পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভণন্দ্র স্বগীয়া মনোরম দেবীর অাদ্য-শ্রাদ্ধানুষ্ঠান \్సు) করতাম মার কাছ থেকে সে খবর গোপন রাখবার জন্ত । কিন্তু তাতেও নিস্তার ছিল না। মার অভিমান ও রাগ গজে উঠত যখন তিনি শুনতেন যে র্তার কাছ থেকে কারুর অসুস্থতার কথা গোপন করা হয়েছিল । তিনি প্রায়ই বলতেন, “আমাকে ত কেউ কিছুই বলে না, আমি করব কি ক’রে কারুর জন্যে ?” যখন শরীর ভাল ছিল তথন ম! তার পুত্রকন্যাদের অস্তথবিমুখে একলা রাতের পর রাত জেগে সেব করতেন । তার কষ্টসহিষ্ণুতা আশ্চৰ্য্য ছিল । তিনি স্বজমের বা পরের দুঃখকষ্ট লাঘবের চেষ্টা চিরদিন করেছিলেন, কিন্তু নিজে শোকে দুঃখে ভগ্ন দেহ-মনের অবস্থাতেও কখনও কাতরতা দেখান নি, বা অন্যের কাছে সাহায্য বা সস্বন। চান নি । শোকে সংসারের যত মুখ ত্যাগ করেছিলেন, তা ত্যাগ করবেন বলেই করেছিলেন, গ্রহণ করবার ক্ষমতার অভাবে করেন নি। মার মনে ভীরুতা ব। দৌৰ্ব্বল্যের স্থান ছিল না । শেষ বিদায়ের সময়েও তিনি অসহ যন্ত্রণার মধ্যে হেসেছিলেন পৌত্রী ও দৌহিত্রীদের মুখের দিকে চেয়ে। ৩াদের হাতের দেওয়া ফুল যাবার কয়েক ঘণ্ট আগে নিজের চলে নিজেই পরেছিলেন ; বলেছিলেন, “নাতনীর দেওয়া শাড়াটা আমায় পরিয়ে দাও।” মাকুধের শৈশবের স্মৃতির কেন্দ্ৰ সৰ্ব্বদাই তার মা । তাই আজ সেই বিগত দিনের দিকে যখন চোখ ফেরাই, ছবির পর ছবি মনের দৃষ্টির সম্মুখে ফুটে ওঠে । তার ভিতর মায়ের মূৰ্ত্তিটাই সব চেয়ে স্পষ্ট আর বড় । সস্তানের কাছে সেগুলির মূল্য মায়ের ছবি বলেই, কিন্তু অন্তের কাছে খুলে ধরলেও তার খানিকট মূল্য আছে। যার স্মৃতির উদ্দেশ্বে শ্রদ্ধাঞ্জলি নৈবেদন করতে আমরা আজ এসেছি, তার মধ্যে কি বিশিষ্টতা rধ ছিল, ত৷ এই ছবিগুলির ভিতর দিয়ে খুব স্পষ্ট করে বোঝা যায় । যখন আমরা খুব ছোট, তখন আমাদের ভারি একটা গর্বের বিষয় ছিল, আমাদের মায়ের সৌন্দৰ্য্য । তিনি যে আর সকলের চেয়ে বেশী সুন্দরী এবং মুকেশী, এ ধারণায় কেউ আঘাত দিলে আমরা মৰ্ম্মান্তিক চটে যেতাম, সে কথা এখনও মনে পড়ে। র্তার কণ্ঠস্বরের অপূৰ্ব্ব মিষ্টতাও ছিল আমাদের আর এক গর্বের জিনিষ । কিছু বড় হবার পর মায়ের সম্বন্ধে গৰ্ব্ব করবার আর একটি জিনিষ আমরা আবিষ্কার করেছিলাম, সেটি তার সাহস । বাঙালীর মেয়ের ভীরুতার অপবাদ মা সম্পূর্ণ মিথ্যা ব'লে প্রতিপন্ন করতে পেরেছিলেন । বাবা বলেন, “তোমাদের মাকে আমি যখন প্রথম ( তাহার ১৬১৭ বৎসর বয়সে ) কলিকাতায় লইয়া আসি, তথন বাঁকুড়া পৰ্য্যন্ত বেঙ্গল-নাগপুর রেলওয়ে হয় নাই। আমরা একখানি গরুর গাড়ীতে বাঁকুড়। হইতে রাণীগঞ্জে আসিয়াছিলাম প্রায় ১৫ ক্রোশ । রাণীগঞ্জে পৌছিবার ঠিক আগেই দামোদর পার হইতে হয় । দামোদরে কখন কথন হঠাৎ বন্যা হয় -বিশেষতঃ বর্ষার প্রারম্ভে । আমিও গ্রীষ্মের ছুটির পর বর্ষার প্রারম্ভেই তাহাকে কলিকাতা আনিতেছিলাম। দামোদরে গাড়ী নামিবার পর নদীর জল অল্প অল্প বাড়িতে লাগিল। যখন নদীগর্ভে অনেক পূর অগ্রসর হইয়াছি, তখন উভয় সঙ্কট-- অগ্রসর হইলেও বিপদ না-ইহলেও বিপদ হইতে পারে। জল গাড়ীর চাকার অৰ্দ্ধেকের উপর ডুবাইয়াছে। ক্রমশঃ গাড়ীর উপরে যে খড় ও বিছানা পাতা ছিল, তাহাও ভিজিতে আরম্ভ হইল। যাহা হউক, কোন প্রকারে দ্রুত গাড়ী চালাইয়। আমরা তীরে পৌছিলাম। তাহার পূৰ্ব্বেই কিন্তু চাকা দুটা প্রায় সমস্তই ডুবিয়া গিয়াছিল ও বিছানা ভিজিয়া গিয়াছিল । আমরা ডাঙ্গায় উঠতেই দেখিলাম, বন্যা খুব বেণী বাড়িয়া গেল। মদীগর্তে আমরা দু-জন এবং গাড়োয়ান ও বলদ জোড়াটি ছাড়া আর কেহ সাহায্য করিবার ছিল না । কিন্তু তোমাদের মা বিচলিত, ভীত বা উদ্বিগ্ন হন নাই ।” ৪০ বৎসর আগে মেয়েদের পথে-ঘাটে একলা চলা অভ্যাস ছিল না, এবং তখন রেলের লোকেরা এখনকার চেয়ে অশিষ্ট ছিল।) এই সময় মা একবার পূজার ছুটিতে দুটি দুগ্ধপোন্য শিং নিয়ে চুণার যাচ্ছিলেন । ছুটির ভীড়ে বাবা ট্রেনে উঠতে/পারেন নি। কাজেই নিকটবৰ্ত্তী একটা ষ্টেশনে মাকে ষ্টেশন-মাষ্টারকে ও গার্ডকে টেলিগ্রাম করেন । মা সেই ষ্টেশনে শিশুদের নিয়ে নামেন এবং লগেজ ইত্যাদি নামান এবং বাবার অপেক্ষায় অনেক রাত্রে অনেক ঘণ্ট ষ্টেশনে বসে থাকেন। মা তাতে-ভয় পান নি। এলাহাবাদে প্রায় ২৫ বৎসর আগে যে বিরাট প্রদর্শনী হয়,