পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আণশ্বিন গ্ৰীকৃষ্ণ—সারথি ও শিক্ষাগুরু ברר কার্ধ্যের উল্লেখ আছে। প্রথম, খাণ্ডববন-দাহন। অগ্নিদেব ক্ষুধায় পীড়িত হইয়াছিলেন । অল্পাহারে তাহার ক্ষুন্নিবৃত্তি হয় না। সাত বার তিনি বৃহৎ খাণ্ডববন গ্ৰাস করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন, সাত বার ইন্দ্র মুঘলধারায় বৃষ্টিপাত করিয়া তাহার চেষ্ট ব্যৰ্থ বরিয়াছিলেন। অগ্নি জনাৰ্দ্দন শ্ৰীকৃষ্ণ এবং পার্থ অৰ্জুনের শরণাপন্ন হইলেন। তিনি নিজের উদ্দেশু সার্থক হইবার নিমিত্ত শ্ৰীকৃষ্ণকে সুদর্শনচক্র এবং অৰ্জুনকে গাওঁীব ধমুক ও যুগল অক্ষয় তুণীর উপহার প্রদান করিলেন। পর্য্যাপ্ত আহার করিয়া অগ্নির ক্ষুধ নিবৃত্ত হইল, খাণ্ডববন ভস্মীভূত হইল, দেবরাজ ইন্দ্ৰ সসৈন্যে পরাজিত হইলেন। সম্ভবতঃ যে স্থানে খাণ্ডববন ছিল সেই স্থলে থাণ্ডবপ্রস্থ নামক লোকালয় স্থাপিত হইল । দ্বিতীয় ঘটনা অলৌকিক । যুধিষ্ঠিরের অনুষ্ঠিত রাজস্থয় ধজ্ঞের পর দু্যতক্রীড়ার সময় শ্ৰীকৃষ্ণ সভাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। দূতের ব্যসনে যুধিষ্ঠির এরূপ অভিভূত হইয়াছিলেন যে তিনি সৰ্ব্বস্বাস্ত হইয়াও ক্ষান্ত হইলেন না। একে একে চারি ভ্রাত, অবশেষে দ্রৌপদীকে পর্য্যন্ত পণ রাখিয়া হারিলেন। ফুৰ্য্যোধনের আদেশে দুরাত্মা দুঃশাসন রজস্বল, একবসনা আশ্রমুখী দ্রৌপদীকে কেশাকর্ষণ করিয়া সভাস্থলে আনয়ন করিল। কৰ্ণ দুঃশাসনকে আদেশ করিলেন, তুমি পাওবগণের ও দ্রৌপদীর সমুদয় বস্ত্র গ্রহণ কর। পাণ্ডবেরা উত্তরীয় বস্ত্র প্রদান করিয়া অধোমুখে উপবিষ্ট হইলেন। অনন্তর সেই জনপূর্ণ সভামধ্যে দুঃশাসন দ্রৌপদীকে বিবস্ত্রা করিতে উদ্যত হইল। সভাস্থলে তাহার লজ্জা রক্ষা করিবার কেহ নাই জানিয় অবগুষ্ঠিতমুখী রোরুদ্যমান দ্রৌপদী কাতর হৃদয়ে কেশবকে স্মরণ করিলেন, করিলেন। যাজ্ঞসেনীর করুণ মিনতি মহাযোগী শ্রীকৃষ্ণের কর্ণকুহুরে শ্রত হইল। দ্রৌপদীর লঙ্গ রক্ষিত হইল। পাপাত্মা দুঃশাসন দ্রৌপদীর বসন আকর্ষণ করিয়া সুপাকার করিল কিন্তু নিঃশেষ করিতে না পারিয়া ক্ষান্ত হইল। তৃতীয় ঘটনা দুষ্টের দণ্ড। রাজা যুধিষ্ঠিরের রাজ্যাভিষেকের সময়ে রাজস্থয়-যজ্ঞ সমাধা হইলে সভাস্থলে সমবেত রাজগণের মধ্যে বাস্থদেবকে সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ সম্মান প্রদর্শন করা হয়। ইহা দেখিয়া চেদিরাজ শিশুপাল ক্রোধে জ্ঞানশূন্ত হইয়া শ্ৰীকৃষ্ণকে নানা দুৰ্ব্বাক্য বলিতে আরম্ভ করিলেন। শিশুপাল ঐকৃষ্ণের পরিত্রাণের নিমিত্ত প্রার্থনা ' আত্মীয়। অপর রাজারা শিশুপালকে নিষেধ করিলেন, কিন্তু শিশুপাল আরও উদ্ধত ভাবে বাস্থদেবের গ্লানি করিতে লাগিলেন। অবশেষে শ্ৰীকৃষ্ণ উপস্থিত রাজন্তবর্গকে ধীর স্বরে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, তিনি চেদিরাজের মাতার নিকটে তাহার পুত্রের শত অপরাধ ক্ষমা করিতে প্রতিশ্রত হইয়াছিলেন। সে সংখ্যা পূর্ণ হইয়া চেদিরাজ তাহার অধিক অপরাধ করিয়াছেন। এই কারণে র্তাহাদিগের সমক্ষেই শ্ৰীকৃষ্ণ দুৰ্বত্ত চেদিরাজকে বধ করিবেন। এই বলিয়া শ্ৰীকৃষ্ণ সুদৰ্শনচক্র দ্বারা শিশুপালের মস্তক ছেদন করিলেন। গীতায় ভগবান বলিয়াছেন তিনি দুষ্কতকে বিনাশ করিবার নিমিত্ত অবতীর্ণ হন। ইহা তাহারই দৃষ্টান্ত। দ্বাদশ বর্ষ বনবাস ও তাহার পর এক বৎসর অজ্ঞাতবাসের পর পাণ্ডবেরা দৃতিখেলার শাস্তি হইতে মুক্তি পাইলেন। র্তাহারা প্রতারিত, অপমানিত হইয়া ভিক্ষুকের ন্যায় বনে প্রেরিত হইয়াছিলেন। তথাপি তাহারা কোনরূপ অমর্য প্রকাশ করিলেন না, ন্যায্য প্রাপ্যের অপেক্ষা কিছু অধিক চাহিলেন না। বন্ধুবান্ধব ও অপর লোকের সাক্ষাতে শ্ৰীকৃষ্ণ স্বয়ং অত্যন্ত ধীর ভাবে সমস্ত কথা আলোচনা করিলেন । রাজ্যের একাংশ পাণ্ডবদের প্রাপ্য। কিন্তু শাস্তির কথায় দুৰ্য্যোধন কর্ণপাত করিলেন না, কাহারও পরামর্শ গ্রাহ করিলেন না। উভয় পক্ষে অপর রাজাদিগের সহায়তা প্রার্থিত হইতে আরম্ভ হইল। দুৰ্য্যোধন ও অর্জন একই দিবসে দ্বারকায় উপনীত হইলেন। প্রাচীন আৰ্য্য কবিদিগের মানবের মনোরাজ্যের অভিজ্ঞতা দেখিলে বিস্ময়ে অভিভূত হইতে হয় । মানব-প্রকৃতির ঘাত-প্রতিঘাত ঘটনা-সংযোগের বিচিত্র cool, of atoto foot" (dramatic development) অপর সহিত্যে দেখিতে পাওয়া যায় না। এই একটি ঘটনার কৌশল লক্ষ্য করিতে হয়। শ্ৰীকৃষ্ণ মধ্যাহ্নভোজনের পর শয়ন করিয়া নিদ্রিত হইয়াছেন। সেই কক্ষে দুৰ্য্যোধন প্রথমে প্রবেশ করিলেন । র্তাহার অহঙ্কত প্রকৃতির অনুযায়ী তিনি শ্ৰীকৃষ্ণের শিরোদেশে বহুমূল্য আসনে উপবিষ্ট হইলেন। অৰ্জুন তাহার পরে আসিয়া বিনয়নম্র ভাবে, যুক্তকরে কেশবের পদতলে উপবেশন করিলেন । শ্ৰীকৃষ্ণ জাগরিত হইয়া প্রথমে অর্জুনকে ও তাহার পরে দুৰ্য্যোধনকে দেখিতে পাইয় তাহাদের আগমনের কারগু জিজ্ঞাসা করিলেন।