পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অণশ্বিন শও তখন মোটেই ছড়াইয় পড়ে নাই। স্বতরাং সম্মুখের সেই আসরে ভাসান গাহিতে সে ‘পাচের অল্পমতি পাইল না। তাই আসর হইতে প্রায় দুই শত হাত দূরে পাঠামোর পশ্চাতেই তার ছোট খাটো দল লইয়া সে ভালান-কীৰ্ত্তন জুড়িয়া দিল । তার গানের আসরে যদিও শ্রোতা নাই, কিন্তু তাই বলিয়া দয়ালকে মনসার মহিমকাষ্ট্ৰনে ঠেকাইয়া রাখে কার সাধ্য ? আলখাল্লা কোমর হইতে প্ৰয়ের পাতা পৰ্য্যস্ত ঘাগরার মত দোলাইয়া, হাতে চামর, মাথায় পাগড়ী, পায়ে নূপুর বাজাইয়া অবিরাম এক দিন এক রাত্রি দয়াল-ওঝা ভাসান গাহিয়৷ চলিল । শেধরাত্রে মৃগীন্দরের মৃত্যু-বর্ণনা আরম্ভ হইল। সাতলি পৰ্ব্বতে লোহার বাসর-ঘরে সদ্যপরিণীত মুত পতির উদ্দেশে বেহুলার সম্মভেদী করুণ বিলাপ মূৰ্ব করিয়া শোকপ্রত কণ্ঠে দয়াল-ওঝ মধন গাহিল— "লোহার বাসর-ঘর হারাইল্প প্রাণেশ্বর, জাগো জাগে পাইক-প্রহরী। প্ৰভু মোর নাগে থাইল আমারে নিদ্রীয় পাষ্টল ঝাটে জানাও শ্বশুর গোচরি ॥ দেবী সনে ঘোর বাদ আতি বড় পরমাদ তবুও বাচিতে ছিল সাপ ! কালি রাখি আমি অতি যতনে স্বামী আজি রালি ঠেকিল প্রমাদ ॥" তথন নাকি মনসার কাঠামো কঁাপিতে কঁাপিতে অন্য সর্প প্ৰসিদ্ধ কীৰ্ত্তনীয়ার আসর পিছনে করিয়া দুমাল-ওঝার খাসরের দিকে মুখ ফিরাইয় আপনা-আপনি উন্টিয় শড়াইল ! ঘটনাটি হাল-আমলে জীবিত কেই দিওঁ স্বচক্ষে । নখে নাই, কিন্তু বাপ-ঠাকুরদাদার মুখে সকলেই এই কাহিনী শুনিয়াছে। সেই হইতে আশপাশের গ্রামগুলিতে স্বাল-ওঝার অসীম প্রভাব । এমন কি দূরে ও কান্সাকে lাপে কামড়াইলে দয়াল-ওঝার ডাক পড়িত । খবর পাওয়! মাত্রই অক্ষাত কিংবা অভূক্ত থাকুক, দয়াল ছুটিয়া গিয়া নূতন চাপড় আর জলের হাড়ি লইয়৷ সৰ্পদষ্ট ব্যক্তির ‘বিয ঝাড়িতে গিয়া যাইত। নৃতন কাপড় রোগীর দেহে ধোপার পাটে বমন আছড়ায় তেমনই আছড়াইতে আছড়াইতে গল। ফাটাইয়া গান ধরিত। দৈৰ-ধন b='>'> “বেনিয়া - বেনিয়— লখাইরে ! আরে, কোন সাপে মারলে কামড় মাথার মণি চাইয় -" এ-হেন দয়াল মাঝি ছিল জমিদার হরিবিলাসের মোড়ল । আশী বছরের থড়থুড়ে বুড় বিশেষ ঘোর-ফেরা করিয়া পাড় তদারক করিতে পারিত ন সত্য, কিন্তু ঘরে বসিয়াই যখন বাহা বলিয়া দিত অন্য প্রজার প্রাণপণে তাঙ্গ তামিল করিত । একটি বিষয়ে কিন্তু দয়ালের সামর্থ ছিল যুবকের ন্যায়। এই বৃদ্ধ বয়সেও ডিঙিতে চড়িয় প্রতি রাক্সিতে নিশুতি বিলে মাছ পরিতে কেইষ্ট তার সমকক্ষ ছিল না । সে-বার পূজার আগে জমিদার হরিবিলাসের টাকার বেজায় টানাটানি পড়িল । একে জমিদার-বাড়ির পূজা থব জাকজমক ত করিতেই হইবে। তাঙ্গর উপর সদর তারিখও নিকটবৰ্ত্তী । যেমন করিয়া হউক, প্রজাদের কাছ হস্ততে আরও টাকা আদায় করা চাই-চ । অথচ মুখ ফুটিয় প্রজাদের নিকট টাকা চাঙ্গিলে ইচ্চং থাকে •{i | খাজনার নায়েব, গোমস্ত, দয়াল মাঝি প্রমুখ জনকয়েক মোড়ল, বহু প্রজ সেদিন জমিদারের বৈঠকে হাজির ৷ গড়গড়ার নল ফকিতে ফু কিতে নাসেব রাধাগোবিন্দকে লক্ষ্য করিয়া হরিবিলাস বলিলেন -“বুঝলে, গোবিন, আর কয়েকট। দিন পরেঙ্গ গাদি গাদি টাকা হাভড়ে তোমরা হয়রান ত’য়ে সালে ।” কৰ্ম্মচারী প্রায় সকলেরই কয়েক মাসের মাহিল। বাকা পড়িয়ছে। টাকার কথা শুনিয়া তাই তাঙ্গর উদগীব হইয়। উঠিল । মৃগের ধোয়া ছাড়িয়া ৱিবিলাস বণিলেন “তোমর শোনে নি বুঝি ?-নিশুতি বিলের তিন ধারে আমার যে-সব পাহাড় দেখছ, সেগুলির মধ্যে কেরোসিন ভেলের খনি আছে । . কামাচ কাটুকার সেই যে নামজাদা ঈগল কোম্পানী --তারা আশী লক্ষ টাকা সেলামী আর ফি-বছর বারে লক্ষ টাকা খাজনা দিয়ে সমস্ত মহালটাই বন্দোবস্ত নিতে চায় ।” সেই দিনষ্ট কলিকাতার ফ্রেগুস্ ষ্টোর হইতে চার শত টাকার কাপড়-চোপড় সরবরাহ করিয়া ইংরেজী টাইপকরা একখানা চিঠি হরিবিলাসের নামে আসিয়াছিল।