পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छल्न দিনেত্ৰজমাখ १३१ স্বৰ্গীয় দ্বিজেন্দ্রনাথের মতন তিনিও রাশি রাশি ফুল ফুটিয়ে দক্ষিণে হাওয়ায় সব ধরিয়ে দিতেন—কিছুই সঞ্চয় করতেন ন, একটি কুঁড়িও না। কত অজস্র কবিতা তিনি লিখেছেন —আমরা তার হাতবাক্স খুলে টেনে বার করেছি—তখন হয়ত পড়ে শুনিয়েছেন। কিছুদিন পরে জিজ্ঞাসা করলাম, "কই দিনা, আপনার সেই কবিতাটা ?” নিশ্চিন্ত মুখে বললেন, “চিড়ে ফেলে দিয়েছি ত।” গুনে আমরা খুব রাগ করতাম । দু-একটি কবিতা রয়ে গেছে—বাংলা কাব্যসাহিত্যে অতুলনীয়। বই ছাপাতে বললে বলতেন, “দেখ, ছাপানোর মোহ একটা বডড নেশা,—ওর মধ্যে না-যাওয়াই ভাল। ছাপিয়ে কি হয় ? এই ত, আমি পড়লুম, তুই ওনলি, বেশ হ’ল, আবার কি ?” নিজের রচনা সম্বন্ধে দিনেন্দ্রনাথের এই পরিপূর্ণ আসক্তিঈনতায় রবীন্দ্রনাথের “হে বিরাট নদী”র কয়েকটি চমৎকার লাইন মনে করিয়ে দেয়:— “কুড়ায়ে লও না কিছু, কর ন৷ সঞ্চয়, নাহি শোক নাহি ভয়, পথের আনন্দ বেগে অবাধে পাথেয় কর ক্ষয় যে মূহূর্তে পূর্ণ তুমি সে মুহূৰ্ত্তে কিছু তব নাই তুমি তাই পবিত্ৰ সদাই । একদিন দেখি আলমারীতে নানা বইয়ের মধ্যে “বীণ" ব’লে ছোট একখানি বই । তার ইতিহাসও একদিন শুনলাম, ছেলেবেলায় নাকি নিতান্ত দুৰ্ম্মতিবশতঃ ওই কাজটি ক'রে ফেলেছিলেন। তার পরে বোধোদয় হ'লে, একদিন শাস্তিনিকেতন লাইব্রেরীতে গিয়ে যেখানে যত “বীণ” ছিল সব একসঙ্গে করে আগুন ধরিয়ে দিলেন। ওই একখানি কেমন ক'রে লুকিয়েছিল। ভাগ্যক্রমে আমি সেটি টেনে বার করলুম এবং বলাই বাহুল্য, অধিকার করলুম। সেই “বীণ" এখনও আমার কাছে রয়ে গেছে, তার ঝঙ্কার কাব্যরসিককে মোহিত করবে। দিনেশ্রনাথের স্বরচিত গানগুলি স্বরের অভিনব মধুৰ্য্যে ও বৈচিত্র্যে বাংলা গানের ভাণ্ডারে এক অপরূপ দান। ষে বিপুল প্রতিভা নিয়ে তিনি এসেছিলেন, যদি প্রকাশের অবসর দিতেন, তবে তার সমতুল্য কবি ও সঙ্গীত-রচয়িত बांश्ज cनरल ८वनै षाकृङ न । किरू डिनि ऊँीब्र आकर्ष প্রতিভাকে লুকিয়ে রাখলেন সঙ্গীতচর্চ ও স্বরলিপিলিখনের অন্তরালে। সারা জীবন দিয়ে রবীন্দ্র-সঙ্গীতের সাধন ক’রে গেলেন। আজ যে রবীন্দ্রনাথের গান বাংলা দেশে এবং বাংলার বাহিরেও এত অজস্র প্রচার হয়েছে এর গৌরব দিনেন্দ্রনাথেরই, আর কারও নয়। কবিগুরু ত গান লিখে শিখিয়ে ছেড়ে দেন ; মনে ক’রে রাখা বা প্রচারের দায়িত্ব তীর নয়। এই গানের জন্য সমস্ত বাংলা দেশ দিনেন্দ্রনাথের কাছে ঋণী। সঙ্গীতভারতীর পূজাবেদীতে নিজেকে নিঃশেষে আহুতি দিয়ে গেলেন এই ভক্ত পূজারী। আনন্দের উৎস ছিলেন তিনি, গানের ঝরণাতলায় খেলা করে তার দিন গেছে। তার জীবনের স্বরটি তীর এই একটি গানেই মূৰ্ত্ত হয়ে উঠেছে— “বলা যদি নাহি হয় শেষ তাহে নাহি মোর দুঃখলেশ । খেলেছি ধরার বুকে এই স্মৃতি বহি মুখে ভাসাবে তরণী লখি সেই অক্সানার দেশ। কুর যদি নাছি পাই খুজি, আমার বেদন লছ বুকি , নয়ন ভরিয়া দেখি ভাবি কি মধুর এ কী নিয়ে যাবে। প্রাণ ভরি তোমার সুয়ের রেশ " তিনি ছিলেন গানের রাজা। যে-দেশে গান কখনও খামে না, হাসি কখনও মলিন হয় না, সেই নিষ্কলঙ্ক স্বচ্ছ আনন্দের দেশে, মধুরতর গানের রাজ্যে তিনি চলে গেছেন। শোক করব না তার জন্তে। তার সেই সদানন্দ হাস্যময় দীপ্যমান মুখখানি আর কখনও দেখতে পাব না। তার মধুর স্নেহময় কণ্ঠস্বর আর কখনও কানে বাজবে না, তার কাছে বসে আর কখনও গান শিখব না, এ কথা ভাবলে মন অবসর হয়ে পড়ে। কিন্তু যতখানি পেয়েছি, এই কি কম সৌভাগ্য ? কেবলই দিয়েছেন, ঝরণার মত উচ্ছলিত আনন্দের বেগে কেবলই বিলিয়ে দিয়েছেন, কিছু বাকী রাখেন নি, বিনিময়ে কিছু ফিরে চান নি। এমন একটি আশ্চর্ঘ্য মানুষের এত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে এসেছিলামলেই আনন্দের স্বতি পথের সাল হয়ে রইল। ।