পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিনেন্দ্রনাথ শ্ৰীঅমিতা সেন, বি-এ শেলী একটি ছোট কবিতায় বলেছেন— "Music, when soft voices die, Vibrates in the memory, Odours, when sweet violets sickon Live within the sense they quicken. গুণীর গান যুখন থেমে যায়, কোমল স্বরের মীড়গুলি নীরব হয়ে যায়, স্বরের রেশটি তখনও শ্রোতার প্রাণের মধ্যে অন্সরণিত হতে থাকে। ফুল ঝরে যায়, সৌরভ তখনও মনকে আকুল করে । এই পৃথিবীর প্রাঙ্গণে বহু জনের সঙ্গেষ্ট ত আলাপ পরিচয় হয়, কিন্তু দৈবাৎ এক-একটি মানুষের দেখ। মেলে—যাদের হৃদয়ের সৌরভ, তারা দূরে চলে গেলেও, প্রাণকে নিবিড় অনুভূতিতে পূর্ণ করে রাখে। আমাদের দিনা ছিলেন এম্‌নি এক জন মানুষ। যে কেউ তার কাছে গিয়েছে তাকেই তিনি স্বতঃশ্রত নিবিড় স্নেহে আপ্লুত করেছেন। ছোট-বড় ধনী-দরিদ্র জ্ঞানী-গুণী অখ্যাত-অজ্ঞাতের ভেদ সে স্নেহের কাছে ছিল না । সহজে ভালবাসবার এক আশ্চৰ্য্য দুলভ ক্ষমতা নিয়ে তিনি এসেছিলেন ; যতদিন আমাদের মধ্যে ছিলেন, অরুপণভাবে অযাচিতভাবে বিলিয়ে গিয়েছেন তার নিৰ্ম্মল মধুর অনাবিল ভালবাসা । তাই আজ তার অভাব আমাদের কাছে এমন গভীর, এমন নিবিড়, এমন প্রত্যক্ষ হয়ে দেখা দিয়েছে । দিনেন্দ্রনাথের অতি নিকটে যাবার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল । সঙ্গীতশিক্ষা নিয়েই এই পরিচয়ের স্বরু, তার পর সেই পরিচয় তার স্বাভাবিক স্নেহের আকর্ষণে অতি অল্পকালের মধ্যেই আন্ধীয়তায় পরিণত হয়েছে। যদিও জানি, যতখানি তার কাছে পেয়েছি তার কিছুই প্রকাশ করার শক্তি আমার নেই, তবু তার সম্বন্ধে আলোচনা করে তার স্নেহের মধ্যে, তার অতীত স্থতির মধ্যে নিজেকে শল্পভব করে নেবার একটু সাধন, একটু তৃপ্তি আছে। প্রথম যখন বোলপুরে বাই, আমার বয়স তখন নয় বৎসর মাত্র। দিনাদার বিরাট শরীর দেখে, উার স্বগষ্ঠীর কণ্ঠস্বর শুনে তাকে একটু ভয়ে ভয়ে এড়িয়েই চলতাম। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারা গেল যে মানুষটি নিতান্তুষ্ট আমাদের দলের লোক । সেই সময় তিনি শিশু-বিভাগের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে “বাল্মীকি-প্রতিভা” গীতাভিনয় করাচ্ছিলেন। দেখেছি তিনি শিশুর দলে শিশু হয়ে মিশে বেতেন. কোথাও বাধত না । শিশুরাও তাকে চিনে ফেলেছিল । আমরা ছোট ছেলেমেয়েদের দল তার কোলের কাছে ব’সে গান শিখতাম, দস্থ্যদলের গানগুলো ছেলেরা যেমন উপভোগ করত তিনিও তেমনই মনেপ্রাণে উপভোগ করতেন, এবং অন্তের কাছেও উপভোগা করে তুলতেন। দক্ষাদলের সঙ্গে লম্ফঝম্ফ ক'রে তাদের যখন অভিনয় শেখাতেন, তখন তাকেও একটি বিরাট শিশু বলেই মনে হ’ত, আবার বালিকার পাঠ শেখাবার সময়ে তার অপূৰ্ব্ব কণ্ঠস্বরে ও করুশ রসের অভিনয়ে সকলে মুগ্ধ হয়ে যেতেন। এই সময়ে আশ্রমবাসী আবাল-বৃদ্ধ প্রত্যেকেই, “শিশু-বিভাগের ঘরে দিনা এসেছেন,” এই খবরটি কানে গেলে আর স্থির থাকৃতে পারতেন না, কাজ ফেলে ছুটে আসতেন। এই গীতিনাট্যটি একমাত্র তারই শিক্ষার গুণে স্বঅভিনীত হয়েছিল । এই অভিনয় হয়ে যাবার পর আমি দিনেন্দ্রনাথের কাছে নিয়মিতভাবে গান শিখতে আরম্ভ করি। আরও অনেকেই র্তার কাছে গান শিখতে আসতেন এবং সেই সূত্রেই তার সংস্পর্শে এসে র্তার অরুত্রিম স্নেহ লাভ করেছেন। গান শেখবার সময়ে দিনেন্দ্রনাথ সাধারণতঃ কোনও যন্ত্র ব্যবহার করতেন না । গান গেয়ে যেতেন, আমরা দুই-একবার শুনে পরে তার সঙ্গে সঙ্গে গানটি গাষ্টতাম। যত ক্ষণ পৰ্য্যন্ত গানের স্বরের প্রত্যেকটি স্বন্ধতম কাজ আমাদের সম্পূর্ণভাবে আয়ত্ত না হ’ত, তত ক্ষণ কিছুতেই তিনি নিরন্ত হ’তেন না। সকল ছেলেমেয়ের শেখবার ক্ষমতা সমান ছিল না, কিন্তু কখনও তার ধৈৰ্যচুক্তি ঘটতে দেখি নি। কিছুতেই যেন তার