পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

86 o t

নিগুৰ্ণ ব্রহ্মই শক্রি দ্বারা জগৎ সৃষ্টি করিয়া থাকেন। কাৰ্য্য দ্বারাই কারণের অনুমান করা যায়। জগতে যে বিবিধ বিকার দেখা যাইতেছে, এই বিকারগুলির একটা নিশ্চয়ই উপাদান কারণ আছে । এই উপাদান কারণই “শক্তি”x । এই শক্তিরূপ উপাদান-কারণ-যোগে ব্ৰহ্ম জগৎ সৃষ্টি করেন। শঙ্করাচাৰ্য্য এই শক্তিকে “অব্যাকৃত,” “অব্যক্ত,” “অক্ষর,” “মায়াশক্তি,” “প্রাণশক্তি,” “নামরূপের বীজ”–এই সকল নামে নির্দেশ করিয়াছেন। আমরা নিয়ে ভাষ্যের কতিপয় স্থল উদ্ধত করিয়া, সেই অংশগুলিতে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে চাই । (১) কঠোপনিষদের (৩।১১ ) ভায্যে শঙ্কর বলিতেছেন --“অব্যক্তই জগতের মূল বীজ। জগতে প্রকাশিত সৰ্ব্বপ্রকার কার্য্য ও কারণশক্তির এই অব্যক্তই মূলবীজ । বটকণিকায় যেমন বটবৃক্ষের বীজ নিহিত থাকে, তদ্রুপ এই অব্যক্তশক্তি ব্রহ্মে নিহিত আছে"। টীকাকার আনন্দগিরি এই ভাষ্য এইরূপে বুঝাইয়া দিয়াছেন— “প্রলয়কালে সমুদয় জগৎ শক্তিরূপে অবস্থান করে।+ শক্তি নিত্য, শক্তির ধ্বংস নাই। সুতরাং শক্তি স্বীকার করিতেই হইবে। এই শক্তিদ্বারাষ্ট, ব্ৰহ্ম জগতের কারণ। সাংখ্যের প্রকৃতির হ্যায়, ব্ৰহ্ম হইতে স্বতন্ত্রভাবে এই অব্যক্তের সত্তা নাই। এই অব্যক্তশক্তি ব্রহ্মের নিতান্ত অনুগত। এই জন্তই শক্তিসত্ত্বেও ব্রহ্মের অদ্বিতীয়ত্বের ক্ষতি হয় না ।” (২) ঐতরেয় উপনিষদের (১১) ভাষ্যে শঙ্কর যে সকল কথা বলিয়াছেন, টীকাকার জ্ঞানামৃতযতি তাহা এই ভাবে বুঝাইয়া দিতেছেন--“স্কৃষ্টির পূৰ্ব্বে কেবল এক ব্ৰহ্মই ছিলেন । কেবল এবং 'এক শব্দ দ্বারা ব্রহ্মে স্বজাতীয়ভেদ, বিজাতীয়ভেদ, এবং স্বগতভেদ নিষিদ্ধ হইল। ব্রহ্মে জড়জগতের কারণীভূত জড় মায়াশক্তি ত বর্তমান আছে —তবে আর বিজাতীয়ভেদ নিষিদ্ধ হয় কিরূপে ? এই প্রশ্নের উত্তর এই যে, মায়াশক্তি থাকিলেও, সে অবস্থায় মায়ার কোন

  • “পরতন্ত্রত্বাছপাদানমপি শক্তিঃ"

রত্নপ্রস্ত টীকা ( বেদাস্তুদর্শন, ১।১।২২) । + শঙ্করও নিজে এই ৰুখ বলিয়াছেন—“প্রলীয়মানমপি চেদজগৎ শক্ত্যবশেষমেৰ প্ৰলীয়তে, শক্তিমূলয়েব চ প্রভবতি”–বেদাপ্তভাব্য, ১৩৩৯ প্রবাসী । [ १अ ठानं । ক্রিয়া ছিল না, সুতরাং তার ব্রহ্মের অদ্বিতীয়ত্বের হানি, হয় না। যদি বলা যায় যে, মায়ার ক্রিয়া না থাকিলেও, মায়াত তখন বর্তমান ছিল, সুতরাং বিজাতীয়ভেদ ত রহিয়াই যাইতেছে ; এ প্রশ্নের উত্তর এই যে, ব্ৰহ্ম হইতে স্বতন্ত্রভাবে মায়ার সত্তা স্বীকার করা যায় না। মায় তখন ব্ৰহ্মই—ব্রহ্মেরই আত্মভূত। যাহা ব্যতিরেকে যাহার স্বতন্ত্র সত্তা নাই, তাহ তাহাতে কল্পিত । সুতরাং এই কল্পিত মায়া দ্বারা ব্রহ্মের ভেদ সিদ্ধ হয় না। এই মায়াশক্তি ব্ৰহ্মরূপ অধিষ্ঠানে স্থিত। অধিষ্ঠানের অতিরিক্ত সত্তা ইহার নাই। এই জন্তাই, ব্ৰহ্মকে অভিন্নাধিষ্ঠানোপাদান’ বলা যায়। সে সময়ে মায়াশক্তির কোন ক্রিয় না থাকায়, একরূপ মৃতবৎ অবস্থান করে । সুতরাং এই মায়াশক্তিরূপ উপাদান এবং ইহার অধিষ্ঠান ব্রহ্মকে অভিন্ন বলা যায়” । (৩) বেদান্তদর্শনের (১৪৩) ভাস্থ্যে শঙ্কর বলিতেছেন,— "এই জগৎ অভিব্যক্ত হইবার পূৰ্ব্বে শক্তিরূপে ব্রহ্মে অবস্থিত ছিল । এই শক্তিকে আমরা সাংখ্যদিগের ন্যায় স্বতন্ত্র বলি না । এই শক্তি ব্রহ্মের নিতান্ত অধীন । এই শক্তি অবশুই স্বীকার করিতে হয়। কেন না, এই শক্তি স্বীকার নী করিলে ব্রহ্ম জগৎস্যষ্টি করিবেন কাহার দ্বারা ? শক্তিরহিত পদার্থের প্রবৃত্তি হইতে পারে না। অতএব ব্রহ্মে শক্তি স্বীকার করিতে হয়।” (৪) মাণ্ডুকোপনিষদের গৌড়পাদকারিকার প্রথম শ্লোকের ভাষ্য করিতে গিয়া, শঙ্করাচার্য্য প্রাণশক্তিকে জগতেব বীজ বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন এবং এই প্রাণশক্তিকে, স্বষ্টির পূৰ্ব্বে, অব্যাকৃত’ শব্দ দ্বারা নির্দেশ করিয়াছেন। তিনি সে স্থলে বলিয়াছেন যে, এই অব্যাকৃত প্রাণশক্তিই জগতের বীজ এবং এই বীজ দ্বারাই ব্রহ্মকে ‘জগৎ-কারণ বলা যায়। এই শক্তি দ্বারাই ব্রহ্মের অস্তিত্ব সিদ্ধ হয় । টীকাকার স্বানন্দগিরি এই স্থলে যাহা বলিয়াছেন, তাহ বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করা কর্তব্য। তিনি বলিয়াছেন— “কার্য্যরূপ লিঙ্গ (চিহ্ন ) দ্বারাই কারণের অস্তিত্ব সিদ্ধ হইয়া থাকে। কাৰ্য্যের সত্তা আছে বলিয়াই, কারণেরও সত্ত আছে বলিতে হয় । সুতরাং প্রাণকেই জগতের কারণ বলিতে হইবে। ব্রহ্মব্যতিরেকে প্রাশের স্বতন্ত্র সত্তা নাই, সুতরাং, এই প্রাণ দ্বারাই জগৎকারণ ব্রহ্মের সত্তা সিদ্ধ