পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳՖն অগত্যা স্বীকার করিতে হইল যে জন্মদিনে দগ্ধ বেগুন খাওয়া শাস্ত্রবিরুদ্ধ ! কিন্তু আশ্চৰ্য্য রাইচরণের স্মৃতি-শক্তি— কবে কথায় কথায় কি কথা উল্লেখ করিয়াছিলাম ওর ঠিক মনে আছে । বলিলাম-—যা বলছিলাম রাইচরণ এই তো লম্বা গরমের ছুটি, চলো না তীর্থ-টার্থ করে আসি দু-জনে—বৃন্দাবন, মথুরা, পুষ্কর, সাবিত্ৰী— в রাইচরণ উঠিয়া বসিল—চলুন কালই মশাই, আমি এখনই রাজি–সত্যি তো ? —সত্য না ভো কি মিথ্যে ? বলিলাম—আজক্ট গেলে ভাল হ’ত—শুধু ইস্কুলের ছুটির জন্তে যা দেরি, কাল তো ছুটি, চলো পরশু বেরিয়ে পড়ি— রাইচরণ বলিল--বেশ । তার পর পানিক থামিয়া বলিয়া উঠিল । আমি একটা ফন্দি এটেছি মশাই – বলিলাম—কি, শুনি ? ---সব্বাই তো বলে মশাই—কামিথ্যেতে নাকি লোকদের ভেড়া ক’রে রাখে, হেন-তেন কত কি !...আমার একবার দেখতে ইচ্ছে করে মশাই, বুঝলেন, দেখেই আসি না সত্যি না মিথ্যে-—কি বলেন ? প্রশ্নটি করিয়া রাষ্টচরণ কৌতুহলী মেত্রে আমার দিকে চাহিয়া রহিল । ইহার কি উত্তর দিব ? মনে মনে বলিলাম —ভেড়া হওয়ার বাকী আছে কি ? অর্থের দাস, ওপরওয়ালার হুকুম তামিল করি। স্বাধীনভাবে এতটুকু কিছু করিতে হইলেই চাই সই। মেষ হওয়াও ইহা অপেক্ষা যে অনেক ভাল । হাসিয়া জবাব দিলাম—বেশ তো, দেখেই আসা যাকৃ স্বচক্ষে--সত্যি কি ন— ক্রমে অনেক রাত্রি হইয়াছে। থাটের উপর ঘুমাইয়াছিলাম—হঠাৎ চট্‌ করিয়া জাগিয়া উঠিয়াছি। নীচে মেঝের উপর রাইচরণ শুইয়া। মনে হইল ঃ রক্তাক্ত ছেলেটি আবার আসিতেছে। টপ টপ করিয়া রক্তের ফোটাগুলি মেঝের উপর পড়িতেছে। কাটা মাথাটা এক হাতে চাপিয়া ছেলেটি আমার দিকে আসিতেছে । রক্তে ঘর ভাসিয়া গেল ! নিস্তদ্ধ ঘরে কেমন একটা গুঞ্জন উঠিল ; প্রৰণসী >\oo. রাত্রের আবহাওয়া যেন সেই স্বরে উন্মত্ত হইয়া গিয়াছে। চোখের সামনে ছায়ামূৰ্ত্তির রক্তাপুত অবয়ব যেন বাস্তব হইয়া উঠিল। সব মিথ্যা-সত্য নয়, সত্য নয়—মনের মধ্যে হাজার সংশয় সন্দেহও আমাকে এতটুকু স্থির-বুদ্ধি করিতে পারিল না । মনে হইল---কি যেন উহার আমাকে বলা হয় নাই। --রাত্রি হইলেই তাই আসে—কিছু বলিবার জন্ত কাছে আসিয়া দাড়ায়—কিছু অভিযোগ, কিছু দাবি, নয়ত কৃতজ্ঞতা --- মনে পড়িল সমস্ত ঘটনাট ; কেমন করিয়া সিড়ি হইতে পড়িয়া গিয়াছিল -পড়িয়া রক্তাক্ত মেঝের উপর কেমন করিয়া ছটফটু করিতেছিল - হঠাৎ ছেলেটি একেবারে বিছানার কাছে আসিয়া - দাড়াইতেই চীংকার করিয়া উঠিয়াছি—রাইচরণ—রাইচরণ--- - আজ্ঞে—-বলিয়া রাইচরণ উঠিয় দাড়াইয়াছে। আমার তখন কথা বন্ধ । কি হইতে কি হইয় গেল, যেন ভোজবাজি । ভয়, লঙ্গ, বিস্ময় সব মিলিয়া আমাকে নিৰ্ব্বাক করিয়া দিল । সেই অন্ধকার ঘরের মধ্যে আমি যেন তখনও সত্য ব্যাপারটি উপলব্ধি করিতেছিলাম—চোখ আমার লক্ষ্যশূন্ত--শিরায় শিরায় রক্তের প্রচণ্ড গতি-গা বহিয়া ঘাম ঝরিতেছে--- রাইচরণ আলো জালিল। বলিল—আনছি--- অর্থাৎ তামাক সাজিয়া আনিতেছি—বলিয়া বাহির হইয়া গেল। আনুক --আজ আর ঘুম আসিবে না—আজ রাত্রিট জাগিয়া কাটাইতে হইবে। হারিকেন লইয়া বারান্দায় আসিলাম । আসিয়৷ চোখে মুখে ভাল করিয়া জল দিলাম। হু হু করিয়া দক্ষিণ দিক হইতে হাওয়া আসিতেছে --ইজি-চেয়ারের উপর বসিয়৷ পড়িলাম। রাত্রির দুঃস্বপ্নের পর যেন প্রভাতের প্রসন্নত। অল্পভব করিতেছি-- 蕊 রাইচরণ তামাক সাজিয়া দিয়া গেল— । বলিলাম--তুমি শোও গে যাও, আমি খানিক পরে যাচ্ছি। রাইচরণ বলিল—দেখবেন, ঠাণ্ড লাগাবেন না আবার—ষে শরীর আপনার--- রাইচরণ যেন আমার গুরুমশাই। দণ্ডে দণ্ডে