পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ জন্মস্বত্ব QNS) দোষ চের, সেটা কাটানোর জন্তেই স্কুলে যাওয়া দরকার ।” - সুরেশ্বর বলিলেন, “সুজিতকে দেখ দেখি । একদিনও স্কুলে যেতে তার আপত্তি দেখেছ ?” বামিনী বলিলেন, “না, স্কুলে যেতে তার আপত্তি দেখি নি বটে, তবে পড়াশুনা করাতে তার মারাত্মক আপত্তি । সেখানে যত লক্ষ্মীছাড়া ফিরিঙ্গী ছেলের সঙ্গে মিশে হুড়োহুড়ি করতে পায়, সেখানে যেতে আপত্তি হবে কেন ?” সুরেশ্বর বলিলেন, “ফিরিঙ্গী, ফিরিঙ্গী ক’রেই তুমি গেলে । ওদের ওপর তোমার এত ঝাল কেন বল দেখি ? ওরা কি তোমার বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছে ? নিজেও ত আগাগোড়া ফিরিঙ্গী-শিক্ষাই পেয়েছ ।” যামিনী বলিলেন, “কেন যে অত বিতৃষ্ণণ সে বলতে গেলে ঢের কথা বলতে হয় । অত বলবারও আমার সময় নেই, শুনবারও তোমার সময় নেই। তবে থোকার শিক্ষণ ভাল হচ্ছে না, এটা তুমি জেনে রেখো ।” “সে ত জেনে রেখেইfছ । আমি বখন ব্যবস্থাটা করেছি, তখন তার ফল ভাল হবে কোথা থেকে ?” বলিয়া সুরেশ্বর চলিয়া গেলেন। স্বামী-স্ত্রীর কথাবার্তা বেশীর ভাগ এই রকমই চলিত। একটা কিছু বিষয়ে তর্ক করিয়া কথা শুরু হইল, এবং তর্কের মীমাংসা হইবার আগেই হয় যামিনী না-হয় হরেশ্বর অসহিষ্ণু ভাবে সরিয়া পড়িতেন। সেটা অবগু এক দিক দিয়া ভালই হইত। দু-জনের মতামত ছিল একেবারে উন্টারকম, কাজেই তর্ক বেশীক্ষণ ধরিয়া চালাইলে লাভের মধ্যে ঝগড়া বাধিয়া যাইত। মাঝপথে সব কথা থামিয়া থাকায় রীতিমত ঝগড়াটা খুব কমই হইত। যাহা হউক, মমতা ইহার পর রীতিমত স্কুলে যাইতে স্বরু করিল । পড়াশুনায় সে তালই ছিল, শেলাই, আঁকা, গানবাজনা, সবই সে বাড়িতে অনেকখানি শিথিয়াছে, স্কুলে কিছুর জন্ত তাহাকে ঠেকিতে হইল না। বরং শীঘ্রই ভাল মেয়ে বলিয়। তাহার নাম রটিয়া গেল । অতএব মমতারও ইহার পর স্কুল ভাল লাগিতে আরম্ভ করিল । তবে সারাটা দিনই মাকে ছাড়িয়া থাকিতে হইত বলিয়া এখনও মধ্যে মধ্যে তাহার মন কেমন করিত । স্বরেশ্বর মেয়েদের খুব বেশী পড়াশুনা পছন্দ করিতেন না। নিজে যদিও শিক্ষিত মেয়েই বিবাহ করিয়াছিলেন, কিন্তু সেটা সত্য সত্যই শিক্ষার প্রতি কোনো আকর্ষণবশতঃ নয়। যামিনীর সৌন্দর্য র্তাহাকে অতিশয় অভিভূত করিয়াছিল ইহাই সে বিবাহের প্রধান কারণ। অন্ত একটা কারণ, শিক্ষা বা জ্ঞানের প্রতি র্তাহার অনুরাগ থাক বা নাই থাকু, চালচলনে, বেশভূষায়, কথাবাৰ্ত্তীয়, খুব কায়দা-দুরন্ত এবং আধুনিক হওয়ার দিকে তাহার একটা প্রগাঢ় রকম ঝেণক ছিল । স্ত্রীও চাহিয়াছিলেন তিনি সেই রকম। তাহাদের বাড়িতে তিনি যেসব বধু আসিতে দেখিয়াছেন, তাহারা আসিয়াছে লাল বেনারসী শাড়ীর পুটলির মত, আগাগোড়া অবগু হীরামুক্তাখচিত। তাহদের মুখ কাহাকেও দেখাইতে হইলে এক জন মাম্যকে ঘোমটা খুলিয়া দিতে হইত, আর এক জনকে মুখ তুলিয়া ধরিয়া, এবং ডাইনে-বারে ঘুরাইয়া দর্শককে দেখাইয়া দিতে হইত। পাছে বধুর মানবত্ব চোথের দৃষ্টিতেও ধরা পড়িয়া যায়, এই ভয়ে সে চোখও বন্ধ রাখিত। ঠিক যেন মানুষকে পুতুল সাজাইয়া রাধা । এই সব বধুর মত একটি বধু নিজের ঘর আলো করিতে আসিবে মনে করিলেই সুরেশ্বর চটিয়া যাইতেন । র্তাহার পুতুলখেলায় কোনো উৎসাহ ছিল না, বরং ঘরসাজানতে উৎসাহ ছিল। যামিনীকে দেখিয়া ঘরের বাহিরে সকলে যখন প্রশংসায় পঞ্চমুখ হইয়া উঠিল, তখন গৰ্ব্বে সুরেশ্বরের বুক দশ হাত হইল। এই ত চাই ? কিন্তু স্ত্রী ত শুধু গৃহসজ্জার উপকরণ নহেন, তিনি সজীব সজ্ঞান মানুষ । এইখনেই বাধিল গোলমাল। আগেকার কালের স্ত্রীগুলির ব্যবহারে আর যারই অভাব থাক, বাধ্যতার অভাব ছিল না । তাহীদের সাধা ছিল না স্বামীর কোনো কথার একটা প্রতিবাদ করিবার। ডাহিনে চলিতে বলিলে ডাহিনে চলিত, বায়ে চলিতে বলিলে বায়ে চলিত। কিন্তু এই আধুনিক মেয়েগুলি কথা ত শুনিতে চায়ই না, তদুপরি প্রমাণ করিতে বসিয়া যায়, যে, এই রকম কথা বলিবারই স্বামীদের কোনো অধিকার নাই। এতটা সহ করিতে সুরেশ্বর একান্তই নfরাজ ছিলেন । বাহিরের দিকে যতই আধুনিকতা ফলান, মনের ভিতরটা তাহার এই স্থানে একেবারে খাটি সমাতনপন্থী ছিল। যতই লেখাপড়া শিখুক,