পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাজ দবেলেডোনার শিকড় মুনীর দোকান থেকে ভুল ক’রে আনায় এবং বাবা সেই পাচন পাওয়ায় পুলিস বাড়ির চক্রাণীর উপর তন্ত্রী করে। পাচনটা গাওয়ার ফলে বাবা কিছুদিন মাথার অমুখে ভুগলেন। মায়ের আশঙ্কা ভয়ানক বেড়ে গেল । তিনি সব কাজের উপর আবার স্বহস্তে রন্ধন মুরু ক'রে দিলেন, ঠিক করলেন প্রিয়জনদের চাকরদাসীর সেবার মধ্যে আর ছেড়ে দেবেন ন । কারণ র্তার সন্দেহ হ’ল, কেউ ইচ্ছা করেই বাবাকে বিষ দিয়েছে । পরের জীবনে যদিও সকলের জন্য এমন করে আর করতে পারেন নি, তবু অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থাতেও মৃত্যুর তিন-চার মাস আগে পর্য্যস্তও অধিকাংশ দিন তিনি নিজের জন্ত নিজেই রন্ধন করেছেন । চাকরদাসীর রান্ন প্রায় কোনোদিনষ্ট গান নি, আত্মীয়-স্বজনের রান্না প্রয়োজন হ’লে গেয়েছেন । তিনি সহজে কাহারও সেবা গ্ৰহণ করেন নি। মৃত্যুর দিনেও নিজের কাজ সব নিজে করতে চেয়েছেন এবং কিছু কিছু করেছেন। অর্থ কি সেবা তিনি পরমাস্ত্রীয়ের নিকটও সহজে নিতেন না। মা’র জীবনে প্রিয়জনের বিচ্ছেদ ও বিচ্ছেদ-আশঙ্কা যত ক্ষতি করেছে এমন আর কিছু করে নি। ইতিপূৰ্ব্বেত তিনি দু-বার পুত্ৰশোকের বেদন সহ করেছিলেন। তবু তিনি কর্তব্যবোপে সৰ্ব্বদাই সাময়িক বিচ্ছেদের ব্যবস্থা নিজে করে দিয়েছেন । স্বদেশী আন্দোলনের এই উদ্বেগের মধ্যেই তার জ্যেষ্ঠ পুত্রের শিক্ষার জন্ত বিদেশে যাবার প্রয়োজন হ’ল। সংসারে উদৃত্ত টাকা ছিল না। তৰু মা বিধাতার মঙ্গল ইচ্ছায় এবং নিজের সর্বজয়ী শুভকামনায় বিশ্বাস করতেন ব’লে অল্প বয়সের সস্তানকেষ্ট ইউরোপে পাঠিয়ে দিলেন । বিদেশের পূরচ সমস্ত চালাতে হবে ব’লে নিজেদের ব্যয় আরও সংক্ষেপ করলেন । প্রয়োজন হ’লে নিজের অলঙ্কারও বিক্রয় ক’রে দিয়েছেন। এদিকে সন্তানবিরহ দীর্ঘ হতে দীর্ঘতর হয়ে উঠল, ইউরোপে মহাসমর বেধে মার উদ্বেগ বেড়ে গেল ; কিন্তু তারই মধ্যে অন্ত সন্তানদের নানা জায়গায় রেখে শিক্ষা নিতে হ’ল ; সৰ্ব্ব কনিষ্ঠটি রইল শান্তিনিকেতনে এবং মধ্যম পুত্র বেঙ্গল লাইট হস ক্যাম্পে। মা প্রায় দু-বছর অধিকাংশ দিন স্বামী পুত্ৰকস্তা ছেড়ে থাকতেন। কিন্তু স্বগীয় মনোরম দেীর অনন্ত-শ্রাদ্ধানুষ্ঠান \స్క్రి এই দারুশ দুঃখ ও উদ্বেগের মধ্যেও তিনি ছেলেদের শিক্ষার কোনো ব্যবস্থার বদল করতে বলতেন না। মনে হয়, তাকে এতখানি বিচ্ছেদ-বেদনা পেতে দেওয়া ভুল হয়েছিল। এমন না হ’লে হয়ত মাত্র পন্থতাল্লিশ বৎসর বয়সেই তার স্বাস্থ্য চিরকালের মত নষ্ট হয়ে যেত না । হয়ত তিনি নষ্ট স্বাস্থ্য ফিরে পেতেও পারতেন, যদি না এর উপর কনিষ্ঠ সস্তানের চির-বিচ্ছেদের ব্যথা অকস্মাং বজ্রপাতের মত র্তার স্নেহদুৰ্ব্বল বিরহ-কাতর বুকে এসে লাগত। জ্যেষ্ঠ পুত্র ইউরোপ থেকে ফিরলে তার মুথে যে অপৰ্ব্ব আনন্দজ্যোতি ফুটে উঠেছিল, তা চিরদিনের মত অন্ধকার হয়ে গেল যখন তার এক মাস পরেই আমাদের ছোট ভাই প্রসাদ মা'র কোল ছেড়ে চলে গেল। এর পরেও কিন্তু নিজের খুব অনুস্থ অবস্থাতেও তিনি মধ্যম পুত্রকে কেন্থিজে পাঠিয়েছিলেন । মায়ের ভিতর সত্যকার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল । অপরের সঙ্গে অতিরিক্ত মেলামেশা করা, কিংবা গুণীজনের, ধনীজনের, ও বিখ্যাত লোকদের সঙ্গে জোর ক’রে আলাপ করবার চেষ্টা করা অথবা নিজের সম্পদ যা আছে তার থেকে বেশী দেখাবার স্পৃহা প্রভৃতি দুর্বলতা তার একেবারেই ছিল না। নিজের ও নিজের পরিবারবর্গের যথার্থ বন্ধুবান্ধবদের নিয়েই তার জগং গঠিত ছিল। অথচ তিনি পরনিন্দ, পরচর্চ, বা অপেক্ষাকৃত দরিদ্র ও মুর্থ লোকদের প্রতি তাচ্ছিল্যের ভাব দেখিয়ে সময় অতিবাহন করতে মোটেই পারগ ছিলেন না। পরোপকার করলে নিঃশব্দে করতেন, কাহারও প্রতি রাগ বা ঘৃণার কারণ ঘটলে তার সংস্রব নিঃশব্দেষ্ট ত্যাগ করতেন। নিজের বাড়তি সময় বট ও খবরের কাগজ পড়, ছবি আঁকা সেলাই কিংবা গল্প কবিতা লেখা, কি গান বাজনায় কাটাতেন। নিজের তার একটা মনের জগৎ আলাদা ছিল, যেখানে যে সে ঢুকতে পারত না। কিন্তু অহঙ্কার ও আত্মগরিমাও সেখানে ছিল না। তিনি তার লেখার কি দোষ আছে ব’লে দেবার জন্যে নিজের কন্যাদেরও প্রায় অন্তরোধ করতেন। এতে তিনি কোন লজ্জার কারণ দেখতে পেতেন না। স্বাধীনতা প্রাণের হ’লে মাক্স যে ভাবে চলে, মা সেইভাবে চলতেন। মা কোন প্রথা বা রীতির দোহাই দিয়ে কোন কাজ