পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

83)b হাসিতে পারে ইহার আক্রোশ গোরাকে দগ্ধ করিতে লাগিল। দেশের জনসাধারণ এমন করিয়া নিজেকে সকল প্রকার অপমান ও দুব্যবহারের অধীনে আনিয়াছে - তাহাদিগকে পশুর মত লাঞ্ছিত করিলে তাহারাও তাঙ্গ স্বীকাৰ করে এবং সকলের কাছেষ্ট'তাহা স্বাভাবিক ও সঙ্গত বলিয়া মনে হয় ইঙ্গর মুলে যে একটা দেশব্যাপী সুগভীর অজ্ঞান আছে তাঙ্গর জন্য গোরাপ বুক সেন মাটিয়া যাইতে লাগিল ; কিন্তু সকলের চেয়ে তাহার এই বাজিল যে, দেশের এই চির স্তন অপমান ৪ গ্রেগতিকে শিক্ষিত লোক আপনার গায়ে লয় মা নিজেকে নিৰ্ম্মম ভাবে পৃথক করিয়া লইয়া অকাতরে গৌরব বোধ করিতে পারে । আজ তাই শিক্ষিত লোকদের সমস্ত বই-পড়া ও নকল করা সংস্করকে একেলারে উপেক্ষা করিবার জন্যই গোরা কপালে গঙ্গামৃত্তিকার ছাপ লাগাষ্ঠয় ৪ একটা নূতন অদ্ভুত কটুকি চটি কিনিয়া পরিয়া বুক ফুলাষ্ট্ৰয়৷ রাহ্মধ বাড়িতে আসিয় দাড়াইল । বিনয় মনে মনে ইষ্ঠা বুঝিতে পারিল, গোরার আজিকার এই যে সাজ ইহা যুদ্ধ সাজ । গোরা কি জানি কি করিয়া বসে এই ভালিয়া বিনয়ের মনে একটা ভয়, একটা সঙ্কোচ এবং একটা বিরোধের ভাব জাগিয়া উঠিল । বরদাসুন্দরী যখন বিনয়ের সঙ্গে আলাপ করিতেছিলেন তখন সতীশ অগত্যা ছাতের এক কোণে একটা টিনের লাঠিম ঘুরাইয়া নিজের চিস্তুবিনোদনে নিমন্ত ছিল। গোরাকে দেখিয় তাহার লাঠিম ঘোরানো বন্ধ হইয়া গেল ; সে ধীরে ধীরে বিনয়ের পাশে দাড়াইয়া এক দৃষ্টে গোরাকে দেখিতে লাগিল এবং কানে কানে লিনায়কে জিজ্ঞাসা করিল “ইনিষ্ট কি আপনার বন্ধু ?” বিনয় কহিল ---“ই৷ ” গোর ছাতে আসিয়া মুহূর্তের এক অংশ কাল বিনয়ের মথের দিকে চাহিয়া আর যেন তাহাকে দেখিতেই পাইল ন। পরেশকে নমস্কার কবিয়া সে অসঙ্কোচে একটা চৌকি টেবিল হইতে কিছু দূরে সরাইয়া লইয়া বসিল । মেয়ের যে এখানে কোনো এক জায়গায় আছে তাহা লক্ষ্য করা সে অশিষ্টতা বলিয়া গণ্য করিল। - . বরদাসুন্দরী এই অসভোর নিকট হইতে মেয়েদিগকে লইয়া চলিয়া যাইবেন স্থির করিতেছিলেন এমন সময় পরেশ প্রবাসী । [ ৭ম ভাগ তাহাকে কহিলেন—“এর নাম গৌরমোহন, আমার বন্ধু কৃষ্ণদয়ালের ছেলে ।” & তখন গোর তাহার দিকে ফিরিয়া নমস্কার করিল। যদিও নিয়ের সঙ্গে আলোচনায় সুচরিত গোরার কথা পূৰ্ব্বেন্ত শুনিয়াছিল তবু এই অভ্যাগতটিই যে বিনয়ের বন্ধু তাঙ্গ সে বুঝে নাই। প্রথম দৃষ্টিতেই গোরার প্রতি তাহার একটা আক্রোশ জন্মিল । ইংরাজি শেখা কোনো লোকের মধ্যে গোড় হিন্দুয়ানি দেখিলে সহ করিতে পূরে সুচরিতার সেরূপ সংস্কার ও সহিষ্ণুতা ছিল না । পরেশ গোরার কাছে তাহার বাল্যবন্ধু কৃষ্ণদয়ালের থলর লক্টলেন । ত{হার পরে নিজেদের ছাত্র অবস্থার কথা আলোচনা করিয়া বলিলেন -“তথনকার - দিনে কলেজে আমরা দুজনেই এক জুড়ি ছিলুম-দুজনেই মস্ত কালাপাহাড় –কিছুই মানতুম না – হোটেলে খাওয়াটাই একটা কৰ্ত্তব্য কৰ্ম্ম বলে মনে করতুম। দুজনে কতদিন সন্ধ্যার সময় গোলদিঘিতে বসে মুসলমান দোকানের কাবাব খেয়ে তার পরে কি রকম করে আমরা হিন্দু সমাজের সংস্কার করব রাত দুপুর পর্যান্ত তারই আলোচনা করতুম।" wo বরদাসুন্দরী জিজ্ঞাসা করিলেন –“এখন তিনি কি করেন ?" 瓣 গোর কঠিল—“এখন তিনি হিন্দু আচার পালন করেন ।” বরদা কহিলেন—“লজ্জা করে না ?”— রাগে তাহার সৰ্ব্বাঙ্গ জ্বলিতেছিল । গোরা একটু হাসিয়া কহিল—“লজ্জা করাটা দুৰ্ব্বল স্বভাবের লক্ষণ । কেউ কেউ বাপের পরিচয় দিতে লজ্জা করে ।” বরদা । আগে তিনি ব্রাহ্ম ছিলেন না ? গোরা। আমিও ত এক সময়ে ব্রাহ্ম ছিলুম। বরদা । এখন আপনি সাকার উপাসনায় বিশ্বাস করেন ? গোরা । আকার জিনিষটাকে বিন কারণে অশ্রদ্ধা করব আমার মনে এমন কুসংস্কার নেই। আকারকে গাল দিলেই কি সে ছোট হয়ে যায় ? আকারের রহস্ত কে ভেদ করতে পেরেচে ? {.