পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আণশ্বিন দয়াল জোড়হন্তে মা’কে স্মরণ করিতে লাগিলেন। সাওতাল সাপুড়ের দুষ্ট বুদ্ধিতে এ কি বিপদ ঘটিল! হাত সেই স্থানটিতে প্রায় এক ঘণ্টা বসিয়া রহিল, তাহার পর উঠিল। ছেলেটি চোখ চাহিল। হাতচালা হাত তুলিয়া লইয়া বলিল—বিষ উঠিয়া গিয়াছে। সময়ে বিষ-পাথর দেওয়া হয়েছিল ব'লে বঁাচলে, তা না হ’লে র্বাচন দায় হ’ত । و& উপরের ঘটনার পর সাত-আট দিন কাটিয় গিয়াছে । এ কয়দিন দেবতা আর কাহারও উপর অত্যাচার করেন নাই । ব্যাপারটা যেন অনেকটা সহিয়া গিয়াছে । এ-বিষয় লইয়। আর কেহ বড়-একটা উচ্চ-বাচ্য করে নাই। রাত্রে ধীরু মাধুরীকে বলিল—তুমি তাহলে কি বাবার কাছে যাবে ঠিক করেছ ? মাধুরী একটু লজ্জায় মাথা নীচু করিয়া বলিল না। ধীরু বলিল –কেন বল ত ? সাহস বেড়ে গেছে নাকি ? মাধুরী বলিল—ই্য। সত্যি, আমার আর আজকাল ভয় করে না । তাছাড়া বাড়ি গিয়ে আর ভাল লাগবে না । জানলে ? ধীরু একটু হাসিল। বলিল -বাবা এত ? কিন্তু সিন্দুকটা ঘদি এখনই ঘড়ঘড় ক'রে ওঠে ত--- মাধুরী তাহাকে আর বলিতে না দিয়া বলিল—সত্যি ঐটাকে আমার বডড ভয় বাপু । কি এক ভূতুড়ে সিন্দুক রেখে দিয়েছ— ধীরু কোন উত্তর করিল না। হয়ত তাহার একটু তন্দ্ৰা আসিয়াছিল। মাধুরীও চুপ করিয়া রহিল। অল্পক্ষণ ধীরুর উত্তরের আশায় অপেক্ষা করিয়া যখন দেখিল সে ঘুমাইয়া পড়িয়াছে তখন সেও চোখ বুজিল । কিন্তু কিছুক্ষণ ঐরূপ ভাবে চোখ বুজিয়া থাকিবার সসপিল tూకా পরও তাহার ঘুম আসিল না। কত কি অসংলগ্ন কল্পনা তাহার মনে উদয় হইতে লাগিল । তাহার মনে হইল : এই ঘরে ধীরুর ঠাকুম থাকিতেন। তিনি একদিন মাধুরীর মত ছোট্ট একটি বধু ছিলেন। তাহারই মত তিনি এই ঘরের ভিতর ঘুরিয়া বেড়াইতেন । যে গহনাগুলি আজ মাধুরীর গায়ে রহিয়াছে একদিন সেগুলি তাহার গায়ে শোভা পাইত । এই খাটটির উপর তিনি শুইয়৷ থাকিতেন। ইহার উপর গুইয়া থাকিয়া একদিন তিনি সর্পদংশনে প্রাণত্যাগ করিয়াছিলেন ।...শুনিয়াছিল নাকি তিনি অল্পপমেয় স্বন্দরী ছিলেন । চাপাফুলের মত রং ছিল র্তাহার ...এ গহনাগুলি তাহার শ্রীঅঙ্গে ন-জানি কিরূপ মানাইত।--মাধুরীর চোখে বুঝি আবার তন্ত্রার আমেজ আসিল। কিন্তু ঘুম হইল না। তাহার মনে হইল যেন মশা কামড়াইতেছে । দেখিল সত্যই ! সেদিন মশারিটি কামিয়া দিয়াছিল—কিন্তু টাঙাইয়া দিতে ভুল হইয়া গিয়াছে, ভাই মশা কামড়াইতেছে । পাখার হাওয়ায় মশা তাড়াইয়া দিয়া সে একটু চোখ বুজিল । ঘুম হইল না। চোখ খুলিয়া উপরে মশারির ফ্রেমটার দিকে তাকাইতেই তাহার মনে হইল কি যেন একটা তাহাতে জড়ান আছে । হয়ত মশারির দড়িগুলাই আমনি হইয়া রহিয়াছে। কিন্তু মশারির দড়ি ত অত মোট হইবে না। আবার ও কি ? ও যে পাক খুলিয়া যাইতেছে। তবে—তবে কি— মাধুরী বুঝিল আর তাহার এ যাত্রা নিস্তার নাই । এ ঠিক সে-ই । দুধ-হলুদে গায়ের রং—তাহার উপর চক্রচিত্রিত। ফণাটির উপরে সিন্মুরের লেখা। মাধুরী ঘামিয়া উঠিল। ভয়ে ঠক্ ঠক্‌ করিয়া সে কঁাপিতে লাগিল । স্বামীকে গা ঠেলিয়া যে ডাকিবে তাহার শক্তি ছিল না। কণ্ঠে আর তাহার ভাষার স্ফুরণ আসিল না! তাহার মনে হইল যেন সেটি তাহার দিকে ক্রমশঃ আরও কুলিয়া পড়িতে লাগিল। ভয়ে আড়ষ্ট হইয়া মা'র নাম করিতে করিতে সে চোখ বুজিল ।