বেশ আরামবোধ হইতেছিল । নলিনী বাবুর শিকারের সখ খুবই বেশী। যখন যেখানে যান বন্দুকটি সঙ্গে লইতে ভুল করেন না । এ-যাত্রায়ও সে ভুল তাহার হয় নাই। ক্ষিতীশ বাবু সারা পথ বন্দুকটি র্কাধে করিয়া চলিলেন । আমরা চারি দিকের শোভা দেখিতে দেথিতে চলিলাম। দুই দিকে বিস্তৃত মাঠ। বাংলার শ্যামলত্র এখানে নাই। তবু এ-সময়ে ক্ষেতে ক্ষেতে সবুজ শস্ত শোভা পাইতেছিল। কোথাও উটের পাল পিঠে বোঝা ও সোয়ার লইয়া ধীর মন্থর গতিতে চলিয়াছে। মহিষের দল পথের পাশের দুই-একটা ডোবার মধ্যে সারা শরীর ডুবাইয়া মাথা বাহির করিয়া রহিয়াছে। দুই ধারে আমরুতের ( পেয়ার ) বাগান। ইদারা হইতে মেয়ের জল সংগ্ৰহ করিতেছে, কেহ দাড়াইয়া আছে। মাথায় মস্তবড় পাগড়ী বাধিয়া, লাঠি হাতে এবং পিঠে বোঝা লইয়া পথিকেরা পথ চলিয়াছে। পথের মধ্যে দুই-একটি গ্রামও পাইতেছিলাম। গ্রামের বাড়িগুলি গায়ে গায়ে লাগা, মাটির দেয়ালদেওয়া এবং উপরে খোলার ছাউনি। দুই-একটি মন্দিরও আছে । বর্তমান বিলাতী আবহাওয়ার প্রভাব এই সব দূর পল্লীতেও আসিয়া পড়িয়াছে। দরঙ্গী সিঙ্গারের সেলাইয়ের কল চালাইয়া কুৰ্ত্ত সেলাই করিতেছে দেখিলাম। বেলা বারটায় রওনা হইয়া ঠিক দেড়টার সময় ১৩৪২ আমরা সিরাখু আসিলাম। এখন হইতে কঁাচা রাস্তা আরম্ভ হইল। সিরাথু হইতে কারা পাঁচ মাইল দূর । গ্রাও ট্রাঙ্ক রোডের দুই দিকে যেমন তরুশ্রেণী ছায়া করিয়া চলিয়াছে, সিরাখুর পথও সেইরূপ ছায়াশীতল—দুই পাশেই গাছের সারি। কাচা রাস্তা তাই ধূলিভরা । হাওয়গাড়ীর দ্রুতগতিতে পিছনে ও দুই পাশে ধূলির মেঘ উড়িতেছিল । সাইনি ও দারানগর নামে দুইটি প্রসিদ্ধ পল্লী পাশে রাখিয়া আমরা কারা আসিয়া পৌছিলাম। অনেকটা দূর হইতেই বন-জঙ্গলে, পথের এপাশে ওপাশে কবরের পর কবর, ভাঙা দেওয়াল, ইশারা এ-সব দেখিয়া বুঝিতে পারি.তছিলাম যে কারা আসিয়া পৌছিয়াছি । গ্রামের সঙ্কীর্ণ পথ দিয়া বাজারের শেষপ্রান্তে এখানকার এক জন সন্ত্রান্ত মুসলমান অধিবাসীর বহির্বটির অঙ্গনে একটি নিমগাছের ছায়ায় আমাদের গাড়ীখানি আসিয়া থামিল। এইবার আমরা দর্শণীয় স্থানগুলি দেথিবীর জন্ত বাহির হইয়া পড়িলাম । - দুই দিকের দুইটি উচ্চ স্ত,পের সংকীর্ণ পথ দিয়া নদীর দিকে যাইতেই একটি খোলা জায়গায় আসিয়া চারি দিকের দৃশ্য আমাদের চোখে পড়িল। বিস্তৃত প্রান্তর-প্রাস্তরের বুকে স্তপের পর স্ত,প। সৰ্ব্বত্র অসমতলভূমি—এখানকার বাড়িঘরগুলিও পুরাতন বাড়িঘরগুলিকে আশ্রয় করিয়া গড়িয়া উঠিয়াছে। আমরা প্রথমে আসিলাম জয়চাঁদের দুর্গের কাছে। এই জয়চাদ ছিলেন গড়েবাল-বংশীয়। ইনি ১১৭০ খ্ৰীষ্টাৰে কনৌজের সিংহাসনে আরোহণ করেন। এই জয়চাঁদের সহিতই পৃথ্বীরাজের বৈরিত ছিল। কার শহরটি জয়চাদরও অনেক আগে জনাকীর্ণ ও প্রসিদ্ধ ছিল। এই শহর হিন্দু রাজাদের এক সময় রাজধানী ছিল । হিন্দু রাজাদের সময় কারণ যে প্রসিদ্ধ নগরী ছিল, সে-বিষয়ে বিন্দুমাত্রও সন্দেহ নাই । কনৌজের পরিহার নৃপতি যশপাল ১৯৩৬ খ্ৰীষ্টাব্দে এখানে একটি অট্টালিকা নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন, তাহার গায়ের খোদিত লিপিটি এখানকার দুর্গের তোরণভারে সংলগ্ন ছিল— এখন উহ। এখান হইতে অপস্থত হইয়াছে । কাজেই কারাশহর জয়চাদেরও আগে বিদ্যমান ছিল। কিন্তু জনপ্রবাদ এই যে, কারা-শহর জয়চাদই নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন।