পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

نيون ولا ૩૭ષ পারিলেই যেন এক দিক দিয়া ভাল হইত। নিত্য এই অপমান, এই মানি তাহা হইলে চুকিয় যাইত। দারিদ্র্য র্তাহার অভ্যাস নাই, কিন্তু এই লাঞ্ছনাজড়িত ঐশ্বৰ্য্যভোগ অপেক্ষ দরিদ্রভাবে জীবনযাপন সহস্ৰগুণে কি ভাল হইত না ? এমন সময় একখানা চিঠি হাতে করিয়া ঘরে ঢুকিয় মমতা ডাকিল, “মা ।” নিজের অদৃষ্ট-চিন্ত হইতে যামিনী জোর করিয়া যেন নিজেকে ফিরাইয়া আনিলেন। মেয়ের মুখের দিকে চাহিয়া বলিলেন, “কি মা ?” . মমতা চিঠিখানা র্তাহার দিকে অগ্রসর করিয়া দিয়া বলিল, “মা দেখ, ছায়া আমাকে কাল নেমস্তন্ন করেছে।” ঘামিনী চিঠি লইয়া পড়িয়া দেখিলেন। ছায়াই লিখিয়াছে। কাল তাহার জন্মদিন, তাই তাহার মাসীমা ছায়ার কয়েক জন বন্ধুকে একটু জলযোগ করিবার জন্য নিমন্ত্রণ করিয়াছেন। মমতা অত্যন্ত উৎসুক ভাবে জিজ্ঞাসা করিল, “হঁ্য মা, আমি যাব ত?” যামিনী মান হাসি হাসিয়া বলিলেন, “তা যেও, রাত হবার আগেই ফিরে এস কিন্তু।” মমতা বলিল, “তা ত আসবই । এ ত আর রাত্রে খাবার নিমন্ত্রণ নয়, চা খাবার শুধু।” “আচ্ছা মা, লুসিকেও কি নিয়ে যাব ? ও তা না হ’লে একা এক বসে কি করবে ?” যামিনী বলিলেন, “ছায় থাকে পরের বাড়ি, উপরি লোক নিয়ে গেলে হয়ত অস্তুবিধা হতে পারে। লুসি ঘন্ট দুই-তিন কি আর একলা থাকতে পারবে না ?” • মমতা ক্ষুণ্ণভাবে বলিল, “আচ্ছ, তাই থাকবে না-হয়। আমি যাব কার সঙ্গে মা ?” '. মা বলিলেন, “কার সঙ্গে আর যাবে মা, বাড়ির গাড়ীতে নিজেই ষেও। নিত্যকে সঙ্গে দেব এখন।” - মমতা চলিয়া গেল। ছোটখাট ব্যাপারই তাহদের তরুণ জীবনে কতখানি। কাল ছায়ার বাড়ি যাইবে, এই ভাবনাই মমতাকে এখন অধিকার করিয়া বসিল। কি কাপড় পরিবে, কি গহনা পরিবে, তাহাই কতবার করিয়া ভাবিল। ছায়ার ত গহনাকাপড় বিশেষ কিছু নাই, তাহার বাড়িতে বেশী সাজ করিয়া যাওয়া ভাল দেখাইবে না। অলকা মুটুকী কিন্তু প্রাণপণে সাজিয়া আসিবে, তাহ মমতা লিখিয়া দিতে পারে। তাহাদের ক্লাসের মেয়েদের ছাড়া আর কাহাকেও ছায়া বলিয়াছে কিনা কে জানে ? বাহিরের অচেনা ছেলেদের সামনে বাহির হইতে মমতার বড় লজ্জা করে, অভ্যাস নাই কিনা ? লুসি তখন খাটের উপর বসিয়া একথান। নভেলের পাতা উন্টাইতেছিল। - মমতাকে দেখিয়৷ বলিল, “বেশ আছিস্ ভাই দিদি, নিত্যি পার্ট, নিত্যি নেমস্তন্ন। বড়লোক হওয়ার স্বগ আছে।” মমতা বলিল, “মুখ ত কত । এই রকম জড়ভরত সেজে যত বুড়ো আর টেকের সামনে বোকার মত দাড়িয়ে থাকতে ভারি ভাল লাগে আর কি ?” - লুসি বলিল, “সে ত আর রোজ না ? এর পর বুড়ে আর টেকোর ছেলে যখন আসবে তখন খুব ভাল লাগবে।” মমতা তাহাকে একটা চড় মারিয়া বলিল, “যা, ভারি ফাজিল হয়েছিল। এত পাকামি তোর আসে কোথা থেকে ?” লুসি বলিল, “কোথা থেকে আবার আসবে ? বয়স বাড়ছে না কমৃছে ? চিরদিনই কি আর খুঁকি থাকব ? তোমার বর যে নিজে আসবে তোমায় দেখতে, তা বুঝি জান না ? তোমার বিন্দু-পিসীমার কাছে শুনলাম যে ?” মমতা মুখ লাল করিয়া চুপ করিয়া রহিল। ব্যাপারটা কি জানি কেন তাহার মোটেই ভাল লাগিতেছিল না। মায়ের যে ইহাতে বিন্দুমাত্র সম্মতি নাই, তাহ সে বেশ বুঝিতে পারিতেছিল, এবং মনটাও তাহার এই কারণে বিরূপ হইয়া যাইতেছিল। বিবাহের চিন্তা, বরের চিন্ত, প্রেমে পড়ার চিস্ত, এই বয়সের কোন খেয়ের মাথায় না আসে ? কিন্তু এই রকম ঘটকালির বাধা পথে কি মমতার রাজপুত্রের আগমন ঘটিবে ? তাহার মন যেন একেবারে মুখ ফিরাইয়া লইল । লুসি বলিল, “দিদি ভাই, তুষ্ট বড় ছেলেমানুষ কিন্তু। আমি হ’লে—” ● মমতা বলিল, “তুমি হ’লে কি করতে ? চার পা তুলে নাচতে ”