পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আণশ্বিন স্ত্রীকৃষ্ণ—সারথি ও শিক্ষাগুরু ግግግ নিয়মের বহিভূত এবং সাধারণ মন্থয্যের দোষগুণ হিসাবে র্তাহার চরিত্র বিচার করিতে পারা যায় না। মহাভারতে সারথ্য ও শিক্ষাগুরুর পদের সহিত শ্ৰীকৃষ্ণের বাল্যজীবন ও কৈশোর অবস্থার কোন সম্বন্ধ নাই, কিন্তু তাহার কোন উল্লেখ না করিলে তাহার পূর্ণ বিচিত্র চরিত্রের মৰ্ম্ম গ্রহণ করিতে পারা যায় না। এ কথা নিঃসংশয়ে বলা যাইতে পারে যে, কোন দেশের ইতিহাসে অথবা কল্পিত পৌরাণিক ইতিবৃত্তে এমন আর কোন ব্যক্তির নাম দেখিতে পাওয়া যায় না যাহার সহিত শ্ৰীকৃষ্ণের বাল্য ও কৈশোর লীলা এবং পূর্ণ যৌবনের অলৌকিক কীৰ্ত্তি উপমিত হইতে পারে। যেরূপ ভগবদগীতা আৰ্য ধর্মগ্রন্থ-সমূহের মধ্যে সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করিয়াছে, সেইরূপ র্তাহার বাল্য ও কৈশোর কাহিনীর অসংখ্য গান ভারতের সর্বত্র গীত হইতেছে। মহাভারত এবং মহাভারতীয় গীতার ন্যায় ভাগবতও অমূল্য গ্রন্থ। ভাগবতের একাদশ স্কন্ধ গীতার তুল্য অনুপাতে বিরচিত। গীতায় ভগবান যেরূপ অৰ্জুনকে শিক্ষা দিয়াছেন, ভাগবতে কেশব উদ্ধবকে তদহুরূপ গভীর তত্ত্ব বুঝাইয়াছেন। শ্ৰীকৃষ্ণের বাল্য ও কৈশোর অবস্থা এরূপ কৌশলপূর্ণ রূপকে আবৃত যে সাধারণ লোকে তাহা বুঝিতে না পারিয়া কদৰ্থ করিয়াছে। আর্য্য ও তৎপরবর্তী হিন্দু জাতি ধৰ্ম্মপ্রবণ, তাহারা কিরূপে বুন্দাবনলীলার অসৎ অর্থ গ্রহণ করিল তাহা বুঝিতে পারা যায় না। এই লীলাই ভক্তি ও ভগবৎ প্রেমের প্রধান আধার। গোপালতাপণী উপনিষদ ভাগবতের পরে রচিত। উহাতে বৃন্দাবনলীলার রূপকার্থ অতিশয় দক্ষতা ও কৌশলের সহিত ব্যাখ্যাত হইয়াছে। যেরূপ ভগবদগীতা পাঠ করিবার সময় কুরুক্ষেত্রযুদ্ধ সম্বন্ধে চিত্ত সংশয়াকুল হয়, বৃন্দাবন ও ব্রজলীলা সম্বন্ধেওঁ সেইরূপ সংশয় উপস্থিত হয়। সকলই কি কল্পনার মায়া, রূপকের গুঢ়াৰ্থপূর্ণ ছলনার ? এখানেও কবিকৌশল, প্রকৃত অর্থ চেষ্টা করিয়া বুঝিতে হয়। সংস্কৃত ভাষায় অনেক শব্দের দ্ব্যর্থ অনেক শব্দের নানা অর্থ। গোপী শব্দের অর্থ গোপকন্যা, আবার ঐ শব্দে মায়া বুঝায়। মাধবের মুরলীধ্বনি ওঁ, ওঙ্কার অথবা প্রণব শব্দ। শ্রীকৃষ্ণের বাস সৰ্ব্বদাই পীতবর্ণ এবং তাঁহার কান্তি নবদূৰ্ব্বাদলাম, কমল নয়ন। ইহাতে কি স্বচিত হইল ? সংপুণ্ডরীকনয়নং মেঘাভং বৈদ্যুতাম্বরমূ— র্তাহার নয়নদ্বয় স্বন্দর কমলের স্যায়। তিনি মেঘাভ, ফুরিত বিদ্যুৎবিশিষ্ট আকাশের ন্যায়। অর্থাত্তরে, মেধযুক্ত আকাশ র্তাহার কায়া, বিদ্যুৎ তাহার বাস। এই শঙ্খচক্ৰধারী মহাযোগী মহাপুরুষকে কল্পিত দেবতা বলিয়া অলীক বিবেচনা করা যাইতে পারে না। ভগবদগীতা এবং ভাগবতকে মিথ্যা বলিবার সাধ্য নাই ; জগতে ধৰ্ম্মসাহিত্যে এরূপ গ্রন্থ দুলভ। চারিখানি গসপেল দ্বারা যেমন নিঃসংশয়ে প্রমাণিত হয় যে যীশুখ্ৰীষ্ট বৰ্ত্তমান ছিলেন, সেইরূপ উক্ত দুই গ্রন্থ হইতে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব প্রমাণিত হয়। র্তাহার জন্মকাল নিরূপণ করিতে পারা যায় না, কারণ অতি প্রাচীনকালে কোন বিশেষ সময় হইতে অথবা কোন রাজার সিংহাসনারোহণ হইতে অব সংখ্যা করিবার প্রথা ছিল না। শক অথবা শালিবাহন নৃপতি হইতে শকাবা আরম্ভ ; সে অল্পকালের কথা। কিন্তু শ্ৰীকৃষ্ণের জন্মতিথি, জন্মাষ্টমী অথবা গোকুলাষ্টমীতে ভারতের সর্বত্র উৎসব হয়। র্তাহার সংক্রাস্ত নানা অলৌকিক ব্যাপার লিপিবদ্ধ হইয়াছে ; বালো, কৈশোরে, যৌবনে ও প্রৌঢ়াবস্তায় তিনি অদ্বিতীয় ক্ষমতাশালী। তাহার পুরুষকার অসামান্ত, তেজস্বিত অসীম। তিনি বিষ্ণুর অবতার হইলেও মানুষ এবং তাহার মানবচরিত্র গোপন করিবার কোথাও কোন চেষ্টা হয় নাই। কিশোর কৃষ্ণের zra Pied piper of Hamelin-am sta wzorr wraș গুণের । সংসারের মায়াবন্ধন ছিন্ন করিয়া ভগবৎ-প্রেমে মত্ত হইবার জন্য মুরলীর আহবান। যৌবনে সেই বংশীধারী গীতা ও ভাগবতের দৈবজ্ঞান শিক্ষা দিলেন। বৃন্দাবনে তিনি ভক্তি ও প্রেমমার্গ প্রদর্শন করিলেন, দ্বারকা এবং কুরুক্ষেত্র সমরভূমিতে তিনি জ্ঞানমার্গ নির্দেশ করিলেন। আমরা শ্ৰবণ করি, বিক্ষিত হই, অবনত মস্তকে সবিনয়ে তাহার বন্দনা করি। গোপালতাপশীর অতি মধুর শ্লোকে তাহার স্তুতি করি – নমঃ কমলনেত্রায়, নমঃ কমলমলিনে । নমঃ কমলনাভায়, কমলাপতয়ে নমঃ ॥ কমলনেত্রকে নমস্কার, কমলমলীকে নমস্কার, কমলনাতকে নমস্কার, কমলাপতিকে নমস্কার করি!