পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভজি বেশী দেরি করা ভাল না, নানারকম বাধা-বিপত্তি ঘটুতে পারে। যোগ্য ছেলে, আরও অনেকের চোখ আছে ওর উপর। আমার এমন ত কিছু অমুখ নয়, আজকের দিনটা গুয়ে পড়ে থাকলেই সামলে যাব। আমি বলছিলাম যেমন কাল ডাকার কথা ছিল, তাই না-হয় ডাকা যাক ৷” সুরেশ্বরকে চটিবার কোনো স্বযোগ দিবার ইচ্ছা যামিনীর একেবারেই ছিল না। তিনি বলিলেন, “বেশ তাই কর। চিঠি লিখে দাও।” স্বরেশ্বর খুলী মনে চিঠি লিখিতে বসিলেন, যামিনী বিষন্ন মনে নিজের ঘরে চলিয়া গেলেন । মমতার বিকালে নিমন্ত্রণে যাওয়ায় একটু মুস্কিল ঘটবে। এই অবস্থায় যামিনী ত বাহিরে যাইতে পারেন না। পাচ মিনিট পরে পরে যে-কোনো ছুতা করিয়া স্বরেশ্বর এখন র্তাহাকে ডাকিয়া পাঠাইতে থাকিবেন, নিজে অমুস্থ হইয়৷ থাকিলে বাড়িসুদ্ধকে অস্থির করিয়া তোলা র্তাহার নিয়ম। নিজে যখন আরামে না থাকেন, তখন অন্য কাহারও আরাম তিনি সহ করিতে পারেন না । মমতাকেও ডাকিতে পারেন, কিন্তু সে বেড়াইতে গিয়াছে বলিলে তত বেশী কিছু বলিবেন না। অথচ মমতা বেচারীকে নিরাশ করিবার ইচ্ছা যামিনীর একেবারেই ছিল না। এমনিতেই সে বাড়ি হইতে কোথাও বাহির হইতে পায় না, যদি বা একটা সুযোগ ঘটিল, তাহাও না মাঠে মারা যায়। কি করিবেন, যামিনী ভাবিয়াই পাইলেন না। এমন সময় একটা অপ্রত্যাশিত দিক হইতে সাহায্য আসিয়া পৌছিল। স্বজিত হঠাৎ আসিয়া বলিল, “মা আমার একবার গাড়ীটা দরকার বিকেলে ।” কয়েক দিন আগে তাড়া খাইয়া, স্বজিত এখন কোথাও যাইতে হইলে ভদ্রত করিয়া মাকে জিজ্ঞাসা করিতে আসে । যামিনী বলিলেন, “কোথায় যাবে ? তোমার দিদিরও ত আজ এক জায়গায় যেতে হবে ।” - স্বজিত বলিল, “আমাদের ক্লাসের দীনবন্ধুর কাছে একবার যেতে হবে, কয়েকখানা বই আনবার জন্তে ।” যামিনী জিজ্ঞাসা করিলেন, “কোন পাড়ায় তাদের বাড়ি ?” স্বজিত বলিল, “কালীতলার কাছে।" | - ছায়ার মাসীর বাড়ি বেনেটোলায়। যামিনী আশ্বস্ত হইয় জন্মস্বত্ব

̈ ጬግ

বলিলেন, “তাহলে মমতা আর তুমি একসঙ্গেই যাও, ওকে নামিয়ে দিয়ে তবে তুমি দীনবন্ধুর বাড়ি ধেও, আবার ফিরবার সময় তুলে নিয়ে এস। আটটার বেশী দেরি যেন না-হয় ।” ব্যবস্থাটা স্বজিতের মোটেই পছন্দ হইল না । ইহারই মধ্যে মেজাজটা তাহার খুব বনিয়াদী হইয়া উঠিয়াছিল। বাড়ির মেয়েদের সঙ্গে কোথাও যাইতে হইলে, তাহার যেন মাথা কাটা যাইত। মেয়ের বাড়ির ভিতর থাকিয়া পুরুষদের স্বর্থ-স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করিবে, এই ছিল তাহার স্ত্রীজাতি সম্বন্ধে বিধান। তবে এখনও ত নিজের ধারণাগুলি অন্তের উপর পাটাইবার সুবিধা পায় নাই, কাজেই তাহাকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও অনেক কাজ করিতে হয়। দিদিকে লইয়া যাইবার তাহার বিন্দুমাত্রও ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু তাহা না করিলে নিজের যাওয়া বন্ধ হয়, অগত্য তাহাকে রাজী হইতে হইল । মুরেশ্বর সারাটা দিন বাড়ির সকলকে, বিশেষ করিয়া যামিনীকে, ব্যস্ত করিয়া রাখিলেন। মমত, মুঞ্জিত, লুসি, ঝি-চাকর, আশ্রিতবর্গ, সকলেই পালা করিয়া তাহার ফরমাস খাটিতে লাগিল। বিকাল হইয়া আদিতেছে দেখিয়া যামিনী বলিলেন, “আমি বস্ছি এখন এখানে, থোকা খুকী খানিকটা ঘুরে আম্বক। সারাদিন বাড়িতে বন্ধ হয়ে থাকা ভাল নয়।” স্বরেশ্বর রাজী হইলেন, কারণ ছেলেমেয়ের যাহাতে মঙ্গল হয়, তাহাতে কখনও তিনি আপত্তি করিতেন না। যামিনী মমতাকে একটু আড়ালে ডাকিয়া লইয়া বলিলেন, “এই নে মা চাবি, শীগগির করে কাপড়চোপড় পরে নে গিয়ে ।” মমতা চলিয়া গেল। লুসি তাড়াতাড়ি ছুটিয়া আসিল । “দেখি ভাই দিদি, আজ কি পারবে ?” মমতা কাপড়ের আলমারি খুলিতে খুলিতে বলিল, “যাহোৰু একটা কিছু পরে গেলেই হবে আজ ।” লুসি বলিল, ও মা, কেন ? চায়ের নেমস্তরে বাচ্ছ বেশ ভাল করে ড্রেস করে যাও। কাল যেমন উপকথার রাজকন্ত সাজলে, আজ তেমনি মেমসাহেব সাজ । তোমার ত সব রকমই আছে।” -- * * * মমতা বলিল, “না ভাই। ছায়া-বেচারীর সাজপোষাক কিছুই নেই, তার ঘরে গিয়ে বড়মামুৰী দেখলে বড় বিস্ত্রী হবে। এমনি সাদাসিদে কাপড় পরেই যাই।”