পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাথেয় ঐশৈলেন্দ্রকৃষ্ণ লাহ। অনের নিরাল আঁকা-বাৰণ পথে একেল সঙ্গীহীন, চলেছি, চলেছি অবিশ্রাস্ত, চলেছি রাত্রিদিন । গহন, গোপন, হৰ্গম অতি, অনাবিষ্কৃত দেশ, . দীর্থ, জটিল, অস্ত-বিহীন পন্থ নিরুদেশ । ভাল ক’রে দূর দিগন্ত-ভালে ফোটে নি অরুণ-আলো, সকল কাকলি ছাপায়ে তখনও ডাকে নি কোকিল কালো, ঈষৎ-উত্তল কিশলয়-ছোয়া বায়ু বহে ঝুরু ঝুরু, রান্ত্ৰি-দিবার সন্ধিক্ষণে যাত্রা হয়েছে মুক । ঝর কুসুমের কেশরে পরাগে সুবর্ণ হ’ল রেণু, দূরে, বহু দূরে অশান্ত স্বরে বাজে কার বনবেণু । চলার ছনে আনন্দ মোর শোণিতে উছলি ওঠে, চিত্ত-সায়রে কম কামনার রক্ত-কমল ফোটে। কে যেন এ পথে চলে গেছে, তার অঙ্গ-সুরভিধানি, বকুল-বনের পবনে কেমনে বন্দী হ’ল না-জানি! কোমল করের মুছল পরশে মুকুল উঠেছে জেগে । অপরাজিত৷ কি ফুটে ওঠে তার চোখের দৃষ্টি লেগে ! কে যেন এ পথে চলে গেছে, আজও পায়ের চিহ্নে তার ভুলে-ধাওয়া কোন গানের পদের বেজে ওঠে ঝঙ্কার । পাতার আড়ালে উড়ে পড়ে করি আকুল অলক-দাম, মনে পড়ে, তবু মনে পড়ে নীকো কোনমতে তার নাম । পার্থীর কুজনে, ফুলের ভাষায় অন্ধ আকাশতলে, বসুন্ধরার ক্ষদ্ধ হৃদয়ে, বাতাসে জলে স্থলে, যে গানের স্বর চলে অবিরাম, চলে চিরদিন ধরি, সে মুর শিখিম, লে গান আমার কণ্ঠে নিলাম ভরি। এক চলি, তবু মনে হয় যেন সঙ্গী কোথায় আছে। আমার তরে কি প্রতীক্ষা করে ? সে কি দূরে, - সে কি কাছে ? ধানের শীর্ষ স্থলে স্থলে ওঠে আশা-শিহরিত মুখে, কল্প-জালোকে ঝরে লাৰণ্য শুমা ধরণীর বুকে । এক গান গাই, আমার সঙ্গে গেয়ে ওঠে বনভূমি । উৰ্দ্ধ আকাশে রবি উঠে আসে ; এখনও এলে না তুমি ? কি হবে—যদি না পথের প্রাস্তে দেখা পাওয়া যায় তার ! গানের কলির মাঝখানে স্বর ক'রে ওঠে হাহাকার । খর হয়ে ওঠে স্বর্য্যের কর ; পত্রের মৰ্ম্মরে আৰ্ত্ত তরুর মৰ্ম্ম-বেদন বৃথা গুমরিয়া মরে । পথের ধুলার বাতাস বুলায় রক্ত-ধূসর-তুলি আকাশের বুকে অসহ মুক যন্ত্রণ ওঠে জুলি । নাই আশ্রয়, নাই আবরণ, নাই তৃণবীথি তরু, তুষা নিদারুণ, তরল আগুন, দুর-বিস্তার মরু । ভ্ৰাস্তি-দীপিকা জাগে মরীচিক ; তপ্ত তপন-ভাতি ; এল না, এল না, আজও সে এল না আমার স্বপ্ন-সাথী। সে যদি না অঞ্চলে কেন এ প্রয়াস ? কেন প্রাণপণ করি সুদীর্ঘ পথ অতিবাহি চলি সুদীর্ঘ দিন ধরি ? আহত আত্মা বিশ্রাম মাগে ; ক্লাস্ত, ক্লাস্ত অতি ; যদি শুয়ে পড়ি তপ্ত শয়নে, কারও কিছু নাই ক্ষতি । স্বপ্নে জাগিন্ন স্বধা-মুরভিত অস্ফুট নিঃশ্বাসে, কার অনমিত মুখখানি মোর মুখ’পরে নেমে আসে ? আকাশের চাঁদ অবনতমুখী—মুগ্ধ সাগরে চুমে, অনিন্দময় জাগরণ যেন মেলে অনস্ত ঘুমে। স্পর্শ আতুর শিরার রুধিরে মধুর দহন জাগে, বটের শাখায় গুটানো-পাখায় পার্থীর শিহর লাগে । প্রহরের গতি স্তন্ধ ; একটি অনুভূতি কেঁপে মরে । রৌদ্র-মদির মুহূৰ্ত্তগুলি মুচ্ছিত হয়ে পড়ে। দীঘল কোমল জাখি ছুটি কেন রাখিলে জাধির পরে নিমেষের লাগি এসে যদি বাবে চির দিবসের তরে ? সময়ের লোত ঘাম। তোর চোখে জল টলমল ? এ পাথেয়টুকু আমার পথের রয়ে গেল সম্বল ।