পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সে খুব একটা বড় জায়গা থেকে ভারতবর্ষকে দেখুচে। তার কাছে ভারতবর্ষের ছোট বড় সমস্তক্ট একটা মহৎ ঐক্যের মধ্যে একটা বুহৎ সঙ্গীতের মধ্যে মিলে সম্পূর্ণ হয়ে দেখা দিচ্চে। সে রকম করে, দেখা আমাদের সকলের পক্ষে সম্ভব নয় বলে ভারতবর্ষকে টুকরো টুকরো করে বিদেশী আদর্শেল সঙ্গে মিলিয়ে তার প্রতি কেবলি অবিচার করি ।” সুচরিত কহিল—“আপনি কি বলেন জাতিভেদটা ভাল ?” এমন ভাবে কহিল যেন ও সম্বন্ধে কোনো তর্কই চল্লিতে পারে না। বিনয় কহিল—“জাতিভেদটা ভালও নয় মনও নয় । অর্থাৎ কোথাও ভাল, কোথাও মন্দ। যদি জিজ্ঞাসা করেন, হাত জিনিষটা কি ভাল-আমি বলব সমস্ত শরীরের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে ভাল। যদি বলেন ওড়বার পক্ষে কি ভাল ? আমি বলা, না। তেমনি ডানা জিনিষটাও ধরবার পক্ষে ভমস্ত নয় ।" সুচরিতা উত্তেজিত হইয়া কহিল—“আমি ও সমস্ত কথা বুঝতে পারিনে। আমি জিজ্ঞাসা করচি আপনি জাতিভেদ কি মানেন ?” আর কারো সঙ্গে তর্ক উঠিলে বিনয় জোর করিয়াই বলিত— ই মানি । আজ তাহার তেমন জোর করিয়া বলিতে বাধিল । ইহা কি তাঙ্গর ভীরুতা, অথবা জাতিভেদ মানি বলিলে কথাটা যতদূর পৌছে আজ তাহার মন ততদূর পৰ্য্যস্ত যাইতে স্বীকার করিল না—তাহা নিশ্চয় বলা যায় না ! পরেশ পাছে তর্কটা বেশি দূর যায় বলিয়া এই খানেই বাধা দিয়া কহিলেন—“রাধে তোমার মাকে এবং সকলকে ড়েকে আন—এর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই।” সুচরিতা ঘর হইতে বাহির হইয়া যাইতেই সতীশ তাহার সঙ্গে বকিতে বকিতে লাফাইতে লাফাইতে চলিয়া গেল। বিনয় একটা অভূতপূৰ্ব্ব আনন্দ অনুভব করিতে লাগিল । এ পর্য্যন্ত বিনয় বড় কাহারে সঙ্গে মেশে নাই। দিতে গেলে জীবন গোরাই তাহার একমাত্র বন্ধু ছিল। গোরা নিজের সমস্ত মত, উৎসাহ, সঙ্কল্প লষ্টয়া বিনয়কে আম্বর করিনাছিল। बिनछ cनहें छछ cकक्न भद्ध প্রকাশ প্রবাসী । १भ डी# । এবং তাহ লইয়া তর্ক করিতেই পটু [རྣག ། প্রবন্ধ লেখা, সভাস্থলে বক্তৃতা করা তাহার পক্ষে“অত্যন্ত সহজ হইয় আসিয়াছিল। কিন্তু লোকজনদের সঙ্গে সাধারণ ভাবে আলাপ করা কিম্বা একটা শাদা চিঠি লেখা তাহার দ্বারা সহজে হইতে পারিত না সেই জন্য বিনয় আজ যখন পরেশবাবুর বাড়ি আসিল তখন পাছে সুচরিতার সঙ্গে তাহার দেখা হয় এ ভয় তাহার মনে জাগিতেছিল-–অথচ দেখা না হওয়ার নৈরাপ্ত তাহার পক্ষে কষ্টকর হইয়া উঠিয়াছিল । অবশেষে সুচরিতার সঙ্গে আলাপ যখন তাহার কাছে অনেকটা সোজা হইয়া উঠিল তখন বিনয়ের বুকের মধ্য হইতে একটা যেন মস্ত ভার নামিয়া গেল। সে যে সুচরিতার সঙ্গে মুখামুখি বসিয়া এমন করিয়া কথা কহিতেছে ইহা তাহার কাছে প্রতিক্ষণেই একটা পরম বিস্ময়কর সৌভাগ্য বলিয়া মনে হইতে লাগিল । সে ভাল করিয়া সুচরিতার মুখের দিকে চাহিতে সাহস করিতেছিল না— পাছে তাহদের কথার স্রোতে বাধা পড়ে-পাছে সুচরিতা কিছু মনে করে, পাছে তাহার নিজেরও মন উদভ্ৰান্ত হইয়া উঠে। কিন্তু কি আনন্দ ! পার্থী প্রথম উড়িতে পারিলে যে আনন্দ—এও সেই রকম ! একদিকে নিজের ডানার শক্তি অনুভব করা--আর একদিকে নীলাকাশের অনন্ত রহস্তের প্রথম আস্বাদ লাভ করা। বিনয়ের কাছে এই ছোট সামান্ত ঘরের মধ্যে অনিৰ্ব্বচনীয় আবিভূত হইল ;–তাহার শরীর যদি স্বচ্ছ হইত তবে তাহার শরীরের সমস্ত রোমকূপ ভেদ করিয়া হৰ্ষ আলোকরশ্মির মত বাহিরে ছুটিয়া পড়িত। পরেশবাবু বিনয়কে তাহার কলেজের পূৰ্ব্ব অধ্যাপকদের সম্বন্ধে প্রশ্ন করিতে লাগিলেন ;—বিনয় একটা বিশেষ আনন্দের সঙ্গে তাহার উত্তর দিল—যেন তাহার সেই পূৰ্ব্বস্মৃতি তাহার কাছে মধুর। বিনয় মনে মনে বলিতে লাগিল— পরেশবাবু কি চমৎকার লোক—কি অমায়িক প্রকৃতি ! আমি উ হার চেয়ে বয়সে কত ছোট কিন্তু তবু আমাকে কতই সমাদর করিতেছেন ! এখনকার কালের লোকের মধ্যে এ রকম ভদ্রতা কিন্তু দেখা যায় না । o কিছুক্ষণ পরে মুচরিতা ঘরে প্রবেশ করিয়া বলিল— বাবা, মা তোমাদের উপরের বারান্দায় আসতে বরেন।