পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণ গুহাচিত্র 6.66 ভিক্ষু ক্ষণকাল অধোবদনে থাকিয়া স্থবিরের নিকট আত্মপ্রকাশ করিল। সে মহারাজ ধৰ্ম্মরাজের পুত্র, প্রসেনজিৎ । যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত হইয়াছিল। ভগবান তথ্যগতের বাণী পাইরা রাজপ্রাসাদ ছাড়িয়া পীতবসন ধারণ করিয়াছে । সে এই মনেfরম বিহারে থাকিয় আধ্যাত্মিক সাধনা করিতে ইচ্ছুক । স্থবির কৃপাভর দৃষ্টিতে তাহার পানে চাহিয়া বলিলেন, “তরুণ ভিক্ষু, তোমার ত্যাগ অতি মহান । ভগবান তথাগত তোমাকে শুভবুদ্ধি দিয়েছেন । কিন্তু বল তো, সংসারে তোমার বিরাগ উৎপন্ন হবার কারণ কি ? তুমি এত বিমর্ষ কেন ?” প্রসেন বলিলেন, “দেব, সংসার বড় দুঃখময় । মহিষের হদয় বসনীয় ভরা, কিন্তু জগৎ সে-বাসনা পূর্ণ করা দূরে থাকুক, তার পরিবর্তে দারুণ ব্যথা দিয়ে হৃদয় ভেঙে দেয় । ভগবান তথাগত জীবের জন্ত যে নিৰ্ব্বাণের পথ নির্দেশ করেছেন, আমি তা অনুসরণ করতে বের হয়েfছ ।" স্থবির প্রসেনকে বিহারের একটি কুঠরী নির্দিষ্ট করিয়া দিলেন । তার পর জিজ্ঞাসা করিলেন, "ভিক্ষু, তুমি কোনও ললিতকলার অনুশীলন করেছ ? চিত্র, ভাস্কর্য্য স্থাপত্য— ?” প্রসেন বলিলেন, যে, করিয়াছেন । স্থবির বলিলেন, "ভিক্ষু, ভগবান অমিতাভ জীবকে রূপের ভিতর দিয়, অরূপে নিয়ে যান। তোমাকে রূপস্থষ্টিদ্বারা প্রথম চিত্তশুদ্ধি সাধন করতে হবে ।” প্রসেন লে-প্রস্তাবে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করিলেন । স্থবির এক জন ভিক্ষুকে ডাকিয় তাহীর সঙ্গে আলোচনা করিয়া গ্রসেনের জন্ত এক প্রাচীরের একটুকু অংশ নির্দিষ্ট করিয়া দিলেন। বলিলেন, সেখানে তাহার কলার শ্রেষ্ঠত্ব দেখাইয়া একটি চিত্র অঙ্কিত করিতে হইবে । তবে প্রাচীরগাত্রে চিত্রিত করিবার পূৰ্ব্বে তাহ রেখাঙ্কিত করিয়া প্রথমে স্থবিরকে দেখাইতে হইবে । প্রসেন সে-প্রস্তাবের জন্ত গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করিল। তার পর স্থৰিরকে গ্ৰণিপাত করিয়া বিৰায় তিনি চিত্রবিদ। শিক্ষা লইলেন। স্থবির লক্ষ্য করিলেন, ভিক্ষুবেশ ধারণ করিলেও তাহার চালচলন রাজপ্রাসীদের । প্রসেন নিজ কুঠরীতে গিয়া একটি সামান্ত শয্যা রচনা কfরলেন এবং পার্থে কমণ্ডলু দণ্ড ও ভিক্ষাপাত্রটি রাখিলেন । এক জন বৃদ্ধ ভিক্ষু আসিয়া একটি দ্বীপ ও একপত্রি তৈল দিয়া গেল। প্রসেন সে বৃদ্ধের সাহায্যে একখণ্ড শ্বেত দেবদারু-ফলক ও একটি লেখনী সংগ্ৰহ করিলেন ; ভাবিলেন, প্রভাতে উঠিয়াই চিত্রাঙ্কণে প্রবৃত্ত হইবেন । - কিন্তু মধ্যরাত্রে নিদ্রা ভঙ্গ হইয় তাহার চোথে অfর ঘুম আসিল না । তিনি দারুণ অস্বস্তি বোধ করিতে লাগিলেন । স্থবিরের মুখে চিত্রাঙ্কনের প্রস্তাব শোনা অবধি তাহার মস্তিষ্কে একটা চিত্র গড়িয়া উঠিতে আরম্ভ করিয়াছে । সে-চিত্র তাহার জীবনের সর্বাপেক্ষা স্মরণীয়, সৰ্ব্বাপেক্ষা মৰ্ম্মস্তিক এক ঘটনার । তিন মাস পূৰ্ব্বে রাজপ্রাসাদের সোপানে দাড়াইয়া বজহতের মত তিনি তাহাই প্রত্যক্ষ করিয়ছিলেন । তাহারই কারণে রাজসম্পদ ছাড়িয়া ভিক্ষাপাত্র গ্রহণ করিয়াছেন । নিদ্রাভঙ্গের পর সে-চিত্রের পরিকল্পনা ’ এমন ভাবে র্তাহfর চিত্ত অধিকার করিয়া বসিল যে র্তাহার পক্ষে স্থির হইয়া থাকা অগম্ভব হইল। তিনি উঠিয়া দ্বীপ জ্বালাইলেন, এবং লেখনীদ্বারা কাঠফলকে চিত্রের রেখাপাত করিতে লাগিলেন । দেখিতে দেখিতে রাত্রি কাটিয়া গেল । প্রভাতে নিম্নের উপত্যকাভূমিতে যখন বহু প্রকারের পার্থী কলরব করিয়া উঠিল, তখন প্রসেন চিত্র ছাড়িয়া উঠিলেন । বাহিরে অৰুণালোকের মধ্যে তিনি চিত্রধান লই৷ দাড়াইলেন । র্তাহীর মুখে অসীম তন্ময়তা। যেন डिनि এ জগতের নয়, যেন কোন দূরের স্বপ্নরাজ্যে র্তাহার চিত্ত যিচরণ করিতেছে । চিত্র দেখিয় তাহার চিত্ত সস্তুষ্ট হইল । চিত্ৰখানি রাজা ধৰ্ম্মরাজের অন্তঃপুরুস্থিত একটি ক্ষুদ্র মণ্ডপের । তাহার চারিদিকে সরু স্তম্ভ দিয়া ঘেরা । মধ্যে ঈশদুল্লত বিচারাসনে রাজা সমাসীন। রাজাকে ঘিরিয়া রাজপুরীর দাসীরা বসিয়াছে। :