পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఆSట్ర আমরা এলাহাবাদ ছেড়ে কলকাতায় চলে এলাম । সেখানে তিন-চার বিঘা জমিওয়ালা বাড়িতে সৰ্ব্বদ চাকর-দাসী রেখেই মা’র থাকা অভ্যাস ছিল । ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্তও ইচ্ছামত ব্যয় করতে পারতেন। যদিও ঐশ্বর্ষ্যের মধ্যে তিনি ছিলেন না, তবু দারিদ্র্যের মধ্যেও কখনও তিনি থাকেন নি। কিন্তু এখানে এসে মা দারিদ্র্যের মধ্যে পড়তে হবে ধরে নিলেন। তাই প্রথম থেকেই তিনি কর্ণওয়ালিস ষ্ট্রীটে ছোট একখানি বাড়ি নিয়ে সামান্ত ঠিক ঝি ও রাধুনী রেখে সকল বিষয়ে ব্যয়সংক্ষেপ ক'রে চলতে লাগলেন । যাতে স্বামীকে ঋণে জড়িত হ’তে না হয়, তাই তিনি এত সাবধানে চলতেন। কিন্তু এই ব্যয়সংক্ষেপের কষ্ট তার জীবনে তাকে কোনো দুঃখষ্ট দিতে পারে নি । তিনি আপনার প্রিয়জনদের শান্তি, সম্মান ও শিক্ষাকে আর্থিক সুখের চেয়ে অনেক বড় মনে করতেন। তাই যপন ওই বাড়িতেই আফিস খুলে বাবার নিজস্ব কারবার সুরু হ’ল, তখন সংসারের সমস্ত কৰ্ত্তব্যের উপর ম৷ আফিসের যাবতীয় কাজ তদারক করতে আরম্ভ করলেন । প্রথম যপন প্রয়াগে "প্রবাসী’ বাহির হয় এবং পরে মডান রিভিয়ু বাহির হয় তখন থেকেই মা আফিসের কাজে কিছু কিছু সাহায্য করতেন। এমন কি তার সস্তানরা একটু বড় হ’তে-না-ক’তেই তাদের দিয়েও কাগজের মোড়কে টিকিট লাগানে, দড়ি বাধা প্রভৃতি অতি ছোট কাজগুলি করিয়ে নিতেন । বাবা বলেন, যে, আমাদের মায়ের ঈশ্বরের উপর নির্ভর, সত্য ও দ্যায়ে অল্পরাগ, দেশভক্তি ও র্তার ( আমাদের বাবার ) উপর বিশ্বাস না থাকলে পত্রিকা-পরিচালনরূপ ব্যয়সাধ্য ও সঙ্কটবহুল কাজে তিনি হাত দিতে পারতেন না। কলকাতায় এসে আফিসের সমস্ত হিসাব দেখবার ভার মা নিলেন। প্রতিদিন পাচটার পর ম্যানেজারের মত মা খাতাপত্র সমস্ত বুঝে নিতেন, এ এদিক-ওদিক হবার উপায় ছিল না। প্রায় দশ বার বৎসর ধীরে ম৷ প্রত্যহ প্রবাসী আফিসের এই হিসাব দেশও চেক করার কাজ করে এসেছেন। অনেক কৰ্ম্মচারী মা'র এত কড়া তদারকে বিরক্ত পৰ্য্যস্ত হতেন। একই কাজের জন্তে দু-বার বিল করে টাকা নেবার চেষ্টা মা যে ধরে ফেলতেন, এরূপ সত্য ঘটনার কথা বাবার কাছে শুনেছি। প্রায় ১৬ বৎসর প্লেৰাসী ఇతిes পূৰ্ব্বে তার স্বাস্থ্যভঙ্গের পর থেকে তাকে আর আফিসের কোন সংস্রব রাখতে দেওয়া হয় নি। মাকে এবং বাবাকে আমর। জ্ঞান হয়ে পৰ্য্যন্ত স্বদেশী জিনিষ ব্যবহার করতে দেখেছি এবং সেই জন্যই বিলাতী মিলের ধুতি শাড়ী আমাদের কোনো দিন পরা অভ্যাস হয় নি। আমরা যতটা জানি, মা শেষ দিন পর্য্যন্ত ঔষধ ছাড়া কোনো বিদেশী জিনিষই কখন ব্যবহার করতেন না। বাঁকুড়া জেলার তসরের শাড়ী, বাকুড়ার বাসন, এই সব র্তার অত্যন্ত প্রিয় ছিল । রাখীবন্ধনের সময় মা আমাদের সঙ্গে বসে নিজে স্বদেশী রেশমে রার্থী তৈরি করে বালিকার মত হান্তমুখে বন্ধুবান্ধবের বাড়ি বাড়ি বেঁধে বেড়াতেন। স্ত্রীপুরুষ কিছু বিচার করতেন না, সকলকেই পরমাত্মীয়ের মত রার্থীর স্থত| পরিয়ে দিতেন। মাকে সারাজীবনে নিজের জন্য নিজে দু-চার থানার বেশী সৌখীন কাপড় কিনতে দেখি নি। অপরকে ভাল কাপড় কি জিনিষ কিনে উপহার দিতে কিন্তু তিনি খুব ভালবাসতেন। স্বদেশী আন্দোলনের সময় এক জন মুসলমান ভদ্রলোক বাঁকুড়ায় স্বদেশী প্রচার করবার জন্যে আমাদের বাঁকুড়ার বাসা-বাড়িতে অতিথি হয়েছিলেন । তার আহারাদির পর চাকরের বলল, “আমরা এটে বাসন মাজব না।” মা বললেন, "তোমরা না মাজ মেজো না, আমি মাজছি।” বলে নিজেই এটো বাসনগুলো তুলে আনলেন। স্বদেশী আন্দোলনের সময় যখন-তখন শোনা যেত, আজ আমাদের বাড়ি খানাতল্লাস হবে, কাল বাবাকে গ্রেপ্তার করবে ইত্যাদি। এই সমস্ত ভয়ে মা বিচলিত হতেন না । বাবা বলেন, সত্য কথা বলে বা লিখে তার ফলের সম্মুখীন হ'তে না চাওয়ার ভীরুতা মা দেখতে পারতেন না। বাবার গ্রেপ্তার ও বিচারাধীন হওয়ার সম্ভাবনা অনেকবার হয়েছিল, মা সে উদ্বেগ দৃঢ়চিত্তে সয়েছেন। কিন্তু মনে হয় এই সকল দিন হতেই ভিতরে ভিতরে উদ্বেগ মা’র স্বাস্থ্য নষ্ট ক’রে দিতে লাগল। বন্ধুভাবে গোয়েন্দা পুলিস প্রায় দিবারাত্র বাবার উপর কড়া নজর রাখত, অন্ত ভাবে ত রাখতই। মা’র মন অতিরিক্ত সন্দেহে সজাগ হয়ে উঠল, সকলকে আপনার জন ব'লে আর বিশ্বাস করতে পারতেন না। ইতিমধ্যে হঠাৎ একদিন একটা সর্দির ওষুধের পাচনের