পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“ষ্টারভেশ্যন” ঐমাণিক ভট্টাচাৰ্য্য পৌষের প্রভাত। অনেক ক্ষণ উজ্জল রৌদ্রের পর শীতের কনকনে ভাবটা একটু কমিয়া আসিয়াছে। একটা ছোট পালি করিয়া নূতন গুড়ের পাটালি সহযোগে মুড়ি থাইতে খাইতে সুৰ্য্যকান্ত ওরফে স্বজি চণ্ডীমণ্ডপের সম্মুখস্থ পেয়ারাগাছের দিকে সতৃষ্ণ নয়নে চাহিতেছিল। স্বমিষ্ট পাটালির আস্বাদ পাইয়াও তাহার মনে ক্ষোভ জাগিতেছিল এখনই পাড়ার কোন ছেলে কোন স্বযোগে গাছে উঠিয় পাতার আড়ালের বড় ও পাকা পেয়ারাটি লইয়া যাইবে । স্বজির সব চেয়ে ইহাই আশ্চৰ্য্য মনে হইতে লাগিল কাল বিকালে যখন সে গাছে তখন অমন স্বন্দর পেয়ারাটি কি করিয়া তাহার নজর এড়াইয়াছিল। মুড়ির পালি ফেলিয়া তৎক্ষণাৎ গাছে ওঠা স্বজির পক্ষে কিছুই শক্ত নহে। কিন্তু সমস্ত এই যে তাহার বাপের আসিবার সময় হইয়াছে, আর তাহার বাপও নীচে আসিয়া দাড়াইবেন । তখনই বলিয়া বসিবেন, ‘নেমে আয়, বাদর’ ; সে বঁাদর না হইলেও তাহাকে নামিয়া আসিতে হইবে। স্বজি মনে মনে বিরক্ত হইয়া উঠিল। এই বাপেদের যদি কিছু বুদ্ধি-বিবেচনা থাকে । পেয়ারা—বিশেষতঃ বড় এবং পাকা পেয়ারা—দেখিলে কাহার না তাহ পাড়িতে ইচ্ছা হয় ? বাবারও নিশ্চয়ই হয়। পাছে লোকে কিছু বলে তাই তিনি পাড়েন না। বেশ হইত যদি বাবা পেয়ারা পাড়িতে গাছে উঠতেন, আর র্তার বাবা আসিয়া পড়িয়া নীচে হইতে বলিতেন, বাদর, নেমে আয় শীগগির। স্বৰ্য্যকান্ত হিসাব করিয়া দেখিল, তাহার বাবার প্রায় ফিরিবার সময় হইয়াছে। এখন গাছে ওঠা মোটেই নিরাপদ নহে। কৃাজেই সাবধানে থাকিতে হইবে যেন কেহ আসিয়া পাড়িয়া লইয়া না যায়। বাবা ত এখানে প্রায় সৰ্ব্বক্ষণই বসিয়া থাকেন ; কিন্তু তাহাতে কোন লাভ নাই। র্তাহার সম্মুখেই যদি কেহ গাছে চড়ে তাহা হইলেও তিনি তাহাকে নিষেধ করিবেন না। কাজেই স্বজিকেই সতর্ক থাকিতে হইবে। সূৰ্য্যকান্ত যখন এবম্বিধ গবেষণায় ব্যস্ত এমন সময় চণ্ডীমণ্ডপের সম্মুখে তাহার বাবা আসিয়া উপস্থিত। সঙ্গে র্তাহারই বয়সী এক ভদ্রলোক । স্বৰ্য্যকাস্তের দিকে ফিরিয়া তাহার বাবা বলিলেন—কে বল দিকি স্বজি ? কি করেই বা জানবি ! তোরা তখন কোথায় ? স্বজি বিম্মিতভাবে আগন্তুকের পানে ক্ষণকাল চাহিয়া রহিল। আগন্তুক মুছ হাসিয়া বলিলেন—এটি তোমার পুত্ররত্ন । বুঝি ? কিন্তু নামটি স্বজি কেন উপেন ? - উপেন অর্থাৎ সূৰ্য্যকাস্তের পিতা বলিলেন—এই ত সবে সুজি দেখলে । আরও কত এখনও বাকী আছে। বলিতে বলিতে উভয়ে চণ্ডীমণ্ডপের উপর উঠিয়৷ আসিলেন । * এক জন আগন্তুকের সম্মুখে স্থজি বলিয়া সম্বোধিত হওয়ায় বালক একটু অপমানিত জ্ঞান করিল। সেও পিছন পিছন চণ্ডীমগুপের উপর উঠিয়া আসিয়া বলিল—আমার নাম ঐস্বৰ্য্যকান্ত মল্লিক, স্বজি নয়। আগন্তুক প্রফুল্প মুখে বলিল—তাহ’লে তোমার বেশ নাম। স্বৰ্য্যকাস্ত বেশ ভাল নাম। আমি যে-কদিন এখানে থাকব তোমাকে ঐস্বৰ্য্যকাস্ত' বলে ডাকৃব। পরে স্বৰ্য্যকাস্তের পিতার পানে ফিরিয়া বলিল—এ ত তোমারই অন্যায়, উপেন। স্বৰ্য্যকাস্তকে স্বজি কর তুমি কোন অধিকারে ? লুপ্ত মান প্রায় পুনরুদ্ধার করিয়া স্বৰ্য্যকান্ত অনেকটা বিজয়গৰ্ব্বে বাড়ির ভিতর চলিয়া গেল। এ সংবাদ ভিতরে রাষ্ট্র হইতে দেরি হইল না যে বাহিরে এক জন বাৰু আসিয়াছেন এবং তিনি তাঁহাকে স্বৰ্য্যকান্ত বলিয়৷ ডাকিয়াছেন—স্থজি বলিয়া নহে। - পরক্ষণেই দুয়ারের আশপাশে তিন-চারি প্রকারের