পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণ বিবিধ প্রসঙ্গ—ইহা কি বাঙালীবিরাগের একটি দৃষ্টান্ত ? αν η স্বশাসন অধিকার জিন্নাছিল, তখন তাহদের সম্বন্ধে এরূপ প্রশ্ন উত্থাপিত হইয়াছিল কি ? তখন তাহারা আপনাদিগকে রক্ষা করিবার জন্ত ব্রিটিশ যুদ্ধবিভাগের উপর নির্ভর করিত না কি ? বস্তুতঃ এখনও যদি আমেরিকা কানাডাকে এবং জাপান অষ্ট্রেলিয়াকে আক্রমণ করে, তাহা হইলে তাহারণ ব্রিটিশ-সাহায্য-নিরপেক্ষ হইয়া আত্মরক্ষা করিতে পারবে না । শুধু তাছাদের কথাই বা বলি কেন ? ইয়েরোপের ও পৃথিবীর অন্তান্ত অংশের ক্ষুদ্র অনেক স্বাধীন দেশ প্রবল বৈদেশিক আক্রমণের বিরুদ্ধে দাড়াইতে অসমর্থ ( গত মহাসুদ্ধে বেলজিয়ম এক আত্মরক্ষা করিতে পারে নাই ) । তা বলিয়া ইংরেজরা ত বলে না, ধে, ঐ দেশগুলির স্বাধীন থাকিবার অধিকার নাই । সৰ্ব্বশেষে ইহাও বলা দরকার, যে, গ্রেট ব্রিটেন ত স্বয়ং গত মহাযুদ্ধে এক আত্মরক্ষায় অসমর্থ হইয়াছিল । তাহীকে ভারতবর্ষেব সাহায্য লইতে হইয়াছিল । ভারতবর্ষ না-হয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত বলিয়া তাহার ধনঞ্জন ইংরেজদের করায়ত্ত ছিল । কিন্তু ইহা ত ফুবিদিত সত্য, যে, অ'মেরিকার টাকা ও আমেরিকার মানুষ ভিন্ন ইংলণ্ড ফ্রান্স প্রভৃতি সন্ধিস্থত্রে আবদ্ধ “মিত্রদেশসমুহ” জামেনীর আক্রমণ প্রতিহত করিতে পারিত না । অতএব, যখনই যে-কোন ইংরেজ বলিবে, ভারতবর্ষ সমুদ্রপারের একটি জাতির সৈন্তদল ব্যতিরেকে আত্মরক্ষা করিতে পারে না, অতএষ তাহার স্বশাসক হইবার অধিকার নাই, তখনই তাঁহাকে কপট কুতার্কিক বলিবার অধিকার আমাদের আছে । দেশরক্ষার মানেটাও প্রণিধানযোগ্য । স্বাধীন দেশসকলের যুদ্ধবিভাগ আছে তাহীদের স্বাধীনতা রক্ষার নিমিত্ত। ভারতবর্ষে যুদ্ধবিভাগ আছে বাণিজ্যিক ও রাষ্ট্রীয় বিষয়ে ভারতের ইংরেজtধীনতা রক্ষার জন্ত, ইংরেজ জাতির জমীদারী ভারতবর্ষকে ইংরেজের রাথিবীর জন্ত— ভারতের স্বাধীনতা রক্ষার জন্ত নহে । ইহা কি বাঙালীবিরাগের একটি দৃষ্টান্ত ? এলাহাবাদের পীড়র প্রেস হইতে “চাক্ষচরিতাবলী” নামক একটি হিন্দী পুস্তক প্রকাশিত হইয়াছে। তাহার বিজ্ঞাপন তথাকার দৈনিক লীডর কাগজে, ও অন্ত কাগজে, দেখিয়াছি । তাহার গুণাগুণ আমাদের আলোচ্য নহে। এই বহিথানিতে উনিশ জন অধিক বা অল্প প্রসিদ্ধ ব্যক্তির বিষয়ে প্রবন্ধ আছে বলিয়া বিজ্ঞাপনে দেখিলাম। র্তfহাদের নাম-মহাত্মা গান্ধী, পণ্ডিত মদনমোহন মলিবীয় (“মালবী” নহে ), শ্ৰীমতী এনী বেসান্ট, লাল৷ লাজপৎরায়, পণ্ডিত মোতীলাল নেহরু, ত্রবিটুঠলভাই পটেল, সরদার বল্লভভাই পটেল, পণ্ডিত জবাহরলাল নেহরু, সরু তেজবহাছর সপ্র, মহারাজা সাহেব মহমুদাবাদ, পণ্ডিত হৃদয়নাথ কুঞ্জরু, ঐ সী, ওয়াই, চিস্তামণি, শ্ৰীভগবান দাস, রাজা সাহেব কালাকাঙ্কর, পণ্ডিত মহাবীরপ্রসাদ দ্বিবেদী, পণ্ডিত শ্ৰীধর পাঠক, শ্ৰী শ্ৰীনিবাস শাস্ত্রী, দীনবন্ধু এগুরুজ, এবং স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী । ইহঁরা সকলেই লিথিবীর মত কাজ করিয়াছেন । ইহঁদের মধ্যে দশ জন আগ্রা-অযোধ্যা প্রদেশের লোক । বাকী নয় জনের মধ্যে দুই জন বিলাতের, তিন জন গুজরাটের, দুই জন মান্দ্রাঙ্গ প্রেসিডেন্সীর ও এক জন পঞ্জীবের মানুষ, এবং স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীয় জন্ম বোম্বাই প্রেসিডেন্সীতে হইয়া থাকিলেও তাহাকে পঞ্জাবেরও বলা যাইতে পারে। এখানে লক্ষ্য করিবার বিষয় এই যে ব্রিটেন, মন্দ্রিাজ ও বোম্বাই বাংলা দেশ অপেক্ষ আগ্ৰা-অযোধ্যার নিকটবৰ্ত্তী না হইলেও পুস্তকখানিতে কোন বাঙালীর সম্বন্ধে প্রবন্ধ লেখা হয় নাই, কিন্তু ঐ সব দূরবর্তী ভূখণ্ডসমূহের কাহারও কাহারও সম্বন্ধে প্রবন্ধ লেথা হইয়াছে। অবশ্য পুস্তকটির প্রকাশক ও লেখকেরা বাঙালীকে বাদ দিতে প্রতিজ্ঞা করিয়া এরূপ করিয়াছেন, এরূপ সিদ্ধান্তের কোন প্রমাণ নাই, এবং এই পুস্তকটি হিন্দীর লেখক ও হিনীর পাঠকদের বাঙালীদের প্রতি মনোভাবের ঠিক পরিচায়কও না-হইতে পারে। আপন! হইতে, স্বভাবতঃ বা অকস্মাৎ ( accidentally ) পুস্তকটি হইতে বাঙালী বাদ পড়িয়া গিয়া থাকিলে, তাহাও লক্ষ্য করিবার বিষয় এই জন্ত, যে, বাঙালীরা আপনাদিগকে ও আপনাদের শীর্ষস্থানীয় লোকদিগকে ভারতীয় মহাজাতির যেরূপ একটি অবজনীয় অঙ্গ বলিয়া মনে করেন, ভারতীয় মহাজাতির অন্তভূতি জন্তান্ত জাতিরা হয়ত তাহা মনে করেন না । @