পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3ere গুহাচিত্র QQ>二; প্রসেন একটু ক্ষুন্নভাবে মীনার মুখের দিকে চাহিয়া বলিলেন, “আমার কথা বিশ্বাস করছ না, মীনা ?” মীন নতমুখে নিম্পন্দভাবে যলিয়া রহিল। যুবরাজ নিৰ্ব্বাক । মৌনভাবে শুভ্ৰ জ্যোৎস্নাধীরা আসিয়া তাহt.দর শিরে পড়িতে লাগিল। মৌনভাবে চন্দ্রমল্লিকার মধুর সৌরভ তাহীদের ঘ্রাণেন্দ্রিয়কে আকুল করিয়া তুলিল । কিছুক্ষণ নিঃশব্দ থাকিয়া যুবরাজ বলিলেন, “মীনা, তুমি আমার সাহায্য করতে পারবে ?” মীন মাথা তুলিয়া প্রসেনের মুখোমুখী হইয়া বসিল । প্রসেন তাহার নিকট এক গৃঢ় ষড়যন্ত্রের সঙ্কল্প ব্যক্ত করিলেন। মীনার চোথে তীক্ষু কটাক্ষ দেখা দিল । তার পর দুইটি তরুণ মস্তিষ্কের ভিতর বহু কাল পর্য্যস্ত অনেক কুটবুদ্ধি খেলিতে লাগিল । সে-রত্রে এক ছদ্ম দূত ধৰ্ম্মরাঙ্গের অলীক বৰ্ত্ত বহন করিয়া অশ্বপুষ্ঠে মদ্র-দেশের অভিমুখে ধাবিত হইল । সেদিন মধ্যরাত্রে যথন রাজরথ নির্জন পথের উপর দিয়া মীনাকে লইয়৷ চলিল, তখন চক্রনেমির সঙ্গে সঙ্গে নানা অদম্ভব কল্পনীয় তাহার মাথাটিও ঘুরিতে লাগিল । গৃহদ্বারে রথ থামিলে মীনীর বৃদ্ধ মাদী তাহীকে লইতে আসিয়া অবাক হইয়া গেল । বলিল, “কোথায় পেলি এ মুকুট ? এর মধ্যে যে সব হীরা বসানো ! কোথায় পেলি এ কণ্ঠহার ? এত বড় মুক্তা তে কখনও দেখি নি। কোথায় পেলি এ জfরদার রেশম ? এ ত সাধারণ লোকের নয়!” মীন প্রাণের উচ্ছ্বাসের সহিত মসীর কাছে সে-সন্ধ্যার সমস্ত কাহিনী বিবৃত করিল । শুধু ষড়যন্ত্রের কথা বলিল না । বলিল না যে সে নিজহাতে নাট্যশালার অভিনেতা রোহিতাশ্বকে দূতের ছদ্মবেশ পরাইয়া দিয়াছে। আনন্দে বৃদ্ধার ক্ষীণ চক্ষু দুটি উজ্জ্বল হইয়া উঠিল । আনন্দে সে মীনাকে বক্ষে চাপিয়া বলিল, “হয়ত আমাদের স্দিন আসবে। হয়ত তোর কোল আলো ক’রে রাজপুত্র শোভা পাবে। ভগবান তথাগত তোকে স্বধী করুন ।” রাত্রিতে বৃদ্ধ এক-একবার গুনিতে পাইল, মীনা ঘুমের ঘোরে প্রবল উচ্ছ্বাসের সহিত কত কি বালয়া যাইতেছে । ( ò ) প্রভাতে নগর-তোরণের সানইয়ের বাদ্যে যুবরাজ প্রসেনজিতের নিদ্রা ভঙ্গ হইল। কিছুক্ষণ পর্য্যন্ত তরুণ যুদ্ধক স্বপ্ন ও বাস্তবের প্রভেদ অন্থ ভব করিতে পারিল না। সানাইয়ের সঙ্গীতের রেশটি যেন তেমনই মধুর এক স্বপ্নস্থতির সহিত জড়িত হইয়া ছিল । সহসা সমস্তটা স্বপ্ন শতগুণ মাধুর্যে ভরিয়া তাহার স্মৃতিপথে উদিত হইল । মীন রাজমহিষী, সে রাজা । মীনার শিরে অপূৰ্ব্ব রত্নকিরীট, কণ্ঠে অপূৰ্ব্ব রত্নহার, কটিতে অপুৰ্ব্ব রত্নমেখলা, মুখে দিব্য জ্যোতি । সে বেন মানবী নয়, যেন তাহার গৃহ চুড়ে চিত্রিত কিল্লরীর মত চিরযৌবন, চিরানন্দে উচ্ছ্বসিত । মীনা! পুপিতা বেতসলতার মত ক্ষীণা কোমল, সুরভিতা ! নব অমুরাগে বেপথুমান । আজ বিবাহবন্ধনে তাহfর বাহুলগ্ন । মীনা ! ঐ ক্ষীণাঙ্গী, ভীরুনয়ন কিশোরী নটী অঞ্জি গৌরবময়ী রাজরাণী । যুবরাজ বহুক্ষণ স্মৃতির নেশায় মশগুল হইয়া রহিল । তাহীর চন্দননিৰ্ম্মিত বহুকারুকার্যখচিত পর্যাঙ্কের উপর হইতে বিচিত্র বর্ণের শয্যাবরণ শ্লথ হইয়া ভুতলে পড়িল । যুবরাজ স্বপ্লাষেণময় দৃষ্টিতে চারিদিকে চাহিতে লাগিলেন । দেখিলেন, গৃহের ভিতরের ছাদে বিশাল শ্বেতপদ্ম, তাহার মধ্যের কোরক, কোরকের প্রতিটি কোষ। বাতায়ন-পথে বাহিরে দেখিলেন, শিরীষবৃক্ষের শাখায় ময়ুর-যুগল বসিয়া আছে। ময়ূরের গলা এক-একবার ফুলিয়া উঠিতেছে, প্রভাত-স্বর্যের আলোকে পুচ্ছের চন্দ্রঞ্চগুলি ঝকৃথক করিতেছে। দূরে দেখা যাইতেছিল, একটা পত্রহীন কিংশুকবৃক্ষ বহুপূপে মণ্ডিত হইয়া আকাশের কোলে রক্তচ্ছটার স্বষ্টি করিয়াছে । প্রসেনের দৃষ্টিতে প্রত্যেকটি দৃষ্ঠের ভিতর এক কিশোরীর হুকুমার দেহখানির স্নিগ্ধ আভা অপূৰ্ব্বৰূপে ফুটিয়া উঠিতেছিল । প্রভাস্তের উজ্জ্বল কিরণ-সম্পাতের সঙ্গে সঙ্গে প্রসেনজিতের হৃদয় মীনার মনোরম স্মৃতিতে রঙিয়া উঠিতে লাগিল ।