পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্ৰহ্মদেশের ছেলেমেয়ে ঐস্বরুচিবালা রায় সকালবেলা জানালা দিয়ে তাকাতেই চোখে পড়লে, আমাদের প্রতিবেশীদেরই ছোট একটি ফুটফুটে স্বন্দর মেয়ে। ছোট একটি প্লেটের উপর খানিকটা ক’রে থাবার সাজিয়ে ও তার উপর একটি ক’রে ফুল রেগে প্রতিবেশীদের বাড়ি বিলোতে চলেছে, তার পেছনে তাদের বাড়ির ঝি’র হাতেও একটি ট্রে’তে ক’রে ঐ রকম প্লেট সাজামে । ছোট মেয়েটির পরনে লাল টুকটুকে রেশমী লুঙ্গী, মাথায় জড়ানো ফুল, এবং পায়ে সোনার মল। তার ছোট থোকন-ভাইটির আজ সাত দিন বয়স হয়েছে, আজ প্রথম তাকে দোলনায় চড়ানো হবে, আজিকার এই মিষ্টি বিলোনো তারই জন্য। এই যে ছোট শিশুটি এখন নিতান্ত অসহায় ভাবে চোখ বুজে বিছানায় গুয়ে আছে, মাস-ফুয়েক হতে হতেই, একে নাচের তাল শেখানে আরম্ভ হয়ে যাবে, তার দিদিরা এবং মা-মাসীরা তার কচি কচি হাত দুখানি আস্তে আস্তে এপাশে-ওপাশে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে, স্বর করে করে গান গাইতে থাকে, বুদ্ধি জাগ্রত হবার সঙ্গে সঙ্গেই এই যে স্বরটি শিশুর কান এবং মনকে প্রথম অভিনিবিষ্ট ক’রে তোলে, সে স্বর শিশুটি কখনও ভোলে না, একটু বড় হয়ে পাঁচ-ছ মাস বয়স যখন তার হয় তপন তার পাশে ব’সে, মা এবং দিদিরা যখন ওরকম স্বরে গান গাইতে থাকে, শিশুটি তখন তার কচি কচি গাল দুটিতে মৃদু মৃদু হাসতে হাসতে আপনিই কি চমৎকার ক'রে হাত দুটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাচের ভাব ফুটিয়ে তোলে, যে, চোখে দেখলে আর আশ্চৰ্য্য না-হয়ে থাকা যায় না! ক্রমে ক্রমে শিশুটি যখন আরও যড় হ'তে থাকে অর্থাৎ দেড় বছর দু-বছর বয়সের হয়; তখনই গ্রামোফোনের হরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কিংবা দাদা-দিদিদের গানের সঙ্গে সঙ্গে, কি স্বন্দর ক'রেই শিশুটি নাচতে থাকে ! একটি দুটি নয়, এদেশে প্রত্যেকটি ঘরে প্রত্যেকটি শিশুই এই রকম। এই রকম ক’রে নেচে গেয়ে লাফালাফি ছুটোছুটি ক’রে শিশুটি পাঁচ-ছ বছরের হরে তখন থেকেই তার শিক্ষা আরম্ভ হয়—সাধারণতঃ গরিব গৃহস্থঘরের ছেলেরা এই বয়সেই নিকটস্থ ফুঙ্গি চাউজে (ব্রহ্মচৰ্য্য আশ্রম ) গিয়ে থাকে। সেখানে বিদ্যাশিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ধৰ্ম্মশিক্ষাও দেওয়া হয়ে থাকে, সকাল হ'তে সন্ধ্য পৰ্য্যস্ত এইখানে তাদের কখনও অনাবশ্বক কুঁড়েমি করতে দেওয়া হয় না, স্বৰ্য্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠে স্তোত্রপাঠ শেষ ক'রে ছেলের নিত্য নিয়মিত ভাবে ভিক্ষায় বেরোয়, পাড়ায় পাড়ায় প্রতি ঘরে ঘরেই তাদের জন্য ভাত-তরকারী রাধাই আছে,--- সেগুলো আশ্রমে নিয়ে এলে, বেলা এগারটার সময় ছেলেদের আগে খাইয়ে তার পর ফুঙ্গিরা, অবশিষ্ট যা-কিছু থাকে নিজের তাই ভাগ ক’রে থান। দ্বিপ্রহরে স্কুলে পাঠাভ্যাসের পর বিকালে বাজার করা, আশ্রম পরিষ্কার রাখা, নিকটস্ত নদী থেকে জল তোলা, এবং নানা রকম খেলাধুলোর পর আহারাদি শেষ ক'রে আবার সন্ধ্যার পর স্তোত্রপাঠ আরম্ভ হয়, ফুঙ্গির বিকালে কখনও আহার করেন না, ছেলেদের জন্য এই বেল আশ্রমেই রান্ন হয়, পাড়াতেই বাড়ি হ’লে কোন কোন ছেলে বাড়িতেই গিয়ে থেয়ে আসে। এই রকম ক’রে ফুঙ্গি চাউঙ্গে থেকে যে-সব ছেলে মানুষ হয় এবং দীর্ঘদিন এই ফুদিদের সঙ্গেই থাকে, ফুঙ্গির সযত্নে তাদের সকল রকম শিক্ষাই দিয়ে থাকেন, এবং ক্রমে ক্রমে বৌদ্ধধর্মের সমস্ত বিষয়ই এদের আয়ত্ত হয়ে যায়। কোন কোন ছেলের মন এই সব স্বন্দর সংসর্গে থেকে ক্রমে এমনই হয়ে যায়, যে, সে আর সংসারাশ্রমে ফিরে যায় না ; এই সব আশ্রমে মেয়েদের কোন স্থান নেই, ফুদি চাউজে পড়বার অধিকার মেয়েরা পায় না। ফুঙ্গি চাউজে গিয়ে বাস করবার এবং পড়বার অধিকার মেয়েরা পায় না সত্য, কিন্তু অন্তান্ত স্কুল এবং পাঠশালা ইত্যাদিতে ছেলেরা এবং মেয়ের একই সঙ্গে পাঠাভ্যাস ক'রে থাকে। মিশনরীদের কয়েকটা স্কুল ছাড়া, মেয়েদের পৃথক স্কুল কোথাও নেই। আজকাল ইংরেজী-শিক্ষিত অনেক পিতামাতা তাদের