পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Woo প্রবাসী ૩૭u૨ ঠেকাইয় পথের দিকে চাহিয়া আছে, যেন কোন অনাগত পথিকের আগমন-প্রতীক্ষা করিতেছে । মাঝে মাঝে চোখে চোখ পড়িয়াছে, মেয়েটি হাসিয়া উঠিয়াছে, কিন্তু কখনও কথা বলা হয় নাই। প্রেম মনে-মনে হইলেও, মেয়েটি ষে তাঁহাকে ভালবাসিয়াছে, এ-বিষয়ে জয়স্তের সন্দেহ নাই । মেয়েটি আশ্চৰ্য্য স্বন্দরী। অরুণ মনে মনে হাসিয়া ভাবিল, জয়ন্ত যে গৰ্ব্ব করিয়া বেড়াইত তাহার কবিতা বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতামূলক, ইহা সেই অভিজ্ঞতা ! অরুণ গম্ভীর ভাবে বলিল-দেখ ভাই, প্রেম ও সৌন্দৰ্য্য কবির আত্মার স্বষ্টি ৷ ‘ ও মেয়েটি উপলক্ষ্য মাত্র। জয়ন্ত হতাশভাবে বলিল, আমি কি আর ভালবাসতে পারব ভাবিস ! পারব না। ---ভালবাসা হচ্ছে প্রেমিকের অস্তরের। যেমন ধর, স্বৰ্য্যালোকে আছে সাত রং । আজ প্রভাতে স্বৰ্য্য যেমেঘ রাঙিয়ে সৌন্দৰ্য্য স্বষ্টি করলে, সে-মেঘ যদি জল হয়ে করে পড়ে যায়, তাহলে কি স্বৰ্য্য তার কোন নূতন মেঘ রাঙাবে না, নব সৌন্দৰ্য্যালোক স্বষ্টি করবে না, সে কি বলবে, আমার রঙের ভাণ্ডার উজাড় হয়ে গেল ? যত দিন তোর অন্তরে প্রেম থাকবে, তত দিন তোকে ভালবাসতেই হবে, কবিতা লিখতেই হবে। —ঠিক বলেছিস্ । তোর উপমাগুলি বড় মুন্দর। পুরীর খবর কি বল ? —আমার কি আর সে বরাত । পুরীর কথা জানিতে জয়ন্ত বিশেষ কিছু উৎসাহ প্রকাশ করিল না ; আপন ব্যথিত হৃদয়ের কাহিনী আবার স্বরু করিল। অরুণ আশ্চর্ঘ্য হইয়া ভাবিতে লাগিল, জয়ন্ত তাহার পাশের বাড়ির মেয়েটিকে যতটুকু জানিতে পারিয়াছে তাহা অপেক্ষ কত ঘনিষ্ঠভাবে মল্লিকার সহিত'তাহার পরিচয় হইয়াছে ; মল্পিকার কথা ভাবিলে তাহার অন্তর উদাস হইয়া -যায় ; এই বাড়ির সারি, এই নগর পথ সব বড় ছোট, বড় চাপ মনে হয় ; সে কোন জনস্তের আভাস পাইয়াছে। প্রেম কি ? লিন বা খে নাই। ময় তি | উঠিলেন। প্রতিমা একদিন কাদিয়া ফেলিল। সন্ন্যাসীমামা বলিলেন—ভাবিস না, অমুখ হলে আমি জানতে পেতুম । . সকালে উঠিয়াই অরুণ হরিসাধনের সংবাদ লইতে চলিল। ছোট গলির ভিতর পুরাতন ছোট দোতলা বাড়ি। দরজার কড়া নাড়িতেই হরিসাধন বাহির হইয়া আসিল । —অরুণ ! এস এস । o е --বেশ ভাই, তোমার দেখাই নেই, আমরা ভেবে মরি, অমুখ হ’ল বুঝি। —আমি খবর পেলুম, তুমি এসেছ, প্রতিমারও জর ছেড়ে গেছে । —ব, সেজন্তে আর আসবে না। বড় অন্যায় করেছ। --আরে ভাই, আমার কি সামাজিকতা করবার সময় আছে। এ দু-দিন এক কলেরা-রোগী নিয়ে পড়েছিলুম, বাঁচাতে পারলুম না, এই দু-ঘণ্টা হ’ল শ্মশান থেকে আসছি। —তাহলে তোমার ত এখন বিশ্রাম দরকার। তুমি বিকেলে নিশ্চয় এসো, রাতে থাবে । --না, না, আমার বিশ্রাম করা হয়ে গেছে । তুমি চল, ঘরে বসবে, তুমি না খেয়ে গেলে দিদি রক্ষে রাখবেন না। মাটির অঙ্গন । মধ্যে একটি চাপা-ফুলের গাছ ঘেরিয়া সান বাধান বেদী। উঠান পার হইয়া সরু সিড়ি দিয়া অরুণ দোতলায় উঠিল। হরিসাধন তাহাকে একটি ছোট ঘরে বসাইল । ঘরে চেয়ার-টেবিল আসবাব কিছুই নাই। তক্তকে মেজের উপর মাছুর পাতা। জুতা খুলিয়া ঘরে ঢুকিতে হইল । ঘরের এক কোণে কাঠের ছোট বেদীর উপর রামকৃষ্ণ পরমহংসের বাঁধানো ছবি ফুলের মালা জড়ানো ; বেদীর সম্মুখে ধূপাধারে কয়েকটি ধূপকাঠি অৰ্দ্ধেক জলিয়া নিবিয়া গিয়াছে। দেওয়ালে শ্রীচৈতন্য, বিবেকানন্দ, ঈশ্বরচন্দ্র, নানা মহাপুরুষের ছবি ও দেবদেবীর পট ঝুলিতেছে। দক্ষিণ দিকে দেওয়ালে-সংযুক্ত কাঠের তাকগুলিতে কলেজের বইগুলি সাজান । —তোমার ঘরটি ভারী সুন্দর, মন্দিরের মত মনে হয়। –এর মধ্যে সাজানোর যা সৌন্দর্ঘ্য দেখছ, সে-সব আমার