পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سمOtzیسو উঠেছে সে কেবল একটি মূল সত্যের যোগে । সেই সত্যটি হচ্চে সেই বালকটি স্বয়ং। পূৰ্ব্বেই বলেচি, সত্য ভূম। অর্থাং বাইরের মাপে, কোনো প্রয়োজনের পরিমাণে, তার মূল্য নয়--তার মূল্য আপনাতেই। সেই মূল্যেই তার ছোটও ছোট নয়, তার সামান্ত চিহ্নও তুচ্ছ নয়—এই কথাটি ধরা পড়ে প্রেমের কাছে । তোমাদের সঙ্গে সে যে হেসেছিল, খেলেছিল, একসঙ্গে পড়েছিল, এ কি কম কথা । তার সেই হাসি থেল, তোমাদের সঙ্গে তার সেই পড়শোন, মানুষের চিরউৎসারিত সৌহার্দ্যধারারই অঙ্গ, কষ্টির মধ্যে যে অমৃত আছে, সেই অমৃতেরই অংশ । আমাদের এখানে তোমাদের যে প্রাণপ্রবাহ, যে আনন্দপ্রবাহ বয়ে চলেছে, তার মধ্যে সেও তার জীবনের গতি কিছু দিয়ে গেল, এখানকার স্মৃষ্টির মধ্যে সেও আপনাকে কিছু রেপে গেল। এখানে দিনের সঙ্গে দিন, কাজের সঙ্গে কাজ, ভাবের সঙ্গে ভাব, প্রতিদিন যে গাথ পড়চে, নানা রঙে নান। স্বতোয় মিলে এখানে একটি রচনাকাৰ্য্য চলচে। সেই জন্যে এখানে আমাদের সকলেরই জীবনের ছোট বড় নান টুকরো ধরা পড়ে যাচ্চে ; সেই বালকেরও জীবনের যে অংশ এখানে পড়েচে, সমস্ত আশ্রমের মধ্যে সেইটুকু রয়ে গেল, এই কথাটি আজ তার শ্রাদ্ধ-দিনে মনে করতে হলে । তা ছাড়া তার জীবনের কীৰ্ত্তিও কিছু আছে এখানে । ভুবলডাঙ্গার গরীবদের জন্যে সে এখানে যে নৈশবিদ্যালয় স্থাপন করে গেছে, তার কথা তোমরা সবাই জান । চাদ সংগ্রহ করে আমরা অনেক সময় মঙ্গল অনুষ্ঠানের চেষ্টা করে থাকি। কিন্তু তার চেয়ে বড় হচ্চে নিজের সাধ্য দ্বারা, নিজের উপার্জনের অর্থ দ্বারা কাজ করা । নৈশবিদ্যালয় স্থাপন সম্বন্ধে মুলু তাই করেছে। সে পুরানো কাগজ নিজে বোলপুরে বয়ে নিয়ে বিক্রী করে এই বিদ্যালয়ের ব্যয় নির্ববাহ করত। সে নিজে তাদের শেখাত, তাদের আমোদ দিত। এ সম্বন্ধে আশ্রমের কর্তৃপক্ষের কোনো সাহায্য সে নেয় নি। এই অনুষ্ঠানটি কেবল যে তার ইচ্ছা থেকে প্রস্থত, তা নয়, তার নিজের ত্যাগের দ্বারা গঠিত । তার এই কাজটি, এবং তার চেয়ে বড়, তার এই উৎসাহাট, আশ্রমে রয়ে গেল । পূৰ্ব্বে বলেছি, অপরিসীম অজানা থেকে জানার মধ্যে প্রবাসী ১৩৪২ মানুষ আস্বামাত্রই সেই ন-জানার শূন্তত এক নিমেষে চলে যায়—সেই ন-জানার মহা গহবর সত্যের দ্বারা নিমেষে পূর্ণ হয়ে যায়। অস্তরের মধ্যে বুঝতে পারি, আমাদের গোচরত এবং অগোচরতা, দুইকেই ব্যাপ্ত করে সত্যের লীলা চলচে। অগোচরতা সত্যের বিলোপ নয়। পাবার বেলায় এই যে আমাদের অনুভূতি, ছাড়বার বেলায় একে আমরা ভুলপ কেন ? ঢেউয়ের চূড়াটি নীচের থেকে উপরে যখন উঠে পড়ল, তপন সত্যের বাৰ্ত্তা পেয়েছি ; ঢেউয়ের চুড়াটি যখন উপর থেকে নীচে নেমে পড়ল, তখন সত্যের সেই বাৰ্ত্তাটিকে শেল বিশ্বাস করব না? এক সময়ে সত্য আমাদের গোচরে এসে “আমি আছি” এই কথাটি আমাদের মনের মধ্যে লিপে দিলে - তার স্বাক্ষর রইল ; এখন সে যদি অগোচরে যায়, অস্তরের মধ্যে তার এই দলিল মিথ্যা হবে কেন ? ঋষি বলেচেন--- “ভয় দস্তায়িস্তপতি ভয়ত্তপতি সুখ্যঃ ভয়াদিন্দ্রশ বায়ুশ্চ মৃত্যুৰ্দ্ধাবতি পঞ্চমঃ ” এই শ্লোকটির অর্থ এই যে, মৃত্যু শুষ্টির বিরুদ্ধ শক্তি নয়। এই পৃথিবীর স্পষ্টতে যেগুলি চালক শক্তি, তার মধ্যে অগ্নি হচ্চে একটি ; অণু পরমাণুর অন্তরে অস্তরে থেকে তাপরুপে অগ্নি যোজন বিয়োজনের কাজ করচেষ্ট ! স্বৰ্য্যও তেমনি পৃথিবীর সমস্ত প্রাণকে এবং ঋতু সম্বংসরকে চালনা করচে। জল পৃথিবীর নাড়ীতে নাড়ীতে প্রবহমান, বায়ু পৃথিবীর নিশ্বাসে নিশ্বাসে সমীরিত। স্বষ্টির এই ধাবমান শক্তির মধ্যেই মৃত্যুকেও গণ্য করা হয়েচে । অর্থাৎ মৃত্যু প্রতি মুহূর্তেই প্রাণকে অগ্রসর করে দিচ্চে—মৃত্যু ও প্রাণ এই দুইয়ে মিলে তবে জীবন। এই মৃত্যুকে প্রাণের থেকে বিচ্ছিন্ন করে বিভক্ত করে দেখলে, মিথ্যার বিভীষিকা আমাদের ভয় দেখাতে থাকে। এই মৃত্যু আর প্রাণের বিশ্বব্যাপী বিরা: ছন্দের মধ্যে আমাদের সকলের অস্তিত্ব বিধৃত হয়ে লীলায়িত হচ্চে ; এই ছন্দের যতিকে ছন্দ থেকে পৃথক করে দেখলেই তাকে শূন্ত করে দেখা হয়, দুইকে অভেদ করে দেখলেই তবে, ছন্দকে পূর্ণ করে পাওয়া যায়। প্রিয়জনের মৃত্যুতেই এযতিকে ছন্দের অঙ্গ বলে দেখা সহজ হয়—কেননা, আমাদের প্রীতির ধনের বিনাশ স্বীকার করা আমাদের পক্ষে দুঃসাধ্য !