পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আণঞ্জিম বদ্যাসঙ্গিনী b~85ని কিছুদূর এসে ষ্টেশনে জনতা দেখা গেল। তার সবাই দরিদ্র। নবীন বাবু বললেন –ওরা সৰ্ব্বস্বহারার দল। কাছে যাব না, ঘিরে ধরবে। আমাদের কাছে কিছু নেই, এখন একথা শুনলে ওরা অপমান করবে আমাদের, পেটের জালায় ওরা মরিয়া। ঐ দেখ ডাকছে আমাদের, ওদিকে আর এগিয়ে কাজ নেই। ভূমিকম্প আর বন্ত, এ দুটো মানুষের সমাজের সকলের চেয়ে বেশী ক্ষতি করে । ষ্টেশনে এসে ষ্টেশন-মাষ্টারের সঙ্গে আলাপ ক’রে জন গেল, রাত্রের দিকে এদিকে জলপ্রবাহ আসতে পারে কারণ, আজ সকালে আবার সাত জায়গায় নদীর সাধ ভেঙেছে । দশ মাইলের মধ্যে প্রায় তেরখান গ্রাম ভসে মিলিয়ে গেছে। মৃত্যুর সংখ্যা এখনও জানা যায় নি। নীকে ছাড়া পায়ে হেঁটে সাহায্য বিতরণ করার কোনে উপায় নেই । অল্প থানিকট পথ মাত্র পায়ে হেঁটে যাওয়া শতে পারে। কিন্তু সাবধান থাকবেন আপনার, পুলিসসাহার। আর পাওয়া যাবে না, কাল থেকে চোর-ডাকতের উপদ্রব বড় বেড়ে গেছে । অস্ত্রশস্ত্র কিছু আছে ? আঞ্জে না । তবে ত মুস্কিলে ফেললেন । এ ছাড় জল বাড়লে এদিককার শেয়ালগুলো ক্ষেপে যায়, ক্ষ্যাপ শেয়াল হঠং কামড়ালে কিন্তু শিবের অসাধ্য ! জলের তাড়া থেয়ে জঙ্গলের জানোয়ারগুলো সব লোকালয়ে এসে ঢুকেছে। এদেশে আর বাস করা চলে না মশাই, প্রকৃতির কাছে মার পেয়ে গেয়ে জাতটার অধঃপতনের প্রায়শ্চিভ হচ্ছে । কথাটা এমন কিছুই নয়, কিন্তু উপস্থিত সকলে এথানে গড়িয়ে মনে মনে যেন এর একটা গভীর সত্যকে উপলব্ধি করতে লাগল । কথাবাৰ্ত্ত চলছে এমন সময় কোথা থেকে দুটো লোক প্যাকুল হয়ে এসে মাষ্টার-মশায়ের কাছে কেঁদে পড়ল, ও পাবু, সব্বোনাশ হ’ল আমাদের, সাপে কামড়েছে বাবু, কৰ্ত্ত আমাদের আর বঁাচে না,—বাবুগো তুমি বঁiচাও। নবীনবাবুর দল চঞ্চল হয়ে উঠল। মাষ্টার-মশায় বললেন--- থামৃ থাম, চেঁচাস নে। যা এখান থেকে। কে হয় তোর ? —আজ্ঞে বাৰু আমার বাবা । —ত ষাইট হবে বাবু। বাচাও বাবু, পায়ে পড়ি-- --যা দড়ি দিয়ে বাধগে । বাপের কথা পরে, এখন মাবোনকে সামলাগে যা। মাষ্টার-মশাই বললেন---হ্যা মশাই গো, এই সাত দিনে অস্তত: পচিশটে মেয়ে চুরি হয়ে গেল । কে কা’র খবর রাখছে ! যা বেটার, দাড়াস নে এখানে । আপনার খুব সতর্ক থাকবেন, বন্যার সাপ মানুষ দেখলেই কামড়ায় । ওদের গৰ্ত্তগুলোও যে গেছে জলে ভৰ্ত্তি হয়ে । বলে ষ্টেশন মাষ্টার-মশাই অকারণে হাসতে লাগলেন। লোকগুলো কঁদিতে কঁদিতে চলে যাচ্ছিল, নবীন বাবুরা তাদের সঙ্গে সঙ্গে চললেন। যদি বা লোকটাকে বাচানে মায় । কিন্তু অনেক চেষ্ট-চরিত্র, অনেক তুক্তাকের পরেও বুদ্ধকে কোন রকমেই বঁচানো গেল না। নবীন বাৰু এবং তার সঙ্গী ছেলের দল গভীর বেদন নিয়ে ধীরে ধীরে সেগান থেকে অন্যত্ৰ চ'লে গেলেন । বন্যার মৃত্যু কেবল জলেষ্ট নয় । পরের ট্রেনে যখন রসদ এবং অন্যান্য সরঞ্জাম এসে পৌঁছল তখন বেলা আর বাকী নেই । কলকাতা থেকে উৎসাহী যুবকের দল এসে হাজির । গাড়ী থামতেই জনতার কোলাহল স্বরু হ’ল । ক্ষুধায় উন্মত্ত যারা তার গাড়ী আক্রমণ করলে। তার বাধা মানে না, তাদের অপমান-বোধ নেই । কলকাতা-কেন্দ্রের সবাই প্রায় নবীনবাবুর পরিচিত। তিনি সদল-বলে গিয়ে জনতাকে সংযত করতে লাগলেন । এদিকে ঘণ্টাখানেক এমনি ধস্তাধস্তি, ওদিকে কয়েক জন ছেলে ইতিমধ্যে গিয়ে নৌকার ব্যবস্থা ক’রে এল। আগামী কাল প্রভাতে দূরের গ্রামগুলির দিকে অভিযান করতে হবে। যত দূরে হেঁটে যাওয়া যায়, ঠেলাগাড়ীতে আর কুলির পিঠে রসদ যাবে। . দুৰ্য্যোগের আর শেষ নেই। গঢ় পৰ্য্যস্ত কাদ, ঝিরঝিরে বৃষ্টি, তীব্র বাতাস, পিঠে-বাধা পুটুলি- এমন অবস্থায় নবীন বাবু এবং তার সঙ্গী এগার জন যুবক পথ অতিক্রম করতে লাগলেন । দেখতে দেখতে বর্ষাকালের সন্ধ্য ঘনিয়ে এল । ক্ষ্যাপা শেয়াল এবং সাপের ভয়ে সবাই ছিল সতর্ক। গাছের