পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বপ্ন শ্রীপ্রমোদরঞ্জন সেন ছয় বংগরের মঞ্জু সকালবেলা রোদে বসিয়া ঠক্ ঠক্‌ করিয়া কঁাপিতেছিল আর মাঝে মাঝে চীৎকার করিয়া বলিতেছিল, “হুদিরার—খবরদার—ডোন্ট টকৃ—ভাগে—” জর তাড়াইবার যে অপূৰ্ব্ব উপায়টা কালই সে মেজদাদা মুকুলের কছি হইতে আয়ত্ত করিয়াছে আজই তাহার প্রয়োগ করার প্রয়োজন হইতেছিল। ওঘর হইতে বড়মা ডাকিয়া বলিলেন, “ওরে ও মঞ্চ, ওরে ও মাণিক, যা রে ঘরে যা । এই আমি আসছি, এই আমি এলুম বলে ।” তরকারী-কোটা তখনও শেষ হয় নাই, জু-বেলারটা কুটিতে হইবে, এদিকে ছেলেটার জর আসিয়া পড়িল । এত ঘন ঘন জর হয় কেন কে জানে। ছেলের মা’র কিন্তু এদিকে মোটেই নজর নাই, বড়মার উপর ছাড়িয়া দিয়াই সে থালাস । ছেলেমেয়েগুলির সঙ্গে যেন তাহার কোন সম্পর্কই নাই । ছোটর দল কোথা হইতে চুটিয়া আসিয়া ডাকিল, “ওমা, মা, এই নাও তোমার চিঠি এসেছে।” “কই দেখি।” মা ঘর হইতে বাহির হইয়া আসিলেন, চিঠিখানা উণ্টাইয়া-পাটাইয়া দেখিয়া বলিলেন, “আমার চিঠি নয় রে, বড়মার, দিয়ে আয় ।” ছেলের দল আশ্চর্য্য হইয়া গেল, তাহারা জানিত মা-দেরই শুধু চিঠি আসে। বড়মাদেরও েঠাকুরমীকে ইহার বড়মা বলে ) ষে আবার চিঠি আসিতে পারে ইহা তাহদের ধারণায় কুলার না । বলিল, “দেখ না ভাল ক’রে।” মা বলিলেন, “দেখেছি যা ।” বড়মার চিঠি ] সত্যই ! তবে ত কিছু আদায় করিবার একটা স্বৰোগ মিলিয়াছে 1 ছেলেমেয়ের দল আবার কলরব করিয়া ছুটিল, “ও বড়মা, বড়মা, তোমার জন্ত একটা জিনিষ এনেছি।” মুকুল বলিল, “বল ত কি, ও বড়মা বল ত কি ?” লাভের আশায় মধুও কাপিতে কাপিতে আসিয়া দলে ভিড়িয়ছিল, সে বলিল, “না না দেওয়া হবেনা, কখনো দেওয়া হবে না, আগে একটা পয়দা দাও।” রাণী বলিল, “একটা না, একটা না ঘটে—ও বড়মা দাও না দুটো পয়সা ।” সকলের ছোট দীপ্তি ভারী মজা পাইয়াছিল; নাচিতে নাচিতে সে বলিল, “আমি বলব না—কিছুতেই বলব না-ব-ডু-মা তোমার একটা চ-এ হস্বিকারে চি, ঠ-এ হস্বিকারে ঠি— ” আর যায় কোথায় ! বিশ্বাসঘাতকের উপর একসঙ্গে কিলচড় বৃষ্টি হইতে লাগিল। আততায়ীদের হাত হইতে আত্মরক্ষা করিবার জন্ত দীপ্তি গিয়া বড়মার পিছনে লুকাইল । বড়মা তরকারী কুটি:ত কুটিতে কি ভাবিতেছিলেন, ইহাদের আকস্মিক আগমন ও আক্রমণের দিকে তেমন নজর দেন নাই । এখন ব্যাপার গুরুতর বুঝিয়া বলিলেন, “দেব রে দেব দুটো পয়সা, ছেড়ে দে ওকে ” মুক্তি পাইয়া দীপ্তি ছাপাইতে লাগিল। বড়মা কহিলেন, “দে দেপি চিঠিখানা, কে লিখেছে দেখি ” সকলের বড় মন্ট, ক্লাস সিক্স-এ পড়ে। বিদ্যার পরিচয় দিবার সুযোগ পাইয়া সে বলিল, “থাম থাম আমি দেখছি । ইতির দিকটা দেখুব ত ? এই নে লেখা আছে ইতি আং প্রবীরেন্দ্রনাথ সেন । ইতি আং ঐধীরেন্দ্রনাথ সেন কে বড়মা ?” “ আমার দাদা।” “তোমার দাদা ? তোমার দাদা আছে ?” মন্ট আশ্চৰ্য্য হইয়। চাহিয়া রহিল । বড়মাদের বুঝি আবার দাদা থাকে দূর, ফাকি দিতেছে নিশ্চয় । বলিল, “হ্যা তোমার আবার দাদা আছে ।” বড়মা আঁচল হইতে পয়সা বাহির করিতে করিতে বলিলেন, “নেই ? দদা আছেন, বাবা আছেন, বাড়ি জাছে, ঘর আছে—তোদের যেমন-যেমন আছে আমারও তেমনি-তেমনি সব আছে জানিস? এই নে পয়সা, চিঠি দে।” পয়সা লইয়া ছোটর দল চলিয়া গেল ।