পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবনাক্সন ভাদ্র \ ۹وd8 —আমিও যাব । o অরুণ একটু ভীত হইয়া বলিল—কি হ’ল তোমার ; -—আমি হেঁটে যাব, অত হাটতে পারবি ? এ তোমার সাময়িক অবসাদ । না, না, কবিতা-লেখা ছাড়বে —খুব পারব । কেন, তোমার মধ্যে খুব প্রমিস রয়েছে। --আচ্ছা চল, বিষ্টি থেমেছে । পথে যাইতে যাইতে অরুণ গানগুলি সম্বন্ধে নানা প্রশ্ন করিল। মামার রহস্যময় জীবনের নানা তথ্য জানিতেও সে উৎসুক, কিন্তু সে-সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন করিতে সাহস হইল না। --ওই ভজনটি আমায় শিখিয়ে দিতে হবে । —আচ্ছা রে আচ্ছ, গলায় শুধু স্বর থাকলে হবে না রে, ভক্তি চাই। — ও গান কে লিখেছেন ? -—এ সব গান কে লিখেছেন, তা কেউ জানে না। শতাব্দীর পর শতাব্দী ভক্তের পর ভক্তের মুখে এ গান চলে এসেছে। যিনি প্রথম লিখেছিলেন তিনি সব সময় তার নাম দিয়ে যান নি। তিনি প্রেমদাস ছিলেন, না জ্ঞানদাস ছিলেন, অথবা কোন অপ্যাত ঋষি, অজ্ঞাত বাউল ছিলেন, তাতে কি আসে যায়। তিনি তাহার হৃদয়ের যে ভক্তি দিয়ে গেছেন, সেই ত গানের প্রাণ । —মামা, আপনার কি স্বন্দর আনন্দের জীবন । আমারও ইচ্ছে করে— - —খোকা, বড় হলে বুঝবি, এ জীবনে আনন্দ যেমন দুঃখবেদনাও তার চেয়ে কম নয়, শরীরের দুঃখ নয় রে, মনের দুঃখ, মনের। কতটুকু আমরা মানবকে সেবা করতে পারছি, কতটুকুই বা আলে জালাতে পারলুম। ( २० ) অপরাহ্লে জয়ন্ত আসিয়া উপস্থিত হইল, মলিন মুখ, মলিন বেশ। জয়স্তের মূৰ্ত্তি দেখিয়া অরুণ বিস্থিত হইল। সুসজ্জিত কবিয়ানা নাই। অরুণের হাত ধরিয়া জয়ন্ত বলিল-— চল ভাই, তোমার ছাদের ঘরে। এ যেন স্কুলের সেই সরল ছেলেমানুষ জয়ন্ত, কলেজের উদীয়মান আধুনিক কবি নয় । জয়ন্ত একটু হতাশ স্বরে আবেগের সহিত বলিল--আমি ঠিক করেছি, আর কবিতা লিখব না, কবিতা লেখা ছেড়ে দিলুম। --হুঁ, আমার হৃদয়ট কবির বটে, কিন্তু যা বলতে চাই তা ঠিক-মত বলতে পাচ্ছি কি ? আমার চেয়ে তুই ভাল কবিতা লিপিস। তোর যে সমুদ্রের মায়' কবিতা আমায় পাঠিয়েছিস, চমৎকার হয়েছে, বিশেষতঃ ওই তরুণীর চলার ভঙ্গীর উপমাটি । কোন উপমা ? সোনালী বালুকার উপর থসূ-খস্ শব্দে অলসগতিতে সে চলে যায়, তাহার গতি-ভঙ্গীতে কোন কবিতা ছন্দের তরঙ্গায়িত আন্দোলন, ধ্বনির বন্ধন भूखैि লাভ করে । কিন্তু তোর কি হয়েছে বল্ দেখি ? বললুম ত, বিদায় কবিতা, বিদায়। -কিন্তু, কাব্য-লক্ষ্মী তোকে ছাড়বে কেন ? —সে ত ছেড়ে চলে গেছে । -বুঝেছি, সেই পাশের বাড়ির মেয়েটি, কি হ’ল ? —দশ দিন হ’ল, তার বিয়ে হয়ে গেছে। —ও, তাই বল। তারা ত বৈদ্য। তোর সঙ্গে ত বিয়ে হ’তে পারত না । একদিন ত তার বিয়ে হ’তই, যত শীগগীর তার বিয়ে হয়ে যায় ততই ভাল । —একটা গল্প লিখব ভাবছি। এ-সব সামাজিক কুসংস্কার ভাঙতে হবে । —আত্মচরিত লিখবি ? ব্যর্থ প্ৰেম ! —প্রতি গল্পষ্ট কি লেখকের আত্মান্তভূতি নয়। —যাক, ও নিয়ে আর মন পারাপ করিস না। পাশের বাড়ির একটি মেয়ের সহিত জয়স্তের প্রেমের একটা অল্পষ্ট ধারণ অরুণের ছিল ; জয়ন্ত সবিস্তারে সে কাহিনী বলিতে শুরু করিল। প্রতিদিন বিভিন্ন রঙের শাড়ী পরিয়া বেণী দুলাইয়া কিশোরীটি জয়স্তের ঘরের সন্মুখ দিয়া স্কুলের গাড়ীতে উঠতে যায়, গাড়ী সরু গলিতে আসিতে পারে না, গলির পথ গটিয়া যাইতে হয় ; এই মুহূর্বের জন্য জয়ন্ত সমস্ত প্রভাত প্রতীক্ষা করিয়া বসিয়া থাকে। কখনও তাহাকে য়ে দেখিয়াছে, ছাদে চুল দোলাইয়া বেড়াইতেছে, কখনও দেখিয়াছে, জানলার গরাদে মাথা