পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\sa o পনর পরে হঠাৎ তারে খবর পাইল মা আরতি দেখিয়া বাসায় ফিরিয়া বুকে বেদন বলিয়া হঠাৎ গুইয়৷ পড়েন, তাহার ঘণ্টা দুই পরেই হার্ট-ফেল হইয়। সব শেষ হইয়া शॉब्र । ধীক এ সকল অতীতের কথা । এখন বৰ্ত্তমানে ঘড়িতে প্রায় আটটা বাজে । সময়টা শীতকাল। অরুণীর শয়নকক্ষের একাংশে দোলনায় পশমের মোজা এবং টুপিতে আপাদমস্তক আবৃত হইয়া একটি নবজাত শিশু গুইয়া আছে । টেবিলের উপর ঝুঁকিয় পড়িয়া আলোর নিকটে পশম এবং কঁটা লইয়া অরুণা কি একটা বুনিতেছে । সস্তোষ বোধ করি বাহিরে গিয়াছিল, এইমাত্র বেড়াইয়া ফিরিয়া আসিল । আলনায় ছড়ি ও ওভারকেটটা রাথিয়া দিয়া কহিল, “কি করছ ? থোকা ঘুমিয়েছে। তাহলে এই অবসরে একটা গান শোনাও না অরুণা। মনটা তেমন ভাল নেই । তোমার গান শুনতে ইচ্ছে করছে।” “না না, খোকার এই মাফলারটা আমাকে অজিকালের মধ্যেই শেষ করতে হবে । এক জোড়া মোজাও বোন চাই লীগ গীর। যা ঠাও পড়েছে।” সন্তোষ হাসিয়া ফেলিয়া কহিল, “খোকার পোষাকে একটা আলমারী বোঝাই হয়ে গেছে । ওর ক’জোড় মোজা আছে বল ত ? গুণে শেষ ক'রে উঠতে পার ? এইটুকু ক্ষুদে মানুষটি কতই প’রে শেষ ক’রে উঠতে পারবে !” অরুপ নিবিষ্ট মনে সেলাই করিতে করিতে কহিল, “না না, তুমি বুঝছ না, আছে অনেকই। কিন্তু সব দিক দিয়ে সুবিধে হয়, ঠিক এমনটি বেশী নেই। কোন জামাটার হয়ত রঙটা এত বেমানান, কোনটা যদিবা পছন্দসই হয়, গীয়ে টিলে হয়। পরাতে গেলেই চলচল করে, সে ভারি বিত্র দেখায় ।” 魄 সন্তোষ অঙ্কমনস্ক হুইয়াছিল । বাহিরের শাতাত্ত অন্ধকার রাত্রির দিকে চাহিয়া কহিল, "অরুপ একটা কানাড়ী সুর গাও না । সেই যে-নীরব করে দাও হে তোমার—” - "ঐ যাঃ, তোমার সঙ্গে গল্প করতে গিয়ে আমার ঘর পড়ে গেল ! বডড বকীও তুমি । না না, গান এখন নয় গে। লক্ষ্মীটি, অন্ত সময় শুনৰে । তুমি জান না, খোকাটা প্রৰণসী ১৯৩৪২ কি দুষ্ট, আর কি পাতল ঘুম ওর। একটু গানের শব পাবে কি ঘুম ভেঙে যাবে। উঠে যেয়ে আমাকে জালাতন করবে। এখন আমার কত কাজ বাকী রয়েছে যে, থোকার চাদরগুলো ইস্ত্রী ক’রে রাখতে হবে । ওর দুধ খাবার বোতলটা খুঁয়ে রাখতে হবে, কি বলছ ?•••কেন বি আছে কি করতে, ওমা! কি যে বলে ঠিক-ঠিকানা নেই তার । শুনলে না সেদিন ডাক্তার দাস ৰ’লে গেলেন নিজের মুখে যে, ছেলেদের পাওয়ানোর বোতল অfর তার রবারের মুখীগুলি যেন মা-লক্ষ্মীরা নিজের হাতে পরিষ্কার ক’রে ঘুরে রাখেন। বি-চাকরের হাতে এর ভার দিয়ে নিশ্চিন্তু হয়ে না বসে থাকেন । এর থেকেই বৃত—” “তহ’লে তোমার একবারেই অবসর নেই বলে ।” সন্তোষের মুথে চাপা হাসির উজ্জ্বলতা । “হাসছ যে বড় । সে কি আর ব'লে দিতে হবে, নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছ না ।” দু-জনেই কিছুক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। অরুণ। সেলাই করিতে করিতে মুখ না তুলিয়াই সহসা কহিল, “অহ, আমার শাশুড়ী যাওয়ার আগে যদি থোকাকে দেখে সেতে পেতেন, তার বড় সাধ ছিল—” সন্তোষের বুকটা ধ্বক করিয়া উঠিল। মনের মধ্যে একটা মন্থণাব মোচড় দিয়া উঠিল । অরুণা হাতের সেলাই ফেলিয়া নিঃশব্দ লঘু পদসঞ্চারে উঠিয়া থোকার দোলনার নিকট গিয় তাহাকে মৃদ্ধ মৃদ্ধ দোল দিতে দিতে অস্ফুট স্বরে কহিল, “তোমার যে কত লেগেছে তা বুঝতে পারি, আমি তো ভাৰতেই পারি নে থোকার জীবনে এমন এক সময় আসবে, যখন আমি থাকব না। অথচ জানি জগতের নিয়মে তাই হয়ে আসছে। এইটুকু ছেলে, এত নিঃসহায়, এখন আমি এক দও না দেখলে ওর চলে না । অথচ একদিন—” অরুণা দোলনায় একটুখানি দোল দিয়া পালঙ্কের উপর থোকার শয্যার শিয়রের কাছে একটি টিপয়ে তাহার ছোট গরম ওভারকোট, শাল, মোজা এবং টুপি গুছাইয়া রাখিতে লাগিল। *জান, খোকার বড় সর্দি হয়েছে । কি ক’রে যে ঠাও লাগলো বুঝতে পারি নে। এত সাবধানে রাখি তবু— । এই দেখ ন সকালে, খুৰ ভোরে ওর ঘুম ভেঙে