পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ארחאה-6ל যায় না। মায়ের স্নেহের প্রয়োজন হরেশ্বরের বিশেষ আর ছিল না। বহির্জগতের বিচিত্র সুরের আহবান তাহাকে পাগল করিয়া তুলিয়াছিল, তাহাঁর সমস্ত মন তখন পড়িয়া ছিল ঐ দিকে । নব্যসমাজে ঘুরিবার, শিক্ষিতা মেয়েদের সঙ্গে আলাপ করিবার একটা উগ্র আগ্রহ তাহীকে পাইয়া বসিয়াছিল। মায়ের ইচ্ছামত বিবাহ কখনই যে সে করিবে না, তাহ সে স্থিরই করিয়া রাখিয়াছিল। মা তীর্থে যাইবার মাস-দুইয়ের মধ্যেই সে নৃপেন্দ্রনাথ সরকার নামক এক ব্রাহ্ম ভদ্রলোকের কন্ত যামিনীকে বিবাহ করিয়া বসিল । এক বন্ধুর বিবাহসভায় এই তরুণীটির অসাধারণ সৌন্দৰ্য্য সুরেশ্বরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। একরকম নিজে উপযাচক হইয়াই সে যামিনীকে বিবাহ করে, অবশ্য যামিনীর মা জ্ঞানদা দেবীও তাহাকে বিশেষ সাহায্য করেন। কিন্তু কস্তার বিবাহের কিছু পূৰ্ব্বেই তাহার মৃত্যু হয়। সুরেশ্বরের মা যথাকালে খবরটা পাইলেন । সংসারে ফিরিবার আর চেষ্টা না করিয়! তিনি কাশীতেই থাকিয়৷ গেলেন। স্বরেশ্বর বিবাহের পর সস্ত্রীক গিয়া মায়ের সঙ্গে দেখা করিল। মা কিন্তু অভিমান ত্যাগ করিয়া ছেলেকে সস্নেহে গ্রহণ করিতে পারিলেন না। তাহার ব্যবহারে বিরক্ত হইয়া সুরেশ্বর দুই দিন পরেই স্ত্রীকে লইয়া কলিকাতায় চলিয়া আসিল । যামিনীর সঙ্গে তাহার পর শাশুড়ীর আর সাক্ষাৎ হইল না । সুরেশ্বর ও শিশির কালেভদ্রে মধ্যে মধ্যে গিয়া মায়ের সঙ্গে দেথা করিয়া আসিত, এই পর্য্যস্ত র্তাহার সঙ্গে ছেলেদের সম্পর্ক রহিল। এখন কলিকাতা শহরের উপকণ্ঠেই প্রাসাদতুল্য বাড়ি তৈয়ারি করিয়া সুরেশ্বর রায় বাস করিতেছেন। কলিকাতার একেবারে ভিতরেই তিনি প্রথমে বাড়ি করেন, কিন্তু পত্নী ঘামিনীর স্বাস্থ্য চিরকালই দুৰ্ব্বল, প্রথম কন্ত মমতার জন্মের পর তাহ আরও দুৰ্ব্বল হইয়া পড়িল ডাক্তারে একটু ফাক জায়গায় থাকিবার পরামর্শ দেওয়ায় নুতন বাড়ি নিৰ্ম্মাণ করিয়া স্বরেশ্বর এইখানে চলিয়া আসিলেন । পুরাতন বাড়িটি খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত হইয়া ফিরিজী ভাড়াটের আডড হইয়া উঠিল । প্রথম কম্ভা মমতার এখন বয়স ষোল বৎসর, তাহারই পরীক্ষা-পাসের উৎসবে আজ বাড়িতে সাড়া পড়িয়া গিয়াছে। জন্মস্বত্ব 8ல் মমতার জন্মের বছর-চার পরে একটি পুত্র জন্মগ্রহণ করে, যামিনীর তাহার পর আর সস্তানাদি হয় নাই । পুত্রের নাম সুরেশ্বর রাখিয়াছেন কুঞ্জিত। তাহার স্বাস্থ্যও ভাল নয়। স্কুলে তfহাকে দেওয়া হয় নাই, বাড়িতেই সে মাষ্টারের কাছে পড়ে । যামিনী চিরকালই গম্ভীর স্বভাবের, ঝগড়াঝাটি তর্কাতকি প্রভূতিকে তিনি মারাত্মক রকম ভয় করিতেন। লোকের সঙ্গে খুব বেশী কথাবার্তা কহাও তাহার ধাতে ছিল না । বিবাহের পূর্ব পর্য্যন্ত সকল বিষয়ে মায়ের কথামত চলিয়া চলিয়া তাহার প্রকৃতি বড়ই পরনির্ভর হইয়া পড়িয়াছিল। তাহার নিজের সব ব্যবস্থা চিরকালই অন্ত এক জন কেহ করিয়া দিলে তাহার সুবিধা হইত। বিবাহটাও র্তাহার ঘটিয়াছিল এই অতিরিক্ত বাধ্যতার ফলে । সুরেশ্বরের অর্থের প্রতি র্তাহার কোনো লোভ ছিল না, মানুষটির প্রতিও তাহার হৃদয়ের কোনো আকর্ষণ ছিল না। কিন্তু ধামিনীর মা জ্ঞানদী এই ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিবাহ দিবার জন্ত আদাজল থাইয়া লাগিয়া গেলেন, সুতরাং বিবাহ হইয়াই গেল। " বিবাহের পর বেশ কিছুদিন পর্য্যস্ত যামিনীর স্বভাবের কোনো পরিবর্তন লক্ষিত হয় নাই। অৰ্দ্ধযুমস্ত ভাবে আগেও তাহার যেমন দিন কাটিত, এখনও তেমনি কাটিতে লাগিল । মমতা কোলে অলসিয়া তঁহার অবসর অনেকখানি সংক্ষেপ করিয়া দিল বটে, কিন্তু প্রকৃতি র্তাহার খুব বেশ কিছু যে বদলাইয়া গেল তাহ বোধ হইল না। স্বামীর সহিত বিরোধ তাহার মনে মনে যতই ঘটুক, বাহিরে তাহার প্রকাশ ছিল না তত কিছু। প্রথম থিটিমিটি বাধিতে আরম্ভ হইল মমতার শিক্ষাদীক্ষা লইয়া স্বরেশ্বর চান মেয়ে ঠিক বড়মানুষের মেয়ের উপযুক্তভাবে পালিত হয়, যামিনী বেশী বড়মানুষী ফলাইবার মোটেই পক্ষপাতী নহেন। সুরেশ্বর খুজিয়াপাতিয়া চওড়া লাল পাড়ের শাড়ী পরা ঘোরতর কৃষ্ণবর্ণ। একটি মাঞ্জাজী আয়া জোগাড় করিয়া আনিলেন। তাহার নাকে, কানে, গলায় বেশ মোটা মোটা সোনার গহনা, পায়ে স্তাওলি। মাহিনী শোনা গেল চল্লিশ টাকা । দুই-তিন দিন পরে সুরেশ্বরের চোখে পড়িল যে মমতা