পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অণশ্বিন প্রবাসী বাঙালীয় ভাষা-সমস্যা y=tr> কিন্তু অনর্থক হিন্দুস্থানী বিশেষণ পদ গ্রহণ করা সমীচীন নয়। প্রকাও বাড়ি না ব'লে আলিশান বাড়ি বলা, দয়ালু না বলে মেহেরবান বল, স্বন্দর না বলে দিলচম্প, কলা, জালাতন না ব'লে পরেশান বলা, নির্দোষ না ব’লে বেগুনাহ বলা, অস্থির না বলে বেচেন বলা বৃথা । (গ) পশ্চিমাঞ্চলে বাঙালী ছেলে-মেয়ের বাংলা বলার সময় অভ্যাসদোষে, বা অজ্ঞাতসারে হিন্দুস্থানী ক্রিয়াপদ অত্যধিক ব্যবহার করে। এইটি সব দিক দিয়ে আপত্তিকর। অপর ভাষার ক্রিয়াপদ গ্রহণ করলে মাতৃভাষার বিশিষ্ট রূপ ও ইডিয়ম্ বজায় রাখা যাবে না। পশ্চিমে অনেকের মুখেই সরুন-এর বদলে হটুন, পালাও-এর বদলে ভাগে,চীৎকার করার বদলে চেলানো, বিপদে পড়ার বদলে ফেসে যাওয়া, গোল করার বদলে শোর মাচানো, ঝঙ্কমক করার বদলে চমূকানো, ঝরার বদলে টপকানো, খেয়ে ফেলার বদলে উড়িয়ে দেওয়া, গোনার বদলে গিনতি করা, দিব্য করার বদলে কসম খাওয়া, ভাগ করার বদলে বেঁটে নেওয়া ইত্যাদি শোনা যায়। (ঘ) ক্রিয়া-বিশেষণ সম্বন্ধেও সাবধানতার প্রয়োজন আছে, যেহেতু ক্রিয়াপদ ও তার বিশেষণজ্ঞাপক হিন্দী শব্দ দ্বারা বাংলায় বাক্যগঠনরীতি আমূল পরিবর্তিত হতে পারে। অতএব অপর ভাষার ক্রিয়াপদ ও ক্রিয়া-বিশেষণ দুই-ই বর্জন করা দরকার । পশ্চিমে অনেকেই হরগিজ ( কখনও ), থোড়াই ( কিছুই ), হামেশা ( সৰ্ব্বদা ), জলদী (শত্র ), আলবাখ ( নিশ্চয় ), ফজুল ( বৃথা ), আলাগ ( পৃথক ), আয়সা ( এমন ), তায়সা (তেমন), যায়সা (যেমন), ইত্যাদি কথা ব্যবহার করেন । (ঙ) সম্বন্ধ বা সংযোগ-জ্ঞাপক অনেকগুলি হিন্দুস্থানী অব্যয় শৰ সচরাচর ব্যবহৃত হয়ে থাকে—সেগুলির কোনই সার্থকতা বা মূল্য নেই। তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত এই – সে—যেমন তিনি মজাসে ( আনন্দে ) আছেন, করীব ( কাছে ), মাগার ( কিন্তু ), ইধার ( এদিকে ), উধার (ঐদিকে ), ওয়াস্তে ( জন্ত ), পেস্তার ( পূর্বে ), তাবতী (তবু) ইত্যাদি । পূৰ্ব্বেই বলা হয়েছে যে ভাষাসাম্বর্ধ্যের চেয়ে উচ্চারণবিকৃতিই অধিকতর ভাবনার কথা। অনেকেই জানেন যে, সাধারণ প্রবাসী বাঙালীর উচ্চারণ গুনে তিনি ৰে বাংলার বাইরে থাকেন তা সহজেই বোঝা যায়। এ কথা অবগু র্যারা বাঙালীবহুল স্থানে, বা ৰাংলার নিকটে থাকেন তাদের সম্বন্ধে খাটে না । কিন্তু ধারা অপেক্ষাকৃত দূর প্রবাসে আছেন ও ধাদের দেশের সহিত সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ নয়, তাদের উচ্চারণ প্রায়ই অদ্ভুত ধরণের মনে হয়। এর কারণ এই যে, স্থানীয় ভাষায় সৰ্ব্বদা বাৰ্ত্তালাপ করার দরুন তাদের বাংলা উচ্চারণ বিকৃত হয়ে পড়ে। হিন্দী-উর্দুর উচ্চারণ-প্রণালী যে বাংলার সহিত মেলে না তা বলাই বাহুল্য। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের কয়েকটি গল্পে প্রবাসী বাঙালীর ভাষা ও উচ্চারণের হাস্যজনক নমুনা. আছে। তার একটি গল্পে স্থতিয়ে ভাগ' কথার উল্লেখ আছে। এখানে বলা দরকার যে, স্থতিয়ে দ্বিতীয় শব্দের. হিন্দীঘে বা উচ্চারণ। এরূপ উদাহরণ অনেক দেওয়া যেতে পারে । - * তর্কের খাতিরে বলা যেতে পারে যে, খাস বাংলা দেশেও ত প্রত্যেক জেলার বিভিন্ন উচ্চারণ আছে, প্রবাসী বাঙালীর উচ্চারণও যদি একটু আলাদা ধরণের হয় তাতে ক্ষতিই বা কি, লজাই বা কিসের ? আসলে কিন্তু ব্যাপারটির অত সহজে নিম্পত্তি হয় না। বাংলার প্রত্যেক প্রান্ডের পৃথক উচ্চারণ থাকলেও সবগুলির মধ্যে স্বর ও ধ্বনির একটা মূল সাদৃশু আছে—সেটিকে বাংলা উচ্চারণের বিশিষ্ট রূপ বলা যায়। এইটি প্রবাসী বাঙালীর উচ্চারণে প্রায়ই থাকে না। কাজেই পূর্ববঙ্গের অধিবাসীর উচ্চারণ গুনে কলিকাতাবাসী যতটা না আমোদ পান, তার চেয়ে ঢের বেশী পান প্রবাসী . বাঙালীর সহিত বাক্যালাপ করে। হিন্দীঘে বা বাংলা উচ্চারণ · ধারা শুনেছেন তাদের এ বিষয়ে অধিক বলা নিম্প্রয়োজন সমস্তার কথা এই যে, হিন্দী শব্দ ত্যাগ করা যতটা সহজ, হিন্দীঘেষা উচ্চারণ ততটা নয়। জিহ্বা ও তালু এমনি ভাবে অভ্যস্ত হয়ে. পড়ে যে কোন পরিবর্তন সহজসাধ্য নয় । প্রতিকার বাল্যাবস্থায়ই সম্ভব, কিন্তু পরিণত বয়সে অসম্ভব বলেই মনে হয় । প্ৰরাসী বাঙালীর ভাষা ও উচ্চারণ বিকৃত হয়েছে কয়েকটি কারণে। প্রথম কারণ দেশের সহিত ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শের অভাব। অধিকাংশ প্রবাসী বাঙালী কয়েক পুরুষ যাবৎ