পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o @● 公N°8之 آسان আয়ার কোলে না বেড়াইয়া, এক জন থান-পরা বাঙালী ঝিয়ের হাত ধরিয়া বেড়াইতেছে । তাড়াতাড়ি ভিতরে গিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “খুকির আয় কোথায় গেল ?” ঘামিনী বসিয়া খুঁকির একটা ফ্রকে রেশমের কাজ করিতেছিলেন ; স্বামীর দিকে চাহিয়া বেশ শাস্তভাবেই বলিলেন, “তাকে জবাব দিয়ে দিয়েছি।”. সুরেশ্বর বিরক্ত হইয়া বলিলেন, “কেন ? জবাব দেবার আগে আমাকে কি একবার জানানও যেত না ।” যামিনী বলিলেন, “ঝি-চাকর রাখা না-রাখার কোনোদিনই ত তুমি ব্যবস্থা কর না, আমাকেই করতে হয়, কাজেই তোমাকে বলতে যাই নি।” সুরেশ্বর বললেন, “বেশ, কিন্তু তার অপরাধটা কি তাও কি আমার শুনতে নেই ?” যামিনী ফ্রকট একদিকে ঠেলিয়া সরাইয়া দিলেন । র্তাহারও মেজাজে একটু বিরক্তির সঞ্চার হইতেছে বোঝা গেল। বলিলেন, “বাঙালীর মেয়ে প্রথমে বাংলা ভাষা না শিখে ভুল হিন্দী আর ইংরেজী শিখুক এটা আমি চাই না । তা ছাড়া আয়ার কথাবার্তা ভাল না, বড় বেশী গালাগালি করে । চুরুট খায়, আমি নিজের চোখে দেখেছি। খুকি গোড়ার থেকে এই সব দেখুক এ আমি চাই না।” সুরেশ্বর স্ত্রীকে একটু খোচা দিয়া বলিলেন, “নিজেও ত মানুষ হয়েছ থোট্টানী আয়ার হাতে । তার চুরুট না থাক, ই কোয় করে তামাক খায় । তোমার বেলা যা চলল, এর বেলা তা চলবে না কেন ?” ঘামিনী বলিলেন, “আমার শিক্ষাদীক্ষায় যেগুলি ক্রটি হয়েছে, আমার মেয়ের বেলাতেও সেগুলি ঘটুতে হবে, এমন কিছু আইন আছে নাকি.?” সুরেশ্বর বলিলেন, “তোমার মা-বাবার চেয়ে, আমার চেয়ে, সকলেরই চেয়ে তুমিই বেণী বোঝ এটা মনে করবার কারণ ?” ষামিনীর মুখখান অত্যন্তই গম্ভীর হইয়া গেল। তিনি বলিলেন, “বেণী বোঝা কম বোঝার কোনো প্রশ্ন উঠছে না। অামার মেয়েকে আমি নিজে ধে-রকম ভাল মনে করি, সেই ভাবে মানুষ করব। মা বাবা যা ভাল মনে করেছেন, তারাও তাই-ই করেছেন।” সুরেশ্বর কথাটা শেষ হইতে দিতে চান না। বলিলেন, “র্তাদের শিক্ষার ফল ভাল হয় নি, এই তবে তুমি বলতে চাও ?” যামিনী বলিলেন, “এ-বিষয়ে এত মাথা ঘামাবার কি যে দরকার তা ত আমি বুঝতে পারছি না। খুকির ভালমন্দ কি সত্যিই আমি তোমার চেয়ে কম বুধি ? তাহলে ত আমার উপর কোনো ভার না থাকাই উচিত।” এতদূর অগ্রসর হইতে অবগু সুরেশ্বর রাজী নন। ঘামিনী বিশেষ কৰ্ম্মিষ্ঠা নহেন, কিন্তু সুরেশ্বর একেবারেই অকৰ্ম্মণ্য। কোনো-কিছুর ভার লইতে হইবে এ কথা মনে করিতেই তাহার মাথায় আকাশ ভাণ্ডিয়া পড়ে । তাহা ছাড়া র্তাহাদের বিবাহ এখনও খুব বেশী দিন হয় নাই, যামিনীর সৌন্দর্য্যের ও স্বভাবের মাধুৰ্য্যের নেশাও এখন পর্য্যন্ত একেবারে ছুটিয়া যায় নাই। র্তাহাকে পাকাপাকি রকম চটাইয়া দিতে সুরেশ্বরের মন উঠিল না । তবু স্ত্রীর ঘর হইতে বাহির হইয়া যাইবার সময়, শেষ বাণ নিক্ষেপের মত কয়েকটা কথা না বলিয়া যাইতে র্তাহার পৌরুযে আঘাত লাগিল। বলিলেন, “তবে ওসব ফ্রক, জুতো মোজাটোজ খুলে নিয়ে, কোমরে একটা ঘুন্সী বেঁধে ছেড়ে দাও । ফিডিং বোতলটা অtছড়ে ভেঙে ফেল, ঝিনুকে ক’রে দুধ খাওয়াও । দিশী শিক্ষণ দিতে চাও ত পুরো দিশ শিক্ষাই দাও।” যামিনী বলিলেন, “ফিরিঙ্গী বানাতে চাই না ব’লে আমি ধাঙ্গড়ও বানাতে চাই না । সভ্যতা বা পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে দিশী শিক্ষার কিছু বিরোধ নেই।” খুকি চার বৎসরের যখন, তখন তাহার ভাই মুজিত জন্মগ্রহণ করিল। সুরেশ্বর বলিলেন, “খুকিকে এবার লোরেটােতে দিয়ে দিই না ? তোমারও একটু রিলিফ হবে।” ৰামিনী তাহাতেও সম্মতি দিলেন না। বলিলেন, “মেয়ে এখনও অ, আ, পড়তে শিখল না, এরই মধ্যে ওকে ইংরিজী বুক্‌নি, আর গালাগালি শিখতে যেতে হবে না । আগে ঘরে বাংলাটা শিখুক ।”