পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

معوامسوا مسوا এখন অত্যন্ত স্থলভ বললে ভুল হবে না। এখন ভাষাজ্ঞানের অভাবটাই বড় সমস্ত নয়, সমস্ত হচ্ছে ক্রমবর্ধমান ভাষাসাঙ্কৰ্য্য। প্রবাসে থাকলে অধিকাংশ সময় স্থানীয় ভাষায় কথা কইতে হয় ও স্থানীয় লোকেদের সহিত উঠাবসা করতে হয়, সেই জন্ত ' কেবল অভ্যাসবশে অপর ভাষার বাগবিস্তাস-প্রণালী ও বাচনিক ভঙ্গী বাংলা বলার কালেও ব্যবহার করা স্বাভাবিক। মনে রাখতে হবে অধিকাংশ প্রবাসী বাঙালী কয়েক পুরুষ যাবৎ বিদেশে বাস করছেন ও বাল্যাবধি অবাঙালীর মাঝে মানুষ হয়েছেন, সেজন্ত স্থানীয় ভাষার প্রভাব তাদের উপর যে কত গভীর ত৷ সাধারণ কলিকাতাবাসী অনুমান করতে পারবেন না। প্রশ্ন উঠতে পারে, এই ভাষাসাস্কর্ধ্য ঠিক কতট নিন্দাৰ্ছ ? প্রশ্নটি কয়েক দিক থেকে বিচার করা যেতে পারে। প্রথম, ভাষাগত আদান-প্রদান চিরকাল সৰ্ব্বত্র দেখা গিয়েছে। বাঙালীর ভাষাও অন্তান্ত ভাষার প্রভাব হতে মুক্ত নয়, বাংলাতেও ধার-ক'রে-নেওয়া শব্দ অসংখ্য আছে, কাজেই তর্কের খাতিরে বলা যায় যে প্রবাসী বাঙালী যদি সেই ঋণের বোঝা আরও একটু বাড়িয়েই দেন, তা হ’লে তা মারাত্মক অপরাধ বলে ধরা হবে কেন ? দ্বিতীয়, শিক্ষিত বাঙালী কথায় কথায় ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করতে লজ্জিত হন না, তারাই আবার প্রবাসী বাঙালীর হিন্দীমেশানো ভাষা শুনে ঠাট্টাবিদ্রুপ করেন। এ থেকে কি এই অনুমান করা যেতে পারে যে ইংরেজী বুকনীতে কোন দোষ হয় না যেহেতু তা রাজভাষা, যত অপরাধ হয় শুধু হিন্দী শব্দ ব্যবহার করলে ? তৃতীয়, হিন্দুস্থানী ভাষা যখন ভারতের রাষ্ট্রভাষা হতে চলল, এবং বাংলা যখন সে সম্মান কখনও পেতে পারবে না, সেক্ষেত্রে হিন্দী বা উর্দু হতে শব্দচয়ন কি বাঞ্ছনীয় নয় ? চতুর্থ বিদেশী ভাষা হতে শৰ ধার করার চেয়ে ভারতীয় ভাষা হতে নেওয়াই যুক্তিসঙ্গত। তা থেকে আর কিছু না হোৰু বাংলা ভাষার সহিত অস্তান্ত দেশীয় ভাষার সংযোগ সম্ভব হবে । জাতীয়তার দিনে কি সেটা কম লাভের কথা ? পঞ্চম, বাংলা-সাহিত্যে ‘ব্রজবুলি’র প্রভাব একদিন কম ছিল না। বলা বাহুল্য, সে ভাষাও ত বাঙালীর ধার করা। বিদ্যাপতি প্রভৃতি মৈথিল কবির ভাষা বাংলার প্রবাসী ১৩৪ই নিজস্ব বলেই পরিগণিত হয়ে এসেছে—তার জন্ত ত বাঙালী কখনও লজ্জিত হয় নি। মিথিলার ভাষা গ্রহণ করায় যদি লজার কারণ না হয়ে থাকে, তা হ’লে হিন্দী শব্দ গ্রহণে আপত্তি কেন হবে ? উপরে যে যুক্তিগুলি তর্কের অজুহাতে দেওয়া হয়েছে তা বাহত নিতুল মনে হ'লেও, তার আসল গলদ হচ্ছে এই যে ভাষা-মিশ্রণের সীমা বা পরিমাণ নিরূপিত হবে কি ক'রে ? অসংযত মিশ্রণের ফলে মাতৃভাষা শেষে একেবারে লোপ পেতে পারে। যদিও এটা ঠিক যে, প্রবাসী বাঙালীর হিন্দীমেশানো ভাষা অতিরিক্ত বিদ্ধপ পেয়ে এসেছে, তবু এ কথাও ভুলে গেলে চলবে না যে ঐক্লপ মিশ্র ভাষার ভবিষ্যৎ পরিণতি বাংলা ভাষার পক্ষে মোটেই নিরাপদ হবে না। বাংলা ভাষার নিজস্ব স্বরূপ যাতে ক্ষুণ্ণ না হয়ে অপর ভাষার শব্দ স্বারা অলঙ্কত ও পরিপুষ্ট হতে পারে সেদিকে প্রবাসী বাঙালীর দৃষ্টি রাখতে হবে। হিন্দী-উর্দু থেকে শৰ কি রীতিতে, ও কতটা প্রবাসী বাঙালী গ্রহণ করতে পারেন, সে সম্বন্ধে মতভেদ হওয়া খুবই স্বাভাবিক, তবে নিম্নলিখিত ইঙ্গিতগুলি এই সম্পর্কে ভেবে দেখা যেতে পারে -- - (ক) এমন বিশেষ্য পদ যার সহজ প্রতিরূপ বাংলায় নেই তা গ্রহণ করা অনুচিত হবে না, যথা –আইন, আদালত, খুন, শহর, দখল, পদা, ফাটক, সিড়ি, ছাত, রোশনাই, আর্জি ইত্যাদি। যে-সব শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ সাধারণতঃ প্রচলিত আছে অ ব্যবহার করা সঙ্গত নয়, যেমন –ধটির বলে লোটা, মোষের বলে ভৈস, গল্প বলে গৈয়া, কুকুরের বদলে কুত্ত, বেরালের বদলে বিল্লী, ছবির বদলে তসবীর, বাগানের বদলে চমন, বাড়ির বদলে মাকান, বিষয়ের বদলে জায়দাদ, মেহের বদলে মুহূৰ্ব্বং, পরিহাসের বদলে দিল্লাগি, গাছের বদলে পেড় ইত্যাদি। ১ : (খ) বিশেষণ পদ ধার করবার আবগুকতা কমই, শুধু সেই ক্ষেত্রে হিন্দী-উর্দু বিশেষণ পদ গ্রহণ করা চলে যার ব্যবহারে ভাষার ভাবব্যঞ্জক ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে, যথা –সাধুর স্থলে ইমানার, বুদ্ধিমানের স্থলে চালাক, বিশ্বাসঘাতকের স্থলে দাগাবাজ, অকৃতজ্ঞর স্থলে নিমকহারাম ইত্যাদি ব্যবহার করলে অনেক সময় ভাবাৰ্থ স্বপ্রকট হতে পারে।