পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬২০ প্রবাসী ১৩৪২ কারণ পূৰ্ব্বে আমি কখনও কোন সভাতে বক্তৃতা করি নাই । সভাপতি স্বরেন্দ্র বাবু আসন গ্রহণ করিলে পর, তাহার আদেশে, এক জন স্থানীয় ভদ্রলোক বক্তাদিগের নামের তালিকা প্রস্তুত করিয়া সভাপতির টেবিলে রাথিয় দিলেন । তিনি যে তালিকা প্রেস্তুত করিয়াছিলেন, তাহাতে কাব্যবিশারদ মহাশয়, কৃষ্ণকুমার বাবু এবং গীম্পতি বাবুর নামের পরেই আমার নামটিও লিখিয়া দিয়াছিলেন, আমি তাহা জানিতে পারি নাই । সভার কার্য আরম্ভ হইল, রামপুরহাট স্কুলের হেড মাষ্টার, স্বকণ্ঠ-গায়ক বাবু রাজকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় “কোন দেশেতে তরুলতা সকল দেশের চাইতে শুiমল” এই গানটি গাfহলেন । তার পর সুরেন্দ্র বাবু বাঙ্গালায় বক্তৃতা করিলেন। বক্তৃতা করিবার সময় তিনি একটা বড় মজার ভুল কথা বলিয়াছিলেন । বক্তৃতার উপসংহারে তিনি “তোমরা সকলে স্বদেশী জিনিষ ব্যবহার কর, দুৰ্গতিনাশিনী দুর্গা তোমাদের মঙ্গল কfরবেন।” এই কথা বলিতে গিয়া বলিয়া ফেলিয়াfছলেন– “দুর্গেশনন্দিনী দুর্গ তোমাদের মঙ্গল করিবেন।” এই বলিয়া তিনি উপবেশন করিয়া মাত্র কাব্যবিশারদ মহাশয় বলিলেন—“ওকি বললেন ? বলুন দুৰ্গতিনাশিনী দুর্গা । দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিম বাবুর একখানি নভেল ।” স্বরেন্দ্র বাবু তাহ শুনিয়া হাসিয়া বলিলেন, “তাই নাকি ? আমি দুর্গেশনন্দিনী বলেছি নাকি ? ওটা ভুল হয়ে গেছে।” কথাবার্তাটা অনুচ্চ স্বরেই হইয়াছিল, মঞ্চের উপর উপবিষ্ট লোকছাড়া আর কাহারও কর্ণগোচর হয় নাই। উহার কয়েক দিন পূৰ্ব্বে তিনি চন্দননগরের সভাতেও ঐ রূপ “শাস্ত্রের বিধান” বলিতে গিয়া “শাস্ত্রের বাবধান” বলিয়া ফেলিয়াছিলেন । চন্দননগরের সভাতেই ঠাহীর মুখে প্রথম বাঙ্গালা বক্তৃতা শুনি । সভাতে কয়েক জন সাহেব ছিলেন, তাই হরেন্দ্র বাবু প্রথম ইংরেজীতে বক্তৃতা করিয়াই অমনি সঙ্গে সঙ্গে বাঙ্গালীতে বক্তৃতা করিয়াছিলেন । ঐ দুইটি সভা ব্যতীত অন্ত কোন সভাতে ভুল বলিতে শুনি নাই । এইবার আমার বিপদের কথা বলি । কৃষ্ণকুমার বাবু, বিশারদ মহাশয় ও গীম্পতি বাবুর বক্তৃতার পর সভাপতি আমার নাম খরিয়া ডাকিয়া আমাকে বক্তৃতা করিতে আদেশ করিলেন । সেই বিরাট সভা, তাহার —-g উপর ভারতের শ্রেষ্ঠ বাগী সুরেন্দ্র বাবু এবং আমার মনিব কাৰ্যবিশারদ মহাশয় উপস্থিত । আমি সুরেন্দ্র বাবুকে বলিলাম যে, আমাকে ক্ষমা করুন, আমি কখনও বক্তৃতা করি নাই। কিন্তু তিনি নছোঁড়বান্দা । বলিলেন, “হিতবাদীতে প্রবন্ধ লেখেন ত, তাই মুখে বলুন না, বক্তৃতা হয়ে যাবে। যারা লিখতে পারে, তাদের আবার বক্ততার ভাবনা কি ?” আমার সৌভাগ্যক্রমে সেই সময় কালীবাড়িতে দেবীর আরতি আরম্ভ হইল, কঁসিরঘণ্টার শব্দে সভার কার্য্য বন্ধ রহিল । সেই সময়টা সুরেন্দ্র বাবু আমাকে বারংবার উৎসাহ দিতে লাগিলেন। আরতি শেষ হইলে তিনি আবার আমার নাম করিয়া বকৃত করিতে আদেশ করিলেন । আমি ভয়ে কঁাপিতে কঁাপিতে দাড়াইলাম বটে, কিন্তু আমার কণ্ঠ হইতে স্বর বাহির হইল না । খুব আস্তে আস্তে দুই চারিট কথা বলিলাম ! সুরেন্দ্র বাবু বারংবার বলিতে লাগিলেন-- “বাঃ বেশ ত বলছেন।” পাঁচ-সাত মিনিট পরে আমার ভয়ট একটু কমিয়া গেল,—গলার আওয়াজও একটু জোর হইল—ক্রমে ক্রমে কণ্ঠস্বর উচ্চ হইতে উচ্চতর হইতে লাগিল। পাঁচ-সাত মিনিট আস্তর সুরেন্দ্র বাবু হাততালি দিতে লাগিলেন, উৎসাহে আমার মুখ খুলিয়া গেল—আমি অনর্গল বলিয়া ঘাহঁতে লাগিলাম। পাঠকগণ শুনিয়া বিস্মিত হইবেন, আমি সেই প্রথম দিনেই পঞ্চাশ মিনিট বক্তৃতা করিয়াছিলাম এবং সেই বিরাট জনতা নিস্তব্ধ হইয়া সেই বক্তৃতা শুনিয়াছিল । বকৃত শেষ করিয়া ধখন বসিলাম, তখন মনে হইল, আমি যেন দশ-পনর দিন উপবাস করিয়া আছি—শরীর এতই দুৰ্ব্বল বোধ হইতে লাগিল । আমি বসিবামাত্র সুরেন্দ্র বাবু আমার পিঠ চাপড়াইয়া বলিলেন, “আপনি এমন সুন্দর বকৃত করিতে পারেন, আর বলিতেছিলেন কখনও বক্তৃত করেন নাই ?”আমি মনে মনে বেশ বুঝিলাম যে, সুরেন্দ্র বাবুই আমাকে বক্তা বানাইয়। ছাড়িলেন। তাছার পর অনেক সভাতে র্তাহাঙ্গের সম্মুখে বকৃত করিয়াছি, কিন্তু সেরূপ ভয় হয় নাই। কিরূপে বক্তা তৈরীর করিতে হয়, তাহ গেদিন স্বরেক্ত বাবুর কার্থো বুঝিতে পারিলাম । এই স্বদেশী আনোলনের সময়, ১৯৭৬ খ্ৰীষ্টাব্দে কলিকাতায় ষে ফংগ্রেস হইয়াছিল, তাহাতে স্বৰ্গীয়