পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سیاه به প্রবাসী אס8פאמי করতেন না। ভাল বুঝলে তাকে ভাল বলতেন, মন্দ বুঝলে মন্দ বলতেন, চিন্তা ও কাৰ্য্যে পরের নিয়ম তিনি মানতেন না । যে-সব কাজে বাংলার মা বাঙালীকে গত কয়েক শতাব্দী ধ'রে ক্রমাগত যেতে বারণ ক'রে এসেছেন—প্রধানতঃ আত্মরক্ষামূলক কারণ দেখিয়ে—আমাদের মা সে-জাতীয় বারণ কোন বিষয়ে আমাদের করেন নি। বাল্যকাল থেকেই সাহসের কাজে যেতে আমরা মায়ের অনুমতি পেয়েছি । যুদ্ধের সময় মা তার মেজছেলেকে সৈন্যদলে ভৰ্ত্তি হতে উৎসাহই দিয়েছিলেন। এখনও তার মৃত্যুর কয়েক দিন আগেও তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন সে মুষ্টিযুদ্ধ অভ্যাস রাখে কি না । পরমুখাপেক্ষী না হওয়া, কোন অপমান বরদাস্ত না করা, বিপদে কাতর না হওয়া প্রিয়জনকে সকল অমঙ্গল হ’তে রক্ষা করা, ও নিজের প্রত্যেকটি মুহূৰ্ত্ত কাজের আনন্দে যাপন করা মায়ের কাছে যথার্থ জীবন ছিল । উচ্চ আকাঙ্ক্ষার আলেয়ার আকর্ষণে যারা নানা রকম চেষ্টা করে, মোহমুক্ত মানুষ কাৰ্য্যশক্তি ব্যবহার করে চললে তাদের চেয়ে উপরের স্তরে থাকৃতে পারে। মায়ের আমাদের যশ কি ঐশ্বর্ষ্যের মোহ ছিল না। অনাবিল আনন্দে তিনি যা করতেন করেছেন । পারে নি। জয়ের অগ্নিকণা তার প্রাণের ভিতর জন্মাবধি জলন্ত ছিল । জীবন তার সেই জন্য শোকে আনন্দে রোগে স্বাস্থ্যে বিজয়-অভিযানের মত সগৌরবে অতিবাহিত হয়ে গেছে । পৃথিবীতে কিছুই হারায় না। মা’র জড়দেহ হারায় নি, আকাশে বাতাসে জলে মৃত্তিকায় মিশে গিয়েছে । তেমনই র্তার আত্মার সৌন্দর্য্যও অক্ষয়। এই চিন্তাই আমাদের সাত্বনা দিক তার বিচ্ছেদ-দুঃখের মধ্যে। ষোল বৎসর কনিষ্ঠ সস্তানের বিরহে পৃথিবীর সকল স্বথ—এমন কি প্রাণধর্শ্বের অধিকাংশ প্রয়োজনও—ছেড়ে দিয়ে তিনি তার অন্য সন্তানসন্ততিদের বুক পেতে রক্ষা করবার জন্যই যেন বেঁচে ছিলেন। র্তার বিশ্বাস ছিল এবং সে বিশ্বাস সত্য বলেই মানতে ইচ্ছা করে, যে মা’র সর্বজয়ী শুভ ইচ্ছার, মা’র চিরজাগ্রত কল্যাণদৃষ্টির তলে সস্তানের কোনো অকল্যাণ হতে পারে না। তিনি নিজ ব্রত উদযাপন ক'রে চলে গেছেন। আকাশ জুড়ে আজও তার প্রসন্ন, চিরহাস্যময় কল্যাণদৃষ্টি আমাদের উপর ছড়িয়ে পড়ছে, সমস্ত প্রাণ দিয়ে যেন ত অনুভব করতে পারি। আকাশে বাতাসে মৃত্তিকায় পুষ্পপল্পবে জলস্রোতে সমস্ত পৃথিবীতে যিনি অণুতে অণুতে মিশে গিয়েছেন সেই মাকে জলে স্থলে অন্তরীক্ষে সকলের ভিতর আনন্দেই বহু ত্যাগ করেছেন। এই জন্যে বহু শোক-দুঃখের যেন চিরদিন মনে রাখি । যেন আজীবন তার আত্মার ভিতরেও তার হাসি মান হয় নি, অভাব তাকে ম্ৰিয়মাণ করতে অবিনশ্বর মাধুর্য্যে বিশ্বাস রাথি । পরলোকগত মনোরমা দেবীর শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান ঐক্ষিতিমোহন সেন পুরাতন একটা কথা আছে— অনুভব না করিলে শ্ৰাদ্ধাদি সকল অনুষ্ঠানই অর্থহীন ভূতে ভব্যং প্রতিষ্ঠিতম। শ্ৰাদ্ধ অর্থ যাহা শ্রদ্ধার উপর প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ অতীতের মধ্যেই ভবিষ্যৎ প্রতিষ্ঠিত । অর্থাৎ অতীতের সঙ্গে ভবিষ্যতের কোনো বিরোধ নাই। অতীতের মধ্যেই ভবিষ্যতের প্রতিষ্ঠা। উভয়েই উভয়ের সঙ্গে যুক্ত। তেমনি ইহলোকের সঙ্গে পরলোকের কোনই বিরোধ নাই, ইহলোক ও পরলোক উভয়ে পরস্পরে যুক্ত। এই যোগ চতুদিকে আলোক থাকিলেও, নয়ন-বিনা আমরা তাহ পাই না। ধ্বনি যদি আসে, তবে তাহা গ্রহণ করিতেও কর্ণ চাই । তেমনি পরলোকের যে সত্য, তাহ অল্পভব করিতে চাই শ্রদ্ধা। ইহলোকের ও দেহের সীমাকে অতিক্রম করিতে পারে একমাত্র আমাদের শ্রদ্ধা । কাজেই প্ৰদ্ধ