পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আণশ্বিন জীবনান্নন t=BS খে-কয়েকটি কবিতা লিথিয়াছে তাহ প্রশংসিত হইয়াছে। সু-একটি বিখ্যাত পত্রিকার সহকারী সম্পাদক তাহার কবিতা &পাইতেও ইচ্ছুক । সে যাহা অনুভব করে তাহ ঠিকৰূপে বাক্ত করিতে পারে না। পৃথিবীর বহু প্রসিদ্ধ কবি তাহার বয়সে কিরূপ কবিতা লিপিয়াছেন, নিজের কবিতার সহিত সেগুলি মিলাইয় দেখে । কোন শরৎ-প্রভাতে কোন বসন্ত-মধ্যাহ্নে, মাঝে মাঝে তাহার মনে হয়, পৃথিবীর কোন নবযুগ যেন তাহার নিকট বাণী চাহিতেছে, মানবসস্তান রক্তকলুষিত যুদ্ধাগ্নিদগ্ধ বিষাদিনী সভ্যত-লক্ষ্মী যেন তাহার সম্মুগে অবিভূত হইয়। বলিতেছেন-কবি তুমি, দাও সত্যবাণী, তুমি গাও প্রেমের গান, কামানের গর্জনের উপর উঠক তোমার ঐক্যের মৈত্রীর স্বল্পকথা। অরুণ ভালে সে হইবে জনগণের স্বাধীনতার মিলনের কবি । কোথায় সে স্বাধীনতা ? চারি দিকে কেবল জাতিতে তিতে ঈর্ষা, শক্তির লালসা, সংঘাত, রক্তপাত । ভধিতে ভাবিতে অরুণ শ্রান্ত হইয় পড়ে। কোন রাতে নারিকেল বৃক্ষগুলির প্রাষ্টে চাদ ওঠে । আমি নিম কদম্ব নানা বৃক্ষময় বাগানে জ্যোংস্কা মায়াজাল বালে । অৰ্দ্ধভগ্ন শেওল৮ধর মৰ্ম্মর-মূৰ্ত্তিতে হট হাউসের ফাট। পাচগুলির উপর চন্দ্রালোক ঝিকমিক করে, পুপ- সুরভিত আলোছায়াঘন প্রাচীন উদ্যান রূপকথার মায়াপুরীর মত। অরুণ তাহার বেহালা লইয়া বসে। অতি হাস্কাভাবে ছড়ির টান দেয়, কর্কশ শব্দ হইলে এই অপূৰ্ব্ব শরংনিশাধনীর অতি স্বক্ষ মায়াজাল বুঝি চিত্র হইয়া বাইবে । শিবপ্রসাদের একটি পুরাতন গ্রামোফন ও ইউরোপীয় ক্লাসিক সঙ্গীতের বহু রের্কড আছে ; সেইগুলি বাজাইয়া · অরুণ কতকগুলি স্বর ও গান শিপিয়াছে, ক্রাইসলারের লিবে লাইড, ভাগনারের মাইষ্টারসিঙ্গারে প্রাইজ গান, বিটোফেনের সোনাট। আচ্ছা, বিটোফেনের পঞ্চম সিম্ফনির প্রথমে, কে দ্বারে করাঘাত করিতেছে, সে প্রেম না মৃত্যু ? কণ্ঠসঙ্গীত অপেক্ষ যন্ত্রসঙ্গীতে অরুণ গভীর আনন্দ পায়, কোন কথাতীত অতল স্বরের সাগরে সত্তা ডুবিয়া যায়। কোন রাত্রি তপ্ত, বায়ুহীন। গাছের পাতা নড়ে না। আকাশের তারাগুলি দপ-দপ করে, নিৰ্ব্বাণোন্মুখ প্রদীপশিখার মত। চারিদিক স্তন্ধ; মৃত্যুর মত। সম্মুখের আকাশ তারায় ভরা, পিছনের আকাশ কালে মেঘে ছাওয়া । সহসা নিস্তন্ধ রাত্ৰি যেন শিহরিয় ওঠে, বৃষ্টি আরম্ভ হয় ; কিন্তু বাতাস একটু নাই। বৃষ্টির বড় বড় ফোট৷ নিষ্কম্প বুক্ষপত্রগুলিতে ঝরিয়া পড়ে, শুষ্ক তুণে বৃক্ষপত্রাচ্ছন্ন পথে পড়িয়া ঝমঝম শব্দ হয়, কে যেন মল বাঙ্গাইয় আসিতেছে। বৃষ্টির বেগ ধীরে কমিয়া আসে, ঝর ঝর শব্দ ক্ষীণ হয় ; আবার বৃষ্টি প্রবল বেগে আসে, চারি দিকে ঝম্ ঝম্ আকুল ধ্বনি, মনে হয় কে যেন মল বাজাইয়া চলিয়া যাইতেছিল, আবার চঞ্চল পদে ফিরিয়া আসিল, তাহার প্রধ্বনি, কঙ্কণের ঝঙ্কার আকাশে বাতাসে বাজিতেছে। অরুণের মনে পড়ে, মল্লিকার কলহস্ত প্রাণের আনন্দোচ্ছাস, সাগরের সঙ্গীত । বৃষ্টি থামিয়া যায়, আবার চারি দিক স্তব্ধ। কিন্তু এ স্তন্ধত বৃষ্টি-পূর্বের স্তব্ধতার মত শূন্ত তৃষ্ণাপূর্ণ বেদনাময় নয়। এ সজল গভীর নীরবতা কোন অশ্রুত সঙ্গীতময়। বিশ্বের মৰ্ম্মস্থলে যে সঙ্গীত-সমুদ্র নিত্যকাল আলোড়িত ঙ্গয় উঠতেছে, মাগরিকার শুভ্র ধারা চইতে লক্ষ লক্ষ গ্ৰহতারকায় যে সঙ্গীত-বন্য প্রবাচিত, যে সঙ্গীতের ছনে স্তরে বৃক্ষে তৃণে লক্ষ লক্ষ জীবে প্রাণ বিকশিত চঞ্চল, সেই বিশ্বব্যাপী সঙ্গীতের একটু রেশ বুঝি অরুণ শুনিতে পাইল শরৎ-রাত্রির ক্ষণেক বৃষ্টিধারার ঝম্ ঝম্ শব্দে । সঙ্গীতলক্ষ্মী, তুমি জীবনের অধিষ্ঠারী দেবী হও । তোমার আনন্দলোকে সকল দুঃপ দ্বন্দ্ব সকল বিভেদ সংঘাত সমস্ত। দর হইয়া যায়। তোমার অমৃতময় সুর-সমুদ্রতীরে আমাকে আহবান কর। বেদনাপীড়িত মানবাত্মার উপর নামিয় আম্বক তোমার স্বরস্থপ গ্রীষ্মতাপিত শুষ্ক পরণীর উপর বর্ষার ধারার মত। নয়নে দাও স্বরের মায়াকজ্জল, স্পষ্ট নব দিব্যরূপে উদ্ভাসিত হইয়৷ উঠক। ক্রমশঃ