পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V8& মিনতি করিয়া কহিল, “আচ্ছা অরুণ। আস্তে আস্তে একটা গান করবে। কি যে মিষ্টি লেগেছে তোমার গান, বলতে পারি নে।” অরুণ সঙ্কোচে এবং মুখে কিছু কাল নিঃশব্দে রহিল। তাহার পর মৃদ্ধ কণ্ঠে কহিল, “কিন্তু আমি তো শুধু গলায় গান করতে পারি নে। তোমাদের এখানে এস্রাজ কিংবা হীৰ্ম্মোনিয়াম নেই ?” সন্তোষ ব্যস্ত হইয়া বলিয়া উঠিল, “তবে থাক। না, ওসব যন্ত্রের মধ্যে কোনটাই এখানে নেই। তা ছাড়া মা জানতে পারলে অসন্তুষ্ট হবেন ।” “কি বলছে বুঝতে পারছি নে গান বুঝি উনি পছন্দ করেন না ?” সন্তোষ অত্যন্ত লজ্জা পাইয়া কহিল, “কি জানো, সেকেলে মামুব, ওঁদের সংস্কারে আঘাত দেওয়া--"তাই তো আমি বলছিলুম বাজনা না হ’লে ঘণি না চলে তবে থাক । যদি এমন হ’তে পারত, তুমি গুন-গুন ক’রে গাইতে, কেবল ভূমি আমি ছাড়া কেউ শুনতে পেত না ।" অরুণ চুপ করিয়া রহিল। কিন্তু নিমেষের মধ্যে তাহার পরিপূর্ণ মুখের মাঝে একখানি ছায়াপাত হইল। সে তীক্ষ বুদ্ধিমতী । তথনই বুঝিয়া লইল, এখন হইতে অনেক বিধি-নিষেধের মধ্যে তাহাকে বাস করিতে হইবে । গান শুনিতে এমন ভালবাসা সত্ত্বেও স্বামী ঘূখন এতই সহজে আপনাকে দমন করিয়া লইলেন, মায়ের সংস্কারে পাছে এতটুকু আঘাত লাগে বলিয়া ও পথ দিয়াও গেলেন না, তখন তাহারই স্ত্রী হইয়া অতঃপর তাঁহাকেও অনেক কিছু হইতে নিবৃত্তি শিখিতে হইবে । ক্ষণকাল পরে আস্তে আস্তে কহিল, “আচ্ছা আমার সৌভাগ্য ক্রমে বা দুর্ভাগ্য ক্রমেই হোক আমি যে বি-এ পাস করেছি, এ খবরটা কি মা জানেন না " . “জানেন বইকি। আমি কিছুতেই বিয়ে করতে সম্মত হচ্ছিলুম না, অথচ প্রায় দু-তিন বছর আগে থেকেই মাক্রমাগত তাড়া দিচ্ছিলেন। শেবে তোমার অজিতদ। তোমার সঙ্গে সম্বন্ধ আনলেন, তার কাছে সব কথা শুনে আমার এমন ভীষণ লোভ হ’ল, ভায় ওপর তোমার ফটোখান দেখেই মা’র কাছে প্রার নিমরাজী-গোছের করেছি এমনই ভাব প্রকাশ প্রৰাস৷ ১NভBই পেল। মা হাতে স্বৰ্গ পেলেন । তুমি যদি এম-এ, পিআর-এল হ’তে তাহ’লেও তিনি বোধ করি লেশমাত্র আপত্তি করতেন না ।” “মা তোমাকে খুব ভালবাসেন, নয় ? আর তুমি ?” “আমি ? এতদিন আমার জগতে একটি মাত্র স্বৰ্য্য ছিল । তাকে ছাড়া বিশ্বজগতে আর কিছুই জানতুম না । আজও তাই জানি । কেবল তার সঙ্গে তোমাকেও জেনেছি। আমার জীবনের আকাশে চাদ উঠল।” তরুণী নববধু খুব স্বধী হইতে পারিল না। আজ মিলন-মহোৎসবের রাজিতে যে কেবল একটি মাত্র মুখকে কেন্দ্র করিয়াই আরতি হইবার কথা । সেখানে চাদের স্নিগ্ধ কিরণ বর্ষণের কাছে সুর্য্যের আলে৷ তো স্থান পাইবার কথা নহে । সে যে একেবারে অনবগুক । ૨ দুই বৎসর পরের কথা বলিতেছি । অরুণার স্বামী রংপুরে বদলী হইয়া আসিয়াছেন। এই স্থানটার জলবায়ু তেমন ভাল নহে। ম্যালেরিয়ার প্রকোপ আছে। সময়ট পৌষ মাস। শীতের কনকনে হাওয়া দিতেছে । বসিবার ঘরে আরাম-কেদারায় পায়ের উপর শাল চাপা দিয়া সত্তোষ বসিয়া আছে, এবং অদূরে ষ্টেভি ধরাইয়া অরুণ। ওটপরিজ তৈয়ারী করিতেছে । ডাক্তারের কাছে শুনিয়াছিল এই বস্তুটা নাকি অত্যন্ত উপকারী ও বলকারক, তাই সন্তোবের জন্ত করিতেছিল। তfহার স্বামীর আশ্বিন মাসে ম্যালেরিয়া হইয়াছিল, তাহার পর অঞ্চণা যথাসাধ্য চিকিৎসা করাইয়াছে। কুড়ি দিনের ছুটি লইয়া তাহাকে হাওয়া বদলাইতে পুরী পাঠাইয়াছে, তথাপি তাহার দৃঢ় বিশ্বাস তিনি এখনও সারিয়া উঠিতে পারেন নাই। সন্তোষ চেয়ারে চুপ করিয়া পড়িয়া ছিল এবং মাঝে মাঝে আড়চোখে ষ্টেtভটtর পানে চাহিতেছিল। তাহার সমস্ত মন আকুল হইয়া উঠিয়াছিল এক পেয়ালা সোনার রঙের সুন্দর গরম চারের জন্ত । কতদিনের অভ্যাস । কিন্তু জানে অরুণার কড়া শাসনে তাহা হইবার জো নাই । তাহার বদলে খাইতে হইবে দুধ এবং চিনি দিয়া তৈয়ারী