পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৮ম সংখ্যা । ] সেই মুহূর্বে বেহারার সঙ্গে গোরাও আসিয়া প্রবেশ করিল। হুদীর্ঘ শুদকায় গোরার আকৃতি আয়তন ও সাজ দেখিয়া সকলেই বিস্মিত হইয়া উঠিল । গোরার কপালে গঙ্গামৃত্তিকার ছাপ, পরনে মোট ধুতির উপর ফিতা রাধা এক জামাও মোটা চাদর, পায়ে খণ্ডতোলা কটুকি জুতা। সে যেন বর্তমান কালের বিরুদ্ধে এক মূৰ্ত্তিমান বিদ্রোহের মত আসিয়া উপস্তিত হইল। তাঙ্গর এরূপ সাজ সজা বিনয়ও পূৰ্ব্বে কখনো দেখে নাই। আজ গোরার মনে একটা বিরোধের আগুন বিশেষ করিয়াই জলিতেছিল। তাহার কারণও ঘটিয়াছিল। গ্রহণের স্নান উপলক্ষ্যে কোনো ষ্টীমার কোম্পানি কাল প্রতাষে যাত্রী -লষ্টয়া ত্রিবেণী রওনা হইয়াছিল। পথের মধ্যে মধ্যে এক এক ষ্টেশন হইতে বহুতর স্ত্রীলোক যাত্রী ষ্ট্রে একজন পুরুষ অভিভাবক সঙ্গে লইয়া জাঙ্গজে উঠিতেছিল । পাছে জায়গা না পায় এজন্ত ভারি ঠেলাঠেলি পড়িয়াছিল। পায়ে কাদা লইয়া জাহাজে চড়িলার তত্ত৷ খানার উপরে টানাটানির চোটে পিছলে কেইবা অসমৃত অবস্থায় নদীর জলের মধ্যে পড়িয়া মাইতেছে ; কাহাকেও বা খালাসী ঠেলিয়া ফেলিয়া দিতেছে ; কেহ বা নিজে উঠিয়াছে কিন্তু সঙ্গী উঠিতে পারে নাই বলিয়া ব্যাকুল হইয়া উঠিতেছে ;–মাঝে মাঝে দুষ্ট এক পসলা चूँछेि আসিয় তাহাদিগকে ভিজাষ্টয়া দিতেছে ---জাহাজে তাহদের বসিবার স্থান কাদায় ভরিয়া গিয়াছে। তাহীদের মুখে চোথে একটা ত্রস্তব্যস্ত উৎসুক সকরুণ ভাব, তাহারা শক্তিহীন অথচ তাঙ্গরা এত ক্ষুদ্র যে জাহাজের মাল্লা হইতে কৰ্ত্ত পর্যান্ত কেহই তাহাদের অনুনয়ে এতটুকু সাহায্য করিবে না ইহা নিশ্চয় জানে বলিয়া তাহাদের চেষ্টার মধ্যে ভারি একটা কাতর আশঙ্কা প্রকাশ পাইতেছে। এইরূপ অবস্থায় গোরা যথাসাধ্য যাত্ৰাদিগকে সাহায্য করিতেছিল। উপরের ফাষ্ট ক্লাসের ড়েকে একজন ইংরেজ এবং একটি আধুনিক ধরণের বাঙালীবাবু জাহাজের রেলিং ধরিয়া পরস্পর হাস্যালাপ করিতে করিতে চুরুট মুখে তামাসা দেখিতেছিল। মাঝে মাঝে কোনো যাত্রীর বিশেষ কোনো আকস্মিক দুৰ্গতি দেখিয়া ইংরেজ হাসিয়া উঠিতেছিল এক বাঙ্গালীটিও তুহার সঙ্গে যোগ দিতেছিল। ছই তিনটা ষ্টেশন এইরূপে পার হইলে গোরার অসহ গোরা । হইয়া উঠিল। সে উপরে উঠা তার বক্সগঞ্জনে কহিল, 8S) “ধিক্ তোমাদের । লজ্জা নাই!” ইংরেজটা কঠোর দৃষ্টিতে গোরার আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করিল। বাঙালী উত্তর দিল,—“লজ্জা ! দেশের এই সমস্ত পশুবৎ মূঢ়দের জন্তই লজ্জা o * * গোরা মুখ লাল করিয়া কহিল- “মূঢ়ের চেয়ে বড় পশু আছে- যার হৃদয় নেই !" বাঙালী রাগ করিয়া কছিল--"এ তোমার জায়গা নয়-- এ ফাষ্ট ক্লাস!” গোরা কহিল—“ন, তোমার সঙ্গে একত্রে আমার জায়গা নয় –আমার জায়গা ঐ যাত্রীদের সঙ্গে ! কিন্তু আমি বলে যাচ্চি আর আমাকে তোমাদের এই ক্লাসে আসতে বাধ্য কোরো না !” বলিয়া গোর হন হন করিয়া নীচে চলিয়া গেল। ইংরেজ তাহার পর হইতে আরাম কেদারার তুষ্ট তাতায় দুই পা তুলিয়া নভেল পড়ায় মনোনিবেশ করিল। তাহার সহযাত্রী বাঙালী তাহার সঙ্গে পুনরায় আলাপ করিবার চেষ্ট দুষ্ট একবার করিল কিন্তু আর তাহা তেমন জমিল না । দেশের সাধারণ লোকের দলে সে নহে ইহা প্রমাণ করিবার জন্ত গানসামাকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিল মুরগির কোনো ডিশ আতারের জন্য পাওয়া যাইবে কি না। থানসাম কঠিল না, কেবল রুটি মাপন চা আছে । শুনিয়া ইংরেজকে শুনা ইয়া বাঙালীটি ইংরেজি ভাষায় কছিল –“Creature Comforts সম্বন্ধে জাহাজের সমস্ত বন্দোবস্ত অত্যন্ত যাচ্ছেতাই ।” ইংরেজ কোনো উত্তর করিল না । টেবিলের উপর হইতে তাহার খবরের কাগজ উড়িয়া নীচে পড়িয়া গেল । বাবু চৌকি হইতে উঠিয়া কাগজখানা তুলিয়া দিল কিন্তু থ্যাঙ্কস পাইল না । 錄 চন্দননগরে পৌছিয়া নামিবার সময় সাহেব সহসা গোরার কাছে গিয়া টুপি একটু তুলিয়া কহিল—“নিজের ' ব্যবহারের জন্ত আমি লজ্জিত—আশা করি আমাকে ক্ষম করিবে ।” বলিয়া সে তাড়াতাড়ি চলিয়া গেল । কিন্তু শিক্ষিত বাঙালী যে সাধারণ লোকদের দুৰ্গতি দেখিয় বিদেশীকে ডাকিয় লইয়া নিজের শ্রেষ্টতাভিমানে